গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার তদন্ত করছে সিবিআই। তাদের নজরে রয়েছে ধৃতের ফোন থেকে পাওয়া বিভিন্ন তথ্য। আরজি কর হাসপাতালে কাদের সঙ্গে ধৃতের বেশি ‘ভাব’ ছিল, তা-ও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। দেখা হচ্ছে ধৃতের ফোনের লোকেশনও। সে দিন রাতে অভিযুক্ত কোথায় কোথায় গিয়েছিলেন, কী কী করেছিলেন, কার কার সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছিল, সব তথ্য খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযুক্ত সম্পর্কে সব তথ্য উদ্ঘাটন করতে মরিয়া কেন্দ্রীয় সংস্থা।
সিবিআই সূত্রের খবর, ধৃতের ফোনের লোকেশন এবং নামের তালিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অনলাইনে কেউ সে দিন রাতে তাঁকে বার্তা পাঠিয়েছিলেন কি না, কেউ ফোন করেছিলেন কি না, সে সব তথ্যও ঘেঁটে দেখা হচ্ছে। কোনও সম্ভাবনাই আপাতত উড়িয়ে দিচ্ছেন না গোয়েন্দারা।
হাসপাতাল সূত্রে আগেই জানা গিয়েছিল, অভিযুক্ত আরজি কর চত্বরে বেশ প্রভাবশালী ছিলেন। সিভিক ভলান্টিয়ার হওয়ায় হাসপাতালের সর্বত্র তাঁর অবাধ যাতায়াত ছিল। এমনকি, হাসপাতালে দালালচক্রের সঙ্গেও তিনি যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পেশার সূত্রেই হাসপাতালের অনেকের সঙ্গে তাঁর পরিচিতি ছিল। যাঁদের সঙ্গে অভিযুক্তের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল, যাঁদের সঙ্গে তাঁর ‘ভাব’ ছিল, সিবিআই তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। ইতিমধ্যে পুলিশ সেই জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব সেরে ফেলেছে। সিবিআইয়ের তরফেও আবার তাঁদের ডাকা হতে পারে।
ইতিমধ্যে ঘটনার দিনের সিসিটিভি ফুটেজ হাতে পেয়েছেন গোয়েন্দারা। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছিল, সিসি ক্যামেরায় বৃহস্পতিবার রাত ১১টা নাগাদ অভিযুক্তকে হাসপাতালে ঢুকতে দেখা যায়। পরে তিনি বেরিয়ে যান। তার পর আবার ভোরবেলায় হাসপাতালে ঢোকেন। সেমিনার হলের দিকে যাওয়ার ৩০-৩৫ মিনিট পর আবার বেরিয়ে আসতে দেখা গিয়েছিল অভিযুক্তকে। প্রবেশের সময়ে তাঁর কানে যে হেডফোন ছিল, বেরোনোর সময় তা ছিল না বলে দাবি করা হয়েছিল পুলিশ সূত্রে। সেই হেডফোনের ছেঁড়া অংশের সূত্রে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পুলিশ সূত্রে দাবি, জেরার মুখে অপরাধের কথা তিনি স্বীকারও করে নিয়েছেন। তবে আদালতের নির্দেশে পুলিশের হাত থেকে তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে স্থানান্তরিত হয়ে গিয়েছে। ফলে গোটা ঘটনাক্রমই আবার যাচাই করে দেখছেন গোয়েন্দারা।
গত শুক্রবার আরজি করের চার তলার সেমিনার হল থেকে চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার করা হয়। তাঁকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। পুলিশ পরের দিনই এক জনকে গ্রেফতার করে। কিন্তু ঘটনার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত রয়েছেন কি না, সেই জল্পনা তৈরি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও একাধিক ব্যক্তির জড়িত থাকার সম্ভাবনা মেনে নিয়েছিলেন। দোষীদের ফাঁসি চেয়েছেন তিনি। তবে এ-ও জানিয়েছেন, কোনও নির্দোষ ব্যক্তিকে যেন অকারণে শাস্তি না পেতে হয়। এই তদন্তের জন্য পুলিশকে রবিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন মমতা। তবে তার আগেই কলকাতা হাই কোর্ট তদন্তভার তুলে দিয়েছে সিবিআইয়ের হাতে।