Police Day

পুলিশ দিবসে বার্তা ।। বাঘের মতো লড়ব: মমতা

রাজ্য সরকার পুলিশ বাহিনীর প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাতে ১ সেপ্টেম্বর পুলিশ দিবস ঘোষণা করেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৫:০১
Share:

ছবি: পিটিআই।

রাজ্যের পুলিশ ‘সৎ এবং নিরপেক্ষ’, সেই সঙ্গে মানবিকও। এমন ‘বঙ্গ-বীরভূমির’ পুলিশের বিরুদ্ধে কুৎসা ও সমালোচনা করছেন যাঁরা, তাঁদের সামনে মাথা উঁচু করে ‘বীরদর্পে’ কাজ করার পরামর্শ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

রাজ্য সরকার পুলিশ বাহিনীর প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাতে ১ সেপ্টেম্বর পুলিশ দিবস ঘোষণা করেছে। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে সেই দিন অনুষ্ঠান করা যায়নি। রাষ্ট্রীয় শোকপর্ব কাটিয়ে মঙ্গলবার নবান্ন সভাঘর থেকে পুলিশ দিবস পালন করল রাজ্য সরকার। রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে পুলিশ বাহিনীর সেপাই থেকে মহানির্দেশক সকলেই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যোগ দেন।

এ দিন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, ‘‘কেউ স্বীকার করুন আর না করুন, আগে কলকাতা পুলিশকে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের সঙ্গে তুলনা করা হত। আমার মনে হয়, কলকাতা পুলিশ এখন স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের চেয়েও ভাল হয়ে গিয়েছে। বেঙ্গল পুলিশও আগের চেয়ে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে। উন্নত হয়েছে।’’ এ হেন বঙ্গ পুলিশ বাহিনীর বদনাম যাঁরা করছেন, তাঁদের কোনও রকম ভয় না-পেয়ে বীরদর্পে কাজ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্রও বলেন, ‘‘গত ১০ বছরে পুলিশের কল্যাণে যা হয়েছে তার সব সব কৃতিত্ব মুখ্যমন্ত্রীর। তাঁর অনুপ্রেরণাও মুখ্যমন্ত্রী।’’ যে ভাবে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ও পুলিশ বাহিনীর ভুল ধরিয়ে অনুপ্রাণিত করেছেন তাতে পুলিশ কর্মীরা আগামী দিনে মুখ্যমন্ত্রী পাশে থাকবেন বলেও তিনি বিশ্বাস করেন বলে পুলিশ প্রধান এ দিন জানান। কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মাও বলেন, ‘‘পুলিশের কাজের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য তিনি বাহিনীর পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ।’’

শুভেচ্ছা: গড়িয়াহাট থানায় পৌঁছে পুলিশকে কেক ও গোলাপ দিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। মঙ্গলবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

জ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিংহের কথায়, ‘‘পুলিশ ভাল কাজ করলে কেউ বলে না। কিন্তু একটা ভুল হলেই সমালোচনা হয়। বিশেষ করে কোনও কোনও অংশ থেকে রাজ্য পুলিশের সততা এবং নিরপেক্ষতা নিয়ে বার পার প্রশ্ন তোলা হয়। আমি বলতে চাই, এ রাজ্যের পুলিশ সৎ এবং নিরপেক্ষ। যাঁরা এ সব বলছেন, তাঁদের কথায় কান দেবেন না। নিজের কাজ করে যান।’’ সাইবার অপরাধ এবং সামাজিক মাধ্যমে ফেক নিউজ ছড়িয়ে অশান্তি ছড়ানোর ব্যাপারে পুলিশকে আরও সতর্ক হতে বলেন মুখ্যসচিব।

আমলারা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে পুলিশ বাহিনী নিয়ে বিরোধী নেতাদের সাম্প্রতিক হুমকির প্রসঙ্গ তুললেও মুখ্যমন্ত্রী রাখঢাক না-করেই সেই সমালোচনার জবাব দিয়েছেন। তবে মুখে কারও নাম তোলেননি। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে লাগাতার টুইট করে থাকেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ও। সম্প্রতি একটি গোপন চিঠি লিখে ডিজি’কে তাঁর ভূমিকার কথাও স্মরণ করিয়েছেন তিনি। এ দিন রাজ্যপালের নাম না-করেও মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘চিঠি লিখে কেন গালিগালাজ দিচ্ছেন। এক জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা কেন নেওয়া হচ্ছে বলে শাসাচ্ছেন। এই পুলিশ যখন করোনা-আমপানে কাজ করে, রক্তদান করে, প্লাজ়মা দান করে তখন প্রশংসা করে তো চিঠি দেন না!’’ এর পরে রাজ্যপালের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘ওখানকার সিপি মনোজ বর্মাকে গুলি করে মারতে চেয়েছিল। রোজ একটা বাড়ি থেকে বোমা পড়ছে। অন্য কেউ কিছু করছে না। পুলিশকে কেন দোষারোপ করছে? কেন ডিজি’কে চিঠি লিখে গালিগালাজ করছেন?’’ এখানেই থামেননি মুখ্যমন্ত্রী। দিন দুই আগে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ‘চামচাবাজি’ করা পুলিশকে ভোটের পরে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। তাঁদের বউ-বাচ্চার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেবেন না বা পুলিশ কর্মীদের বাইরে পাঠরত ছেলেমেয়েদের পরিযায়ী শ্রমিক বানিয়ে দেবেন বলে হুমকি দিয়েছিলেন। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মুখে দিলীপের নাম না-নিলেও পুলিশ কর্মীদের উদ্দেশে এমন নেতাদের থেকে সতর্ক থাকার অনুরোধ করেছেন।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কোনও কাজ না-করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে শুধু গালি দেওয়া! করোনা-আমপানে যে পুলিশ বাহিনী লড়ছেন, তাঁদের পাশে না-দাঁড়িয়ে পরিবার, ছেলেমেয়েদেরও গালি দিচ্ছেন কী করে? এরা সব পাষণ্ড, নিপীড়ক, শোষকের দল।’’ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ পুলিশ আছে বলে আপনিও শান্তিতে আছেন। পুলিশ আপনার বাড়ি, গাড়ি পাহারা দিচ্ছে। চায়ের দোকানে চা খাচ্ছেন, পুলিশ ঘিরে রাখছে। আর সেই পুলিশের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছেন। হুমকি দিচ্ছেন। দেশটাকে কিনে নিয়েছেন নাকি? সবাইকে ভয় দেখাচ্ছেন। রাজীব কুমারের বৃদ্ধা মাকেও ভয় দেখিয়ে এসেছিলেন, আমি তা কোনও দিন ভুলব না।’’

মুখ্যমন্ত্রীর হুঙ্কার, ‘‘লড়ব যখন বাঘের মতো লড়ব। মরব তো এক বারই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement