করোনা-আতঙ্ক: স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য আইসোলেশন বিভাগে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সোমবার বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
যাঁর ভর্তি হওয়ার কথা নয়, তিনি এসে ভর্তি হয়ে গেলেন। আবার যাঁর নজরদারিতে থাকার কথা, তিনি এসেও বেমালুম বেপাত্তা হয়ে গেলেন। নির্দেশিকা অনুযায়ী অন্তত ‘হোম আইসোলেশনের’ জন্য তাঁর যে-তথ্য স্বাস্থ্য ভবনে থাকা উচিত ছিল, তা রইল না! করোনাভাইরাসের (এনসিওভি) সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে সোমবার আইডি হাসপাতালে চিন-ফেরত যাত্রীদের ভর্তি নিয়ে এমনই ডামাডোল চলল দিনভর।
কলকাতারই রামগড়ের এক বাসিন্দা বেলা ৩টে নাগাদ আইডি-র জরুরি বিভাগে এসে জানান, চিনের উত্তর-পূর্ব রাজ্য থেকে ২৯ জানুয়ারি ফিরেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আমার করোনা-লক্ষণ নেই। নিশ্চিত হতে আইডি-তে এসেছিলাম। কিন্তু ওরা বলছে, পরীক্ষার জন্য ভর্তি হতে হবে। তাই বাড়ি চলে যাচ্ছি।’’ রাত পর্যন্ত রামগড়ের এমন কোনও বাসিন্দার তথ্য তাঁদের কাছে নেই বলে জানান স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। আইডি-র সুপার আশিস মান্না অবশ্য বলেন, ‘‘স্ক্রিনিংয়ের (স্বাস্থ্যপরীক্ষা) পরেই ওঁকে ছাড়া হয়েছে। কেউ অধরা থেকে গিয়েছেন ভাবলে ভুল হবে।’’ এক স্বাস্থ্যকর্তা জানান, নির্দেশিকা অনুযায়ী ওই ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহের দরকার নেই। প্রয়োজনে উনি হেল্পলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।
এ দেশে এনসিওভি-তে আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তির সঙ্গে একই বিমানে ফিরেছিলেন কলকাতা-সহ রাজ্যের আট জন। তাঁদের মধ্যে তিন জন চিন এবং এক জন দিল্লি চলে গিয়েছেন। বাকি চার জনকে ‘হোম আইসোলেশনে’ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল স্বাস্থ্য ভবন। ২৩ জানুয়ারি ওই বিমানের আরও এক কেরলবাসী যাত্রী আক্রান্ত হওয়ার পরে চার জনকেই হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখতে বলে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। ঠিক হয়, কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা এবং জঙ্গলমহলের একটি জেলার বাসিন্দার ঠিকানা হবে বেলেঘাটার আইডি। ওই তিন জনের লালারসে করোনার ভাইরাস মেলেনি। উত্তরবঙ্গের তরুণী ভর্তি হচ্ছেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে।
আরও পড়ুন: ‘খোঁজ’ নেই উপপ্রধানের, ভয়ে শিক্ষিকা
এ দিন সকালে অ্যাম্বুল্যান্সে আইডি হাসপাতালে আসেন জঙ্গলমহলের একটি জেলার বাসিন্দা। তাঁকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। কলকাতার গাঙ্গুলিবাগানের বাসিন্দাও ভর্তি হতে আসেন। উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দার আগমনের পরে শুরু হয় ডামাডোল। তাঁর সঙ্গে হাজির হন স্বাস্থ্য দফতরের তালিকা-বহির্ভূত এক জন। তিনি একই বিমানে ছিলেন। প্রথম সংক্রমিত ভারতীয়ের বিমানের আসন ধরে স্বাস্থ্য মন্ত্রক স্ক্রিনিংয়ের যে-তালিকা করেছিল, তা থেকে তিনি বাদ পড়ে যান। বন্ধু ডাক পেয়েছেন শুনে আতঙ্কিত হয়ে তিনিও চলে আসেন। বিকেলেই অবশ্য তাঁকে ছেড়ে দেন আইডি-কর্তৃপক্ষ।
এক জন ছাড়া পেলেও তালিকায় নাম না-থাকা হুগলির এক বাসিন্দাকে ভর্তির বিষয়টি পরে সামনে আসে। ২৮ জানুয়ারি তিনি চিন থেকে ফিরেছেন এবং কাশি হচ্ছে, এই তথ্য পেয়ে তাঁকে আইডি-তে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করে স্বাস্থ্য দফতর।
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী এ দিন বলেন, ‘‘মোট চার জন বেলেঘাটা আইডি-তে ভর্তি হয়েছেন। উত্তরবঙ্গের তরুণীর সঙ্গে কথা হয়েছে।’’