উপস্থিত: বাঁকুড়ার রবীন্দ্রভবনে বুধবারের প্রশাসনিক বৈঠক। ছবি: শুভ্র মিত্র
দায়িত্ব পেয়েও ঠিকমতো কাজ করতে না পারলে পদে থাকার অধিকার নেই। পুরভোটের মুখে বুধবার বাঁকুড়ার প্রশাসনিক বৈঠকে জেলার তিন পুরপ্রধানকে এ ভাবেই সতর্ক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কয়েক মাসের মধ্যেই পুরভোট। তাই মুখ্যমন্ত্রী তা নিয়ে কী বলেন, তা নিয়ে জেলায় জল্পনা চলছিল ক’দিন ধরে। ঘটনাচক্রে, এ দিন রবীন্দ্রভবনে প্রশাসনিক বৈঠক গোড়াতেই পুরপ্রধানেরা মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্নের মুখে পড়েন। তিন শহরের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ সঙ্কটগুলি সম্পর্কে আগাম খোঁজ নিয়েই পুরপ্রধানদের কাছে কৈফিয়ত তলব করেন তিনি। প্রথমেই তিনি বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায়ের কাছে জানতে চান, শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ডে হকারদের পুনর্বাসন দিতে দেরি হচ্ছে কেন?
মমতা বলেন, ‘‘হকারদের বিষয়টি আমার কানে এসেছে। এটা গরিব লোকের ব্যাপার। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজটা করতে হবে। ক’দিনের মধ্যে পুনর্বাসন দিতে পারবেন? কারও অপেক্ষা না করে আপনি নিজে দিয়ে দিন। তার পরে আমাকে জানাবেন।’’
ডাম্পিং গ্রাউন্ডের অভাবে বিষ্ণুপুর শহরে আবর্জনা সাফাই অন্যতম বড় সমস্যা। কিন্তু জমি-জটে বর্জ্য নিষ্কাশন প্রকল্প সেখানে আটকে রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর উষ্মা, ‘‘আপনার ওখানে জঞ্জাল সাফাই নিয়ে মানুষের ক্ষোভ রয়েছে। এখনও একটা জমি খুঁজে পেলেন না?’’ জেলাশাসক জানান, জমি দেওয়ার পরেও, বাসিন্দাদের আপত্তিতে কাজ এগনো যায়নি। তারপরেই মুখ্যমন্ত্রী জেলাশাসককে লোকালয় থেকে কিছুটা দূরে খাস জমি খুঁজে দিতে বলেন। সে জন্য সময় বেঁধে দেন, দু’-তিন দিন। বিষ্ণুপুর পুরসভার কাজ করেও যাঁদের টাকা আটকে রয়েছে, তাঁদের বকেয়া দ্রুত মেটাতে পুরপ্রধানকে উদ্যোগী হতে বলেন মমতা। তারপরেই বলেন, ‘‘ওই তিনটে বিষয় দ্রুত দেখুন। সাত দিনের মধ্যে জেলাশাসকের কাছে খোঁজ নেব।’’ পরে শ্যামবাবু বলেন, ‘‘দিদি যে তিনটি সমস্যার কথা বলেছেন, যত দ্রুত সম্ভব আমি সেগুলি সমাধানের চেষ্টা করছি।’’
সোনামুখী পুরসভায় কয়েক মাস আগে আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরির কাজে তৃণমূলের কাউন্সিলদের একাংশের যুক্ত থাকার অভিযোগে পোস্টার পড়েছিল। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী সোনামুখীর পুরপ্রধান সুরজিৎ মুখোপাধ্যায়কে প্রথমেই প্রশ্ন করেন, ‘‘আবাস প্রকল্প নিয়ে কী সমস্যা রয়েছে?’’ পুরপ্রধান দাবি করেন, সামগ্রিক ভাবে সমস্যা নেই। শুধু দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা বনভূমিতে বাস করছেন, তাঁদের বাড়ি করতে বন দফতর বাধা দিচ্ছে। এরপরেই মমতা রাজ্য ও জেলার আমলাদের জানান, পাট্টা দিয়ে যদি ঘর করে দেওয়া যায়, তা দেখতে হবে।
সোনামুখী ও বিষ্ণুপুরে বাড়ি-বাড়ি জলের সংযোগ দেওয়ার কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজ নেন মুখ্যমন্ত্রী। শ্যামবাবু জানান, কাজ চলছে। সুরজিৎ মিউনিসিপ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিরেক্টরেটের সহযোগিতা পাচ্ছেন না বলে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ তোলেন। তখন এক আমলা পাল্টা দাবি করেন, পুরসভাই টেন্ডার করে। সেই টেন্ডার করতে পুরসভা কোনও কারণে দেরি করেছে।
তখন বিরক্ত হয়ে মমতা সুরজিৎকে বলেন, ‘‘দেরি হবে কেন? যে দায়িত্ব নেবে, সে যদি ঠিকমতো কাজ না করে, তা হলে সেই কাজে (পদে) থাকার কোনও অধিকার নেই। আপনাদের টেন্ডার করার দেরির জন্য জনগণের জল পেতে অসুবিধা হবে? আমি সাত দিন সময় দিচ্ছি। করে দেবেন।’’ সুরজিৎ টেন্ডার নিয়ে কিছু জটিলতার কথা তুললে মুখ্যমন্ত্রী জানান, প্রয়োজনে দফতর থেকে কেন্দ্রীয় ভাবে টেন্ডার করে সমস্যা মেটাতে হবে। এরপরে তাঁর সংযোজন: ‘‘কোনওটা কারও জমিদারি নয়। আমি একটা চেয়ারে আছি বলে আমি জমিদার নই। আমি একটা প্রজামাত্র। মানুষের কাজ করতে হলে তাঁদের সমস্যাকে অনুভব করতে হবে।’’ পরে সুরজিৎ বলেন, ‘‘দিদির কথা মতোই কাজ করব।’’ তোপের মুখে পড়েন বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্তও। তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আপনাকে নিয়ে এত অভিযোগ কেন? উপপুরপ্রধান ভাল কাজ করেন। ওঁকে নিয়ে কাজ করবেন। আপনি হয়তো নিজেকে বড় কিছু ভাবছেন। কিন্তু জনগণই আসল। তাঁদের কাছে যান। সমস্যার কথা শুনুন। কারও কোনও ক্ষোভ থাকলে ক্ষমা চেয়ে আসবেন।’’ পরে মহাপ্রসাদ বলেন, ‘‘দিদি আমাদের অভিভাবক। ঠিক পথে পরিচালনার জন্য তিনি আমাদের বকতেই পারেন। বৈঠক শেষে আমি দিদির কাছে আমার ভুলগুলি কী তা জানতে চেয়েছিলাম।’’
বাঁকুড়ার উপপুরপ্রধান দিলীপ আগরওয়ালের সঙ্গে মহাপ্রসাদের মনোমালিন্য দীর্ঘদিনের। তা দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছেও পৌঁছেছে। এ দিন দিলীপ বলেন, ‘‘পুরবাসীর সমস্যাকে আমি বরাবরই গুরুত্ব দিয়ে কাজ করি। দিদির নির্দেশ পেয়ে কাজে আরও গতি বাড়াব।’’