প্রতীকী ছবি।
অস্ত্রোপচার চলছে। সঙ্গে মোবাইলে চলছে যন্ত্রসঙ্গীত। যাঁর অস্ত্রোপচার হচ্ছে, সেই রোগিণীর সঙ্গে কথাও বলছেন চিকিৎসকেরা। এ ভাবেই হয়ে গেল স্তন ক্যানসারের প্রায় দেড় ঘণ্টার অস্ত্রোপচার। কাটা-ছেঁড়ার ব্যথা বুঝতে পারলেন না রোগিণী। মঙ্গলবার রামপুরহাট মেডিক্যালে এই সফল অস্ত্রোপচারের পরে খুশি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মেডিক্যাল কলেজের এমএসভিপি পলাশ দাস বলেন, ‘‘সাধারণত এমন অস্ত্রোপচার অজ্ঞান করেই হয়। বর্তমানে চিকিৎসাবিজ্ঞানে উন্নত পদ্ধতি প্রয়োগ হচ্ছে। রামপুরহাট মেডিক্যালে এমন পরিষেবা প্ৰমাণ করে আমরাও পিছিয়ে নেই।’’
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, অস্ত্রোপচারের জন্য হাসপাতালের অ্যানাস্থেসিয়া বিভাগের আরএমও অনিমেষ চট্টোপাধ্যায়, রাজকুমার মণ্ডল এবং মহম্মদ সফিউল্লা উপস্থিত ছিলেন। শল্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাদ্দাকাশ আলি অস্ত্রোপচার করেন। সহযোগিতা করেন শল্য বিভাগের চিকিৎসক বিবেক ঠাকুর এবং অভিষেক ঘোষ। সাদ্দাকাশ বলেন, ‘‘স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত রোগিণীকে অজ্ঞান না করে অস্ত্রোপচার বিরল। এর জন্য অ্যানাস্থেটিস্টদের ধন্যবাদ।’’ অনিমেষের কথায়, ‘‘মাস দেড়েক আগে দক্ষিণ ভারতে গুটিকয়েক অস্ত্রোপচার এ ভাবে হয়। কলকাতায় এখনও হয়নি।’’
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এই পদ্ধতিতে রোগীকে পুরো অজ্ঞান করার প্রয়োজন হয় না। ভেন্টিলেশনও লাগে না। অস্ত্রোপচারের পরে রোগী নিজেই হাঁটাচলা করতে পারেন। অন্য দিকে, অজ্ঞান করে অস্ত্রোপচার করলে জ্ঞান ফিরতে সময় লাগে। শারীরিক দিক থেকেও রোগীর উপর ধকল হয়। রোগীকে হাসপাতালে বেশি দিন থাকতে হয় বলে খরচও বেশি হয়।
অনিমেষবাবু বলেন, ‘‘মঙ্গলবার ওই রোগিণীর মেরুদণ্ডের উপরের অংশে সূচ ফুটিয়ে শরীরের কিছু অংশ অবশ করা হয়। অস্ত্রোপচার চলাকালীন তাঁর সঙ্গে চিকিৎসকরা প্রতি মিনিটে কথা বলেছেন। রোগীর মানসিক অবস্থা ঠিক রাখতে মোবাইলে যন্ত্রসঙ্গীত শোনানো হয়েছে। তিনি ব্যথা বুঝতে পারেননি।’’
নলহাটির বাসিন্দা চল্লিশোর্ধ্ব ওই রোগিণী টিউমারের চিকিৎসা করাতে মাস তিনেক আগে হাসপাতালে আসেন। ক্যানসার ধরা পড়ার পরে চার বার কেমোথেরাপি করে টিউমারটি ছোট করা হয়। তার পরে এ দিন অস্ত্রোপচার হয়। তিনি নিজেও জানালেন ব্যথা না পাওয়ার কথা। তাঁর কথায়, ‘‘চিকিৎসকেরা এমন উন্নত পরিষেবায় আরও মানুষের উপকার করুন, এটাই চাই।’’