(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । শুভেন্দু অধিকারী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
২০১১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্লোগান দিয়েছিলেন ‘বদলা নয়, বদল চাই’। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তা কিছুটা বদলে গেল ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে। সরাসরি ‘রাজনৈতিক বদলা’র কথা ঘোষণা করে দিলেন তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী। বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোরে দলের সভা থেকে মমতা বিজেপি নেতাদের জেলে ভরারও হুঁশিয়ারি দিয়ে দিলেন! ঘটনাচক্রে, মমতা যখন ওই হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন, তখন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ছিলেন জয়নগরের দলুয়াখাকি গ্রামে। সেখানেই তিনি বলেন, ওই বক্তব্যের জন্য তিনি মুখ্যমন্ত্রীর নামে এফআইআর করবেন।
নেতাজি ইন্ডোরে দলীয় সভায় মমতা বলেন, ‘‘ওরা আমাদের চার জন এমএলএ-কে জেলে ভরে রেখেছে। এই ভাবে আমাদের সংখ্যা কমিয়ে দিতে চাইছে। চুরির বদনাম দিয়ে ওরা যদি আমাদের চার জনকে জেলে ভরে রাখে, তা হলে আমরাও দলের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি, ওদের আট জনকে জেলে ভরব।’’ কাদের জেলে ভরবেন, তা-ও বলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তিনি বলেন, ‘‘ওদের যাদের নামে চুরি, খুন বা অন্য মামলা রয়েছে, তাদের জেলে ভরব!’’ মমতা আরও বলেন, ‘‘এ বার বদলা নিতে হবে। রাজনৈতিক ভাবে বদলা নিতে হবে। বুথে বুথে ওদের হারিয়ে ব্যাগে ভরে বাড়ি পাঠিয়ে দিতে হবে।’’
মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি সম্পর্কে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু বলেন, ‘‘এই কথার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এফআইআর হওয়া উচিত। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম পড়ে হেয়ার স্ট্রিট থানা এলাকায়। আমি সেখানে গিয়ে মমতার বিরুদ্ধে এফআইআর করব।’’
পার্থ চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতিপ্রিয় (বালু) মল্লিক, জীবনকৃষ্ণ সাহা এবং মানিক ভট্টাচার্য এই মুহূর্তে নিয়োগ দুর্নীতি এবং রেশন দুর্নীতি মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে গ্রেফতার হয়ে জেলে রয়েছেন। গরু পাচার মামলায় তিহাড় জেলে বন্দি রয়েছেন তৃণমূলের দাপুটে নেতা অনুব্রত মণ্ডলও। বৃহস্পতিবার মমতা বলেন, ‘‘কেষ্ট জেলে, পার্থ জেলে, মানিক জেলে, বালু জেলে। এটাই চলবে? যখন আপনারা (বিজেপি) আগামী দিন চেয়ারে থাকবেন না, তখন কোথায় থাকবেন, সেলে না কোলে?’’ পাশাপাশিই তিনি বলেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করি না বালুরা চোর!’’
লোকসভা ভোটের লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার দলের সর্ব স্তরের নেতৃত্বকে নিয়ে সভা করেন মমতা। চোখে সংক্রমণের জন্য সশরীরে সভায় উপস্থিত ছিলেন না দলের ‘সেনাপতি’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সভার শুরুতে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে দলের নেতৃত্বকে অভিনন্দন জানান। ওই সভা থেকে দলকে একগুচ্ছ কর্মসূচি দিয়েছেন মমতা। সেই সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছেন, ডিসেম্বরের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহে বকেয়া টাকার দাবিতে ফের দিল্লি অভিযান করবে তৃণমূল। মমতা বলেন, ‘‘সংসদে যখন অধিবেশন চলবে, ডিসেম্বরের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহে আবার দিল্লি যেতে হবে। আমরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চাইব। দিলে ভাল। না হলে রাস্তাই আমাদের রাস্তা হবে। দেখি কত মারতে পারে! অনেক মার খেয়েছি সিপিএমের হাতে। আর মারলে আমাদের জেদটা বেড়ে যায়।’’
শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশন। মমতা নির্দেশ দিয়েছেন ২৮, ২৯ এবং ৩০ নভেম্বর সব বিধায়ককে বিধানসভায় হাজির হতে হবে। তিন দিন দু’ঘণ্টা করে বিধানসভায় কেন্দ্রীয় বকেয়ার দাবিতে ধর্না দিতে হবে। বুথে বুথে মিছিল করতে হবে ২ এবং ৩ ডিসেম্বর। দলনেত্রী হিসাবে মমতা দলকে এ-ও বলেছেন যে, ভোটার তালিকা সংযোজন, বিয়োজন ও সংশোধনের যে কাজ চলছে, তা মন দিয়ে করতে হবে। মমতার কথায়, ‘‘ভোটার লিস্ট ঠিক না হলে কিচ্ছু হবে না।’’ এলাকায় আরএসএস কী করছে, সে ব্যাপারেও দলকে নজর রাখতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘সবটা পুলিশ দিয়ে হবে না। আপনাদেরও নজর রাখতে হবে। দরকারে ক্লাব, সামাজিক সংগঠনগুলিকেও যুক্ত করতে হবে।’’