—ফাইল চিত্র
রাজ্যবাসীর কাছে নিখরচায় করোনা প্রতিষেধক পৌঁছে দিতে চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এটা তাঁর নীতিগত সিদ্ধান্ত। সামনের সারিতে থাকা কোভিড যোদ্ধাদের জন্য বিনামূল্যে প্রতিষেধক দেওয়ার কথা জানাতে গিয়ে তিনি সরকারের এই অভিপ্রায়ও প্রকাশ করেছেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রীর এই অভিপ্রায় প্রকাশ সাধারণ মানুষের কাছে ‘ইতিবাচক’ হতে পারে, তেমন ভাবনা থেকেই হয়তো এই পদক্ষেপ।
বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, দুই মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম বর্ধমানের মতো জেলাগুলির পুলিশ এবং স্বাস্থ্য-কর্তাদের কাছে মুখ্যমন্ত্রীর লেখা একটি চিঠি পৌঁছেছে। থানা এবং স্বাস্থ্য-কার্যালয়গুলি থেকে চিঠিগুলি বিলি করা শুরুও করেছেন জেলাকর্তারা। মুখ্যমন্ত্রীর সেই চিঠিটি প্রধানত কোভিড যোদ্ধাদের উদ্দেশে লেখা। ফলে চিঠির একদম শুরুতে কোভিড-মোকাবিলায় সব কোভিড যোদ্ধাকেই কুর্নিশ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রতিষেধক প্রাপ্তি নিয়ে আশাপ্রকাশ করে চিঠিতে মমতা লিখেছেন, ‘আমি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমাদের সরকার রাজ্যের সমস্ত মানুষের কাছে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এই ভ্যাকসিন পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করছে।’ এরই সঙ্গে তিনি চিঠিতে জানিয়েছেন, নিজের জীবনকে বাজি রেখে যে ভাবে কোভিড রোগীদের চিকিৎসা-সেবার কাজ করেছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা, তাতে প্রথম পর্যায়েই বাংলার সব স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে প্রতিষেধক পৌঁছে দেওয়া হবে। প্রত্যেককে শুভেচ্ছা জানিয়ে চিঠি শেষ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। নবান্ন সূত্রের খবর, অনেক দিন আগেই এই সিদ্ধান্ত হয়েছিল এবং তার ভিত্তিতে মুখ্যমন্ত্রীর লেটারহেডে চিঠিটি লেখা হয়। চিঠিটি পৌঁছেও দেওয়া হচ্ছে পুলিশ এবং স্বাস্থ্য-প্রশাসনের কাছে। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, এই নীতিগত সিদ্ধান্ত সরকারের শীর্ষমহলেরই।
পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হলে রাজ্যের কোষাগারের উপর বিপুল চাপ বাড়বে। কারণ, সরকারি হিসেবে রাজ্যে অন্তত ১০ কোটি মানুষ রয়েছেন। তাঁদের প্রত্যেককে নিখরচায় প্রতিষেধক দিতে হলে সরকারকে কমবেশি পাঁচ হাজার কোটি টাকা খরচ ধরে রাখতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কী ভাবে সেই খরচ সামলানো সম্ভব, তা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলে। তবে প্রশাসনের ব্যাখ্যা, মুখ্যমন্ত্রী যখন চাইছেন, তখন মানতেই হবে এটা সরকারের নীতিগত অবস্থান। কিন্তু প্রয়োগের ক্ষেত্রে কয়েকটা দিক রয়েছে। প্রথমত, সামনের সারিতে থাকা কোভিড যোদ্ধারা আগে প্রতিষেধক পাবেন। তা তাঁরা এমনিতেই বিনামূল্যে পাবেন। তার পরে বিভিন্ন স্তরে অগ্রাধিকার স্থির করে প্রতিষেধক দেওয়ার কাজ এগোবে। ফলে সকলকে একসঙ্গে প্রতিষেধক দিতে হবে, তা নয়। দ্বিতীয়ত, সরকারি সূত্রে প্রতিষেধক নিতে হলে অপেক্ষার তালিকা দীর্ঘ হবে। বিপুল সংখ্যক জনসংখ্যার কাছে প্রতিষেধক পৌঁছে দিতে সময় লাগবে। ফলে একটা বড় অংশের মানুষ সরকারের অপেক্ষা-তালিকায় না থেকে হয়ত ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিজেরাই প্রতিষেধক নিয়ে নেবেন। সরকারের তালিকা থেকে সেই অংশের মানুষেরা বাদ হয়ে যাবেন তখনই। স্বাভাবিক ভাবেই সরকারের উপর একবারে চাপ পড়বে না। প্রতিষেধক দেওয়ার আর্থিক ভারটা বিভাজিত হয়ে যাবে এ ভাবেই।
মুখ্যমন্ত্রীর লেখা চিঠি
তবে আধিকারিকদের একটি অংশের দাবি, করোনা-কালে সমস্যায় পড়া বিপুল সংখ্যক মানুষকে ন্যূনতম সুরাহা দিতে মানবিক এই পদক্ষেপ সরকার করতেই পারে। প্রায় গোটা একটি অর্থবর্ষ ধরে খরচ বাঁচানোর পথে হেঁটেছে সরকার। রাজ্যের রাজস্ব আগের তুলনায় বাড়ানো গিয়েছে। ফলে এই অর্থ জোগাড় করতে সরকারকে মাথা ঘামাতে হবে ঠিকই, কিন্তু তা অসম্ভব নয়। এক কর্তার কথায়, “যতটা আর্থিক সহযোগিতার আশা রাজ্য করেছিল, ততটা তো কেন্দ্র করেনি। উপরন্তু কেন্দ্রের কাছে বিপুল অর্থ এখনও পায় রাজ্য। এই অবস্থাতেও রাজ্য সরকার কোভিডের চিকিৎসা বিনামূল্যে করেছে। ফলে সরকার সব দিক বিবেচনা করে এই অবস্থান নিয়েছে নিশ্চয়।”
আরও পড়ুন: গত ২৪ ঘণ্টায় ২০ করোনা আক্রান্তের মৃত্যু, নতুন করে সংক্রমিত ৭৮৭
কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিষেধকের জন্য যে অগ্রাধিকারের তালিকা তৈরির নির্দেশ রাজ্যগুলিকে দিয়েছে, তার শীর্ষে রয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। পরের ধাপগুলিতে অগ্রাধিকারের ক্রমতালিকায় থাকবেন সাফাইকর্মী, পুরকর্মী, জেলকর্মী, হোমগার্ড, সিভিক ভলান্টিয়ার, রেভিনিউ-কর্মীরা। প্রবীণ ব্যক্তি, যাঁরা বিভিন্ন রোগে ভুগছেন, তাঁদেরও চিহ্নিত করা শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন: নড্ডার গা ঘেঁষে রাজ্য বিজেপি-র ছোট-বড় নেতারা, নেই ‘পোস্টারবয়’