মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
অনুষ্ঠান ছিল বিজয়া সম্মিলনীর। জানিয়েছিলেন, সেখানে কোনও রাজনৈতিক কথা বলবেন না। তবু ওই মঞ্চ থেকেই আবার বিজেপিকে নিশানা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ‘অপব্যবহার’ নিয়ে আরও এক বার কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিলেন তৃণমূলনেত্রী। বললেন, ‘‘ক্ষমতায় যখন থাকবে না, তোমার বাড়িতে এজেন্সি গিয়ে দু’কান মুলবে।’’
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থারের ‘অপব্যবহার’ নিয়ে তৃণমূলের অভিযোগ নতুন নয়। রাজনৈতিক ভাবে না পারায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) এবং সিবিআই দিয়ে প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে বিজেপি— প্রায়শই এই অভিযোগ জানিয়ে সরব হয় বাংলার শাসকদল। বর্তমানে রাজ্যে একাধিক দুর্নীতির ঘটনার তদন্ত করছে রয়েছে ইডি, সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। গরু পাচার মামলায় অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে তদন্তে আবার সক্রিয়তা বাড়িয়েছে ইডি। শিক্ষক নিয়োগে ‘দুর্নীতি’তে সম্প্রতি গ্রেফতার করা হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যকে। আগেই গ্রেফতার হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। গরু পাচার, শিক্ষক নিয়োগে ‘দুর্নীতি’র পাশাপাশি কয়লা পাচার-কাণ্ডেও সক্রিয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এই মামলায় ইডির জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁর স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শ্যালিকা মেনকা গম্ভীর। এই প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার আবার যে ভাবে ইডি-সিবিআই নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে হুঙ্কার দিলেন তৃণমূলনেত্রী, তা তাৎপর্যপূর্ণ।
বৃহস্পতিবার ভবানীপুরে তৃণমূলের বিজয়া সম্মিলনীতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার প্রসঙ্গ টেনে বিজেপিকে নিশানা করে তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘‘আজ ক্ষমতায় আছে বলে এজেন্সি দেখাচ্ছে। কাল যখন ক্ষমতায় থাকবে না, তোমার বাড়িতে এজেন্সি গিয়ে দু’কান মুলবে। তৈরি থাকো।’’
২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করেছে তৃণমূল। দিল্লির মসনদ থেকে ‘মোদী বাহিনী’কে হঠাতে বিরোধী ঐক্যে শান দেওয়ার কাজে অগ্রণী হতেও দেখা গিয়েছে মমতাকে। ‘কাল যখন ক্ষমতায় থাকবে না’ মন্তব্য করে তৃণমূলনেত্রী আদতে আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ক্ষমতা থেকে সরানোর বার্তাইদিতে চেয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। মমতা আরও বলেন, ‘‘এরা যা অত্যাচার করেছে, এমন এক দিন আসবে, জনগণ ওদের কান মুলে দেবে।’’
বস্তুত, এর আগেও ইডি-সিবিআই নিয়ে সুর চড়িয়েছেন মমতা। এ বছর ২১ জুলাইয়ের সভামঞ্চে মমতা বলেছিলেন, ‘‘বাড়িতে সিবিআই-ইডি এলে মুড়ি খেতে দিন।’’ সেই সভার পর পরই শিক্ষকনিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হন পার্থ। তার কিছু দিনের মধ্যেই গরু পাচার-কাণ্ডে গ্রেফতার করা হয় বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রতকে। কেষ্টর গ্রেফতারির পর বেহালায় প্রাক স্বাধীনতাদিবসের অনুষ্ঠান মঞ্চে কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে মমতা প্রশ্ন করেছিলেন, ‘‘কাল যদি আমার বাড়িতে যায়, কী করবেন? রাস্তায় নামবেন তো!’’ এমনকি, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধে বিধানসভায়নিন্দা প্রস্তাবও আনে মমতার সরকার।