ইনফোকমের মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই
সুরটা নামিয়ে রেখেছিলেন কিছু দিন, সম্ভবত কৌশলগত কারণেই। উপনির্বাচনে বিজেপিকে ধরাশায়ী করেই ফের সুর চড়ালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অর্থনীতির বেহাল দশা সংক্রান্ত তর্কে গোটা দেশ তেতে উঠেছে জিডিপি বৃদ্ধির সাম্প্রতিকতম হার প্রকাশিত হতেই। ইনফোকমের উদ্বোধনী মঞ্চ থেকে বৃহস্পতিবার সে বিষয়ে মুখ খুললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেশের অর্থনীতি ‘অন্ধকারতম’ সময়ে রয়েছে বলে মন্তব্য করে ঝাঁঝালো আক্রমণ শানালেন মোদী সরকারের বিরুদ্ধে।
সদ্য প্রকাশিত হয়েছে দেশের জিডিপি বৃদ্ধির সাম্প্রতিকতম হার। চলতি আর্থিক বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির হার কমে দাঁড়িয়েছে ৪.৫ শতাংশে। তা নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে গোটা দেশেই বিরোধী শিবির তীব্র আক্রমণ শুরু করেছে কেন্দ্রীয় সরকারকে।সংসদে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলও বিষয়টি নিয়ে তীব্র কটাক্ষে বিঁধতে শুরু করেছিল অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে। কিন্তু বৃদ্ধির হার ৪.৫ শতাংশে নামার পরে মমতা নিজে বিশদে মুখ খুললেন এই প্রথম। ইনফোকমের মতো বাণিজ্য সম্মেলনকেই তিনি বেছে নিলেন এ বিষয়ে মুখ খোলার উপযুক্ত মঞ্চ হিসেবে।
শুধু অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন যে তাঁর লক্ষ্য নন, গোটা সরকারই যে তাঁর নিশানায়, সে কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন। এই সরকার যে ভাবে সব কিছুকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে, তাতে সবাই ভীত, শিল্পপতিরা ত্রস্ত— অভিযোগ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। ইনফোকমের উদ্বোধনী মঞ্চ থেকে নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে তীব্র আক্রমণ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন প্রশ্ন তোলেন, ‘‘কেন অকারণে শিল্পের সব ব্যাপারে নাক গলানো হবে? কেন শিল্পপতিদের নিয়ন্ত্রণ করা হবে? কেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে?’’ মমতার কথায়, ‘‘আমি সরকারে আছি। আমি উন্নয়নের কাজ করব। আমি পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য কাজ করব। আমি চাষির জন্য কাজ করব। কিন্তু রোজ ইনকাম ট্যাক্স, সেল ট্যাক্স, সিবিআই, ইডি বা এই এজেন্সি বা সেই এজেন্সিকে দিয়ে তল্লাশি করাব না।’’ কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলোকে যে ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, তাতে সবাই ভীত বলে এ দিন মন্তব্য করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: প্রথমে বন্ধ গেট, তার পরে নির্জন বিধানসভা, সরকারকে আক্রমণে রাজ্যপাল, পাল্টা কটাক্ষ পার্থর
কেন্দ্রীয় সরকার যে ভঙ্গিতে চলছে, তার জেরেই অর্থনীতির এই অবস্থা হচ্ছে বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন দাবি করেন। শুধু অর্থনৈতিক নীতির ব্যর্থতা নয়, সরকার সবাইকে যে ভাবে ভয় পাইয়ে দিয়েছে, তার জেরেই এই অবস্থা হচ্ছে, মনে করছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘দেশে অনিশ্চয়তার আবহ তৈরি হয়েছে।’’ সেই সঙ্গে কী ভাবে এই পরিস্থিতি তৈরি হল তারও ব্যাখ্যা দেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘ব্যাঙ্কের পদক্ষেপ নিয়েই জনগণের মধ্যে সন্দেহ দেখা দিচ্ছে। কেউ ভরসা করতে পারছেন না। ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলার পরিমাণ বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। বাড়িতে টাকা রাখলে নোটবন্দি হচ্ছে। আর ব্যাঙ্কে রাখলে লুঠবন্দি হচ্ছে।’’
ইনফোকমের মঞ্চ থেকে এ দিন এনআরসি প্রসঙ্গেও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সংসদের চলতি অধিবেশনেই পেশ হতে চলেছে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। বুধবার তাতে অনুমোদনও দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। সেই বিল এবং এনআরসি নিয়ে কেন্দ্রকে তোপ দাগেন মমতা। দেশে বিভাজনের রাজনীতি চলছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: ভারতের বায়ুসেনা প্রধানের সফরকালে বন্দুক-হামলা পার্ল হারবারে, হত ৩
কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করার পাশাপাশি, ইনফোকমের মঞ্চ থেকে রাজ্যে বিনিয়োগের জন্য শিল্পপতিদের কাছে আহ্বানও জানিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘বাংলায় লগ্নি করুন, এখানে প্রচুর জমি আছে।’’ গত কয়েক বছরে পর্যটন, তথ্য প্রযুক্তি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ক্ষেত্রে রাজ্যর অগ্রগতি কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে, বাণিজ্য সম্মেলনে এ দিন তারও পরিসংখ্যান তুলে ধরেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।