Mamata Banerjee Rahul gandhi

মমতা-রাহুল কটাক্ষে একই সুর, ফাইনালে হারের দায় দিদি চাপালেন ‘পাপিষ্ঠ’দের ঘাড়ে, বঙ্গ কংগ্রেসে নীরব

বাংলার সিপিএমকে তুলোধনা করলেও কংগ্রেস নিয়ে একটি শব্দও খরচ করেননি মমতা। ভাল-মন্দ কিছুই নয়। বরং রাজীব গান্ধীর সময়ে যে ভাবে বফর্স দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিল বিরোধীরা, তা নিয়ে সরব হন তিনি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৩ ১৭:২৬
Share:

(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাহুল গান্ধী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

লোকসভা ভোটের লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার দলের সর্ব স্তরের নেতৃত্বকে নিয়ে সভা করলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সভা থেকে কংগ্রেস নিয়ে কোনও কড়া কথা শোনা গেল না তাঁর মুখে। এমনকি, দিবারাত্রি তৃণমূলের বিরোধিতা করে-চলা প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বকে নিয়েও কোনও আক্রমণ শানালেন না দিদি। উল্টে বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতের হার নিয়ে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী রাজস্থানের সভা থেকে যে কটাক্ষ করেছিলেন, মমতা নেতাজি ইন্ডোর থেকে কার্যত তাতেই সিলমোহর দিলেন। তবে রাহুলের থেকে তাঁর শব্দ আলাদা।

Advertisement

বৃহস্পতিবার মমতার নিশানা থেকে কংগ্রেস (এবং প্রদেশ কংগ্রেস) বাদ পড়ায় এবং সিপিএমের বিরুদ্ধে আক্রমণ আরও তীক্ষ্ণ হওয়ায় অনেকেই মনে করছেন, আগামী লোকসভা ভোটে বাংলায় বিরোধী সমীকরণের ভিতপুজো হয়ে গেল। যেখানে সিপিএম থাকবে না। কিন্তু কংগ্রেসের সঙ্গে ‘সমঝোতার বার্তা’ চলে গেল তৃণমূলের তরফে। যদিও শেষ পর্যন্ত এই সমীকরণ কত আসনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে, তা বোঝা যাবে আরও পরে। কিন্তু যে ভাবে বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতের হার এবং মাঠে মোদীর উপস্থিতি নিয়ে রাহুল-মমতা একসুর হলেন, তাতে ‘সঙ্কেত’ একটা পাওয়া যাচ্ছে বৈকি!

মঙ্গলবার রাজস্থানের একটি নির্বাচনী প্রচারসভায় রাহুল বলেছিলেন, ‘‘আচ্ছে ভলে হমারে লড়কে ওয়ার্ল্ড কাপ জিত যাতে, পর পনৌতি হারওয়া দিয়া (ভারতীয় দলের ক্রিকেটাররা ভাল ভাবে বিশ্বকাপ জিতে যেত, কিন্তু এক জন ‘অপয়া’ হারিয়ে দিল)। আর নেতাজি ইন্ডোরের সভায় মমতা বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘বিশ্বকাপ ফাইনাল যদি ইডেনে বা ওয়াংখেড়েতে হত, তা হলে আমরা জিতে জেতাম। পাপিষ্ঠরা যেখানে যাবে, সেখানেই পতন। পাপ কখনও বাপকেও ছাড়ে না।’’

Advertisement

রাহুল কারও নাম করে ‘অপয়া’ বলেননি। মমতাও কারও নাম করে ‘পাপিষ্ঠ’ বলেননি। কিন্তু রাহুল-মমতা নাম না করলে‌ও বুঝতে অসুবিধা হয়নি তাঁরা কাকে বা কাদের নিশানা করছেন। নরেন্দ্র মোদীর নামাঙ্কিত আমদাবাদের স্টেডিয়ামে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মোদী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উপস্থিতি নিয়ে গত রবিবার ফাইনালে ভারতের হারের পর থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সমাজমাধ্যমে মিমের বন্যা বয়ে গিয়েছে। তার মধ্যেই রাহুল, মমতারা রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে মোদীদের নানা বিশেষণে ভূষিত করে ভারতের হারের কারণ ব্যাখ্যা করতে চেয়েছেন। যদিও অনেকেই মনে করছে, ভারতের হারের সঙ্গে কারও উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির সম্পর্ক নেই। ভারত হেরেছে বিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া অনেক ভাল খেলেছে বলে। নিছকই ক্রিকেটীয় কারণে। বস্তুত, রাহুল যে ভাবে ভারতের হারের সঙ্গে ‘পয়া-অপয়া’ প্রসঙ্গ তুলেছেন, তাতে অনেকেই মনে করছেন, এর চেয়ে তিনি ‘রাজনৈতিক আক্রমণ’ করলে তা মানানসই হত।

তবে রাহুলের ওই কথার পরে মমতার প্রায় একই ধরনের বক্তব্যে কংগ্রেস-তৃণমূলের পারস্পরিক সম্পর্কে একটা ‘বার্তা’ পাওয়া যাচ্ছে। কারণ, এরই পাশাপাশি বৃহস্পতিবারের সভায় বাংলার সিপিএমকে তুলোধনা করলেও কংগ্রেস নিয়ে একটি শব্দও খরচ করেননি মমতা। ভাল-মন্দ কিছুই নয়। বরং রাজীব গান্ধীর সময়ে যে ভাবে বফর্স দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিল বিরোধীরা, তা নিয়ে সরব হন মমতা। তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘‘আমি তখন ভোটে দাঁড়িয়েছিলাম। রাস্তায়-রাস্তায়, দেওয়ালে-দে‌ওয়ালে বফর্স কামান আঁকা হয়েছিল। আজকে বিজেপি কত টাকা চুরি করেছে? বাইরে থেকে বিমান কেনা হচ্ছে, কাশীপুর গানশেল কারখানায় কিচ্ছু তৈরি হচ্ছে না। সব বাইরে থেকে আনছে। কেউ হিসেব চাইছে?’’

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা সাংসদ অধীর চৌধুরী বরাবরই তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘আগ্রাসী’ মেজাজে থাকেন। তবে মমতার বৃহস্পতিবারের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তাঁর সুর কিছুটা ‘নরম’ই শুনিয়েছে। মমতার কংগ্রেসকে আক্রমণ না করার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বহরমপুরের সাংসদ বলেন, ‘‘উনি হয়তো কংগ্রেস নিয়ে বলার মতো কিছু পাননি। তাই বলেননি।’’ অনেকের বক্তব্য, মমতা আসলে বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র সমীকরণ থেকে কংগ্রেসকে বার্তা দিতে চেয়েছেন। বিধানভবনও সে সব আঁচ করেই মনোভাব নরম করেছে। আবার সিপিএম নেতারাও ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন, কালীঘাট বার্তা দিতে চাইছে ১০ নম্বর জনপথকে ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement