মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র
তিন বছর আগে চালু হওয়া সারেঙ্গার রিজ়ার্ভার হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ায় বিতর্কে জড়িয়েছে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর। এ বার সেই বাঁকুড়ায় এসে প্রশাসনিক বৈঠকের ঠিক আগের দিন, মঙ্গলবার কর্মিসভায় ওই দফতরের কাজে আরও গতি বাড়ানো দরকার বলে মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর ওই মন্তব্যের পরে আজ, বুধবার প্রশাসনিক বৈঠকে জনস্বাস্থ্য ও কারগরি দফতরের কাজ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কী নির্দেশ দেন, তা নিয়ে জেলা প্রশাসনের অন্দরে জল্পনা শুরু হয়েছে।
এ দিন বাঁকুড়ার সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ায় জলের সমস্যা রয়েছে। বাঁকুড়ায় ২,০০০ কোটি টাকা দিয়ে জল প্রকল্পের কাজ হচ্ছে। এই কাজ জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরকে আরও জলদি করতে হবে।’’ ঘটনা হল, ২০১২ সাল থেকে বাঁকুড়া জেলায় নলবাহিত পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। প্রকল্পের প্রথম দফায় ইতিমধ্যেই ১৪টি ব্লক জল পেয়েছে। দ্বিতীয় দফায় আরও চারটি ব্লক মেজিয়া, গঙ্গাজলঘাটি, তালড্যাংরা ও ইঁদপুরে জল দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। তা শেষ হওয়ার পরে তৃতীয় দফায় জেলার সোনামুখী, পাত্রসায়র, জয়পুর ও কোতুলপুরে জল প্রকল্প গড়া হবে। তৃতীয় দফার কাজের রিপোর্ট ইতিমধ্যেই তৈরি করা শুরু হয়েছে বলে দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে। তবে, নানা জটিলতায় প্রকল্পের দ্বিতীয় দফার কাজের গতি কিছু জায়গায় ধাক্কা খাচ্ছে বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর। জেলা রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের মতে, সামনেই পুরভোট। পরের বছরে বিধানসভা ভোট। এই পরিস্থিতিতে বিধানসভা ভোটের আগে বাঁকুড়ার জল-সমস্যা মেটানোই তৃণমূল সরকারের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।
জল প্রকল্পের প্রথম দফার কাজ শেষ হয়েছে কয়েক বছর আগে। তার মধ্যে সারেঙ্গার ফতেডাঙায় চালু হওয়া জল প্রকল্পের একটি রিজ়ার্ভার গত ২২ জানুয়ারি ভেঙে পড়ায় হইচই শুরু হয়। তৃণমূল নেতাদের কাটমানি দিতে গিয়ে নিম্নমানের রিজ়ার্ভার নির্মাণ হয়েছে বলে বিরোধীরা অভিযোগ তোলেন। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তবে পুরো ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়ে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর।
ঘটনার পরের দিনই অবশ্য ওই এলাকায় জল সরবরাহ স্বাভাবিক করা হয়। তিন জনের উচ্চপর্যায়ের তদন্ত-দল ঘটনাস্থলে যান। প্রাথমিক রিপোর্টের ভিত্তিতে ওই রিজ়ার্ভারের নির্মাণকাজ চলাকালীন জেলায় দায়িত্বে থাকা জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের কয়েক জন আধিকারিককে ‘কমপালসারি ওয়েটিং’-এ পাঠানো হয়। দফতরের তরফে নির্মাণকারী সংস্থাকে দ্রুত সেখানে নিজস্ব খরচে নতুন রিজ়ার্ভার তৈরি করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র এ দিন অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য নিয়ে কিছু বলতে চাননি। দফতরের জেলার আধিকারিকেরাও কোনও মন্তব্য করতে চাননি। মন্ত্রী ফোনে বলেন, ‘‘বাঁকুড়ার প্রশাসনিক বৈঠকে দফতরের শীর্ষ কর্তারা থাকবেন। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী যেমন নির্দেশ দেবেন, সেই অনুযায়ী আমরা কাজ করব।’’