রবিবার যাওয়ার কথা মমতার। ফাইল চিত্র
মন্ত্রিত্ব এবং দলের সমস্ত পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলেও এখনও বেহালা পশ্চিমের বিধায়ক পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সেই বিধানসভা এলাকায় যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দক্ষিণ কলকাতা তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী রবিবার সন্ধ্যায় ম্যান্টন এলাকায় মমতার যাওয়ার কথা। ওই দিন রাত ১২টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে প্রতি বছরের মতো স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপন করবেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। তবে মমতা যাবেন পতাকা উত্তোলন কর্মসূচির আগেই।
প্রসঙ্গত, তিন বছর আগে ২০১৯ সালের ১৪ অগস্টেই বেহালার ম্যান্টনে পার্থের বিধায়ক কার্যালয়ের কাছে স্বাধীনতা দিবস পালনের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন মমতা। সে দিনই দিল্লিতে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন বেহালা পূর্বের বিধায়ক শোভন চট্টোপাধ্যায়। ম্যান্টনের ওই মঞ্চ থেকেই মমতা জানিয়ে দিয়েছিলেন, শোভনের অনুপস্থিতিতে বেহালা পূর্ব বিধানসভার সংগঠন দেখবেন রত্না চট্টোপাধ্যায়। এর পরে রত্না বেহালা পূর্বের বিধায়ক হন গত বিধানসভা নির্বাচনে। এ বার বেহালা পশ্চিমের অনুষ্ঠানে গিয়েও কি তেমন কোনও ঘোষণা করতে পারেন তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী? ইতিমধ্যেই এমন জল্পনা শুরু হয়েছে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের মধ্যে।
প্রসঙ্গত, শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির মামলায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-র হাতে পার্থ গ্রেফতার হন গত ২৩ জুলাই। এর পরে ২৮ জুলাই তাঁকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। একই দিনে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির বৈঠকে পার্থকে সমস্ত দলীয় পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়। পরে মন্ত্রিসভার রদবদল হয়। তবে পার্থ এখনও বিধায়ক আছেন। যেমন তিনি এখনও তৃণমূলেরই সদস্য। তবে সাসপেন্ডেড।
পার্থ বিধায়ক পদ ছাড়তে চান, এমন ইঙ্গিত এখনও পর্যন্ত মেলেনি। তবে আগামী বিধানসভা ভোটে তিনি যে আর টিকিট পাবেন না, তা মোটামুটি নিশ্চিত। ফলে তাঁর জায়গায় নতুন লোক খুঁজতেই হবে বেহালা পশ্চিমের জন্য। বিধানসভা ভোট ২০২৬ সালে। তার আগে মমতা কাউকে ওই দায়িত্ব দেবেন কি না, তা নিয়েই আলোচনা শুরু হয়েছে। এখন দেখার, রবিবার মমতা তেমন কোনও ঘোষণা করেন কি না।
তৃণমূলের নেতারা এ-ও মানছেন যে, পার্থের গ্রেফতার হওয়া এবং তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ এবং অলঙ্কার উদ্ধারের পর দল যেমন ‘অস্বস্তি’তে রয়েছে, তেমনই এই বিধানসভা এলাকার কর্মীদের মনোবলেও ধাক্কা লেগেছে। এক নেতার কথায়, ‘‘দলনেত্রী এলে আশা করি কিছু বলবেন। আর দিদি কথা বললেই কর্মীরা চাঙ্গা হবেন। ওই কাণ্ডের সঙ্গে যে দলের কোনও সম্পর্ক নেই, তা আগেই জানানো হয়েছে। তার পরেও এলাকার মানুষের কোনও কৌতূহল থাকলে তা-ও মিটিয়ে দেবেন নেত্রী।’’
বেহালা পশ্চিম বিধানসভা আসন অনেক দিন ধরেই তৃণমূলের দখলে। ২০০১ সাল থেকেই টানা ওই আসনে জিতেছেন পার্থ। এক অর্থে এই এলাকা মমতার নিজেরও। ১৯৯১ এবং ১৯৯৬ সালে কংগ্রেসের টিকিটে কলকাতা দক্ষিণ লোকসভা থেকে সাংসদ হন মমতা। পরে তৃণমূলের টিকিটেও চার বার জিতেছেন কলকাতা দক্ষিণ থেকে। বরাবরই বেহালা পশ্চিম ওই লোকসভা আসনের অন্তর্গত।