আরজি করে ভাঙচুরের ঘটনা প্রসঙ্গে মুখ খুললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) বা এআই ব্যবহার করে ভুয়ো ভিডিয়ো তৈরি করা হচ্ছে। তা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সমাজমাধ্যমে। বুধবার রাতে আরজি কর হাসপাতালে হামলার ঘটনা প্রসঙ্গে এমনটাই মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হামলার জন্য সিপিএম, বিজেপির মতো বিরোধী দলগুলিকেই দুষলেন তিনি। বৃহস্পতিবার স্বাধীনতা দিবসের চা-চক্রে রাজভবনে গিয়েছিলেন মমতা। সেখান থেকে বেরিয়েই আরজি করে হামলা প্রসঙ্গে কথা বলেন। সাধারণ মানুষের কাছে তিনি অনুরোধ করেছেন, ভুয়ো ভিডিয়োতে যাতে কেউ বিশ্বাস না করেন।
আরজি করে বুধবার রাতে মহিলাদের ‘রাত দখল’ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছিল। অভিযোগ, আচমকা সেখানে হামলা চালায় এক দল দুষ্কৃতী। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভাঙচুর চালানো হয়। এই হামলার জন্য আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের দোষ দেখছেন না মমতা। তিনি বলেন, ‘‘এটা ছাত্রছাত্রীরা করেনি। আমি ওদের দোষ দিচ্ছি না। কিছু বহিরাগত রাজনৈতিক লোক, বাংলায় অশান্তি করতে চান। বাম এবং রাম একত্রিত হয়ে এই কাজ করেছে। তারা ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছে। ওঁরা কেউ শান্তি চান না। আন্দোলনে যাঁরা জাতীয় পতাকা নিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁরা বিজেপি। এ ছাড়া, ডিওয়াইএফআইয়ের পতাকাও দেখা গিয়েছে।’’
এআই ব্যবহার করে ভুয়ো ভিডিয়ো ছড়ানো প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘এআই দিয়ে আজকাল অনেক কিছু করা যায়। যে কোনও ছবিতে বা ভিডিয়োতে যে কোনও মুখ বসিয়ে দেওয়া যায়। অডিয়ো তৈরি করা যায়। এখানেও তা-ই হচ্ছে। আমি অনেক ভিডিয়ো দেখছি। সব ভুয়ো। মিথ্যা প্রচার করে ভিউ বৃদ্ধি করা এখন একটা ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। পুলিশ এর দিকে কড়া নজর রাখবে। নীতি আয়োগের বৈঠকেও প্রধানমন্ত্রী সাইবার ক্রাইম নিয়ে কথা বলেছিলেন। এ বিষয়ে আমি ওঁর সঙ্গে আমি একমত।’’
আরজি করে বুধবার রাতে হামলাকারীদের হাতে আক্রান্ত হয়েছে পুলিশ। তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মমতা। জানিয়েছেন, কলকাতা পুলিশের ডিসি (নর্থ)-র মাথা ফেটে গিয়েছে। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় রাতেই। ভোর ৪টে পর্যন্ত তিনি জেগে ছিলেন বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘আরজি করে পুলিশকে আক্রমণ করা হয়েছে। ওরা তো কিছু করেনি। যথাসাধ্য তদন্ত করেছিল। মেরে ডিসিপি-র মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। রক্তে ওর সারা গা ভেসে গিয়েছিল। তবু পুলিশ কিন্তু ধৈর্য হারায়নি, কারও গায়ে হাত দেয়নি। ডিসিপি-কে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ও অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। আমি সারা রাত জেগে ছিলাম। ভোর ৪টে পর্যন্ত জেগে ছিলাম।’’
আরজি করে হামলার কারণে অনেক টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘আরজি করে অনেক ক্ষতি করেছে। দামি দামি ওষুধ নষ্ট করেছে। দু’টি তলায় ভাঙচুর চালানো হয়েছে।’’ বৃহস্পতিবার আবার আন্দোলনরত চিকিৎসকদের কাজে ফেরার অনুরোধ করেছেন মমতা। তিনি জানান, যা যা দাবি করা হয়েছিল, সেগুলি সবই মেনে নেওয়া হয়েছে। পুলিশের হাতে এই তদন্ত এখন আর নেই। সাহায্য ছাড়া আমাদের কিছু করার নেই। আমি অনেক রকম ভাবে অনুরোধ করেছি। পরিষেবা দেওয়ার জন্য চিকিৎসকেরা অঙ্গীকারবদ্ধ। কিছু কিছু জুনিয়র চিকিৎসক এবং সিনিয়র চিকিৎসক পরিষেবা দিচ্ছেন। তাঁদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’’
আরজি করে চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার তদন্ত পুলিশ অনেকটাই গুটিয়ে এনেছিল বলে জানান মমতা। সেই তথ্যই তারা সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিয়েছে। ৩৪ জনকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল পুলিশ। মমতা বলেন, ‘‘যা ঘটেছে, তা একটি সামাজিক ব্যাধি। উত্তরপ্রদেশেও সম্প্রতি একই রকমের একটি ঘটনা ঘটেছে। এর আগে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানেও হয়েছে। এই অপরাধের একটাই শাস্তি— ফাঁসি। যাতে পরবর্তীকালে তা করতে অন্যেরা ভয় পায়। কিন্তু আমার অনুরোধ, কোনও নির্দোষ যেন শাস্তি না পান।’’