মুর্শিদাবাদে দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল ছবি।
কালীঘাটে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের ঠিক এক দিন পর জেলা বৈঠক শুরু করতে চলেছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে জেলায় জেলায় দলের সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করে তোলার লক্ষ্যে ভার্চুয়াল মাধ্যমে তিনি জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলবেন। রবিবার তাঁর জেলা বৈঠকের শুরুতেই থাকছে মুর্শিদাবাদ।
সাগরদিঘির উপনির্বাচনে এই মুর্শিদাবাদেই ধাক্কা খেয়েছে তৃণমূল। বাম-সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী বাইরন বিশ্বাসের কাছে তৃণমূলের প্রার্থী দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায় ২৩ হাজার ভোটে হেরে গিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলাটিতে আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে যাতে সাগরদিঘির প্রভাব না পড়ে, সেই চেষ্টা শুরু করেছে শাসকদল। জেলা বৈঠকের জন্য দলনেত্রীও তাই মুর্শিদাবাদকেই প্রথমে বেছে নিয়েছেন। যদিও শুক্রবারের বৈঠকে মমতা সাগরদিঘিতে হারের কারণ হিসেবে ‘সাংগঠনিক দুর্বলতা’র কথা বলেছেন। ভোটে হারের পর প্রার্থী নিয়ে দলের অন্দরে কেউ কেউ কথা বললেও মমতা বৈঠকে জানিয়ে দেন, প্রার্থী ঠিকঠাকই ছিলেন। কিন্তু তিনি যে সংখ্যালঘু ভোট নিয়ে উদ্বিগ্ন, তা মমতা দলীয় বৈঠকে গোপন করেননি। প্রত্যাশিত ভাবেই মমতার জেলা বৈঠকের তালিকার এক নম্বরে রয়েছে সাগরদিঘির জেলা।
রবিবার বেলা দেড়টা নাগাদ মুর্শিদাবাদের তৃণমূল নেতা, নেত্রীর সঙ্গে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বৈঠক করবেন মমতা। জেলার বিধায়ক, সাংসদ-সহ তৃণমূলের দুই সাংগঠনিক জেলা সভাপতি, চেয়ারম্যানকে এই আলোচনা সভায় উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে হাজির থাকবে সংবাদমাধ্যমও।
সাধারণত, তৃণমূলের সাংগঠনিক সভায় সাংবাদিকদের উপস্থিতি নিয়ন্ত্রিত থাকে। কিন্তু রবিবারের দলীয় বৈঠকে সাংবাদিকদের উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করেছে শাসকদল। দলীয় সূত্রের খবর, মমতার কোনও মন্তব্যকে কেন্দ্র করে যাতে ভুল ব্যাখ্যা বা বিভ্রান্তি তৈরি না করা হয়, তা নিশ্চিত করতেই বৈঠকে সাংবাদিকদের হাজির থাকতে বলা হয়েছে।
সাগরদিঘিতে হারের প্রসঙ্গ এই বৈঠকে উঠে আসতে পারে। সেই সঙ্গে কালীঘাটের বৈঠকে নেতাদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন সংক্রান্ত বিষয় নিয়েও জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন মমতা। তৃণমূল সূত্রে খবর, কালীঘাটের বৈঠকে ইটাহারের বিধায়ক তথা সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি মোশারফ হোসেনের সঙ্গে সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীকে বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া নিয়ে জেলা নেতৃত্বের অন্দরে ‘চাপা ক্ষোভ’ তৈরি হয়েছে। সিদ্দিকুল্লার মতো কট্টর নেতাকে সামনে রেখে ভোট করলে সারা রাজ্যে দল সম্পর্কে ‘ভুল বার্তা’ যেতে পারে বলে নেতৃত্বের একাংশের আশঙ্কা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মুর্শিদাবাদের এক শীর্ষ স্তরের নেতার দাবি, ‘‘মুসলিমদের সব অংশের মধ্যে সিদ্দিকুল্লা সাহেবের গ্রহণযোগ্যতা নেই। তিনি বহিরাগত। এ ভাবে বাইরের কাউকে চাপিয়ে দিয়ে জেলার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করা মুশকিল।’’
তবে এ প্রসঙ্গে মুর্শিদাবাদের সাংসদ আবু তাহের খান বলেন, ‘‘দলের ত্রুটিবিচ্যুতি ঠিক করতে অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের গ্রহণযোগ্যতাও মাথায় রাখতে হবে।’’ রবিবার এ বিষয়ে জেলা স্তরের নেতা নেত্রীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারেন দলনেত্রী স্বয়ং।