Mamata-Partha

মাঝে ২০ ফুটের কালো রাস্তা, এ পারে মমতা, ও পারে পার্থ, কাছে থেকেও দূরেই প্রাক্তন মহাসচিব

দলকে বিড়ম্বনায় ফেলেছেন তিনি। দল দূরত্ব তৈরিও করেছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকেলটা যেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জন্য আরও হতাশার। অদূরেই মিলন আর উৎসবের আলো।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২২ ১৬:০৭
Share:

কাছে থেকেও অনেক দূরে। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

মাঝে কালো পিচ রাস্তা ডি এল খান রোড। আদিগঙ্গার উপর ছোট্ট সেতুটা পার হলেই বাঁ পাশে প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা তৃণমূলের প্রাক্তন মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের এখনকার ঠিকানা। ডান পাশে রাজ্য সরকারি ভবন ‘উত্তীর্ণ’। যেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে বিজয়া সম্মিলনী। নিজের বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুরের জন্য মমতার বিশেষ অনুষ্ঠান।

Advertisement

বিশ ফুট রাস্তার ও পারে সংশোধনাগারের পাঁচিলের অন্তরালে বসে সে খবর নিশ্চয়ই রেখেছেন তৃণমূলের প্রাক্তন মহাসচিব তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী। কিন্তু তিনি তো এখন দলের সব পদ খোয়ানো বিধায়ক মাত্র। কাছাকাছি থাকলেও আসলে ‘উত্তীর্ণ’ থেকে অনেক দূরে তিনি। যেমন দলের থেকেও তাঁর দূরত্ব বেড়ে চলেছে। বেড়েই চলেছে।

২৩ জুলাইয়ের আগের পার্থ হলে কি আর এমন মিলনোৎসবে আমন্ত্রণ পেতেন না? সে যতই তিনি বেহালা পশ্চিমের বিধায়ক হন না কেন! ‘উত্তীর্ণ’-এর মুক্তাঙ্গনে ভবানীপুরের বিজয়া সম্মিলনীতেও নিশ্চিত ডাক পেতেন দলের ওজনদার নেতা। কিন্তু ইডির হাতে গ্রেফতার হওয়া, ‘ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে পাহাড়প্রমাণ নগদ অর্থ, সোনাদানা উদ্ধারের পরে তো তিনি অন্য পার্থ! দল তাঁর সমস্ত পদ কেড়ে নিয়েছে। সাসপেন্ডও করেছে। তিনি এখন প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের ‘পহেলা বাইশ’ সেলের বন্দি।

Advertisement

ঘটনাচক্রে, গ্রেফতার হয়েও দলীয় পদে বহাল রয়েছেন বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। গ্রেফতার হলেও পলাশিপাড়ার বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যের সঙ্গে এখনও ঘোষিত ভাবে ‘দূরত্ব’ তৈরি করেনি তৃণমূল। দলে তাঁর সতীর্থদের একাংশ মনে করছেন, দলকে পার্থ যতটা বিড়ম্বনায় ফেলেছেন, ততটা আর কেউ ফেলেননি। অর্পিতার ফ্ল্যাটে উদ্ধার হওয়া অর্থই সেই ‘অনর্থ’ ডেকে এনেছে। তৃণমূল সূত্রে এমনটাও জানা যাচ্ছে যে, পার্থ-কাণ্ডে দলের ভাবমূর্তিতে যে ‘আঘাত’ লেগেছে, তা মেরামতির জন্যই এ বছর বিজয়া সম্মিলনী কর্মসূচিতে বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছে দল। তারই অঙ্গ বৃহস্পতিবারের আয়োজন।

কারান্তরালে পার্থ রয়েছেন তাঁর দৈনন্দিনতায়। স্বাস্থ্য এখন আগের চেয়ে ভাল। প্রাচীরের ও পারে কালো রাস্তার পেরিয়ে ‘উত্তীর্ণ’ তাঁর গোচরে আছে কি না, তা সংশোধনাগার সূত্রে জানা য়ায়নি। জানা গিয়েছে, মানসিক ভাবেও ‘ঠিকঠাক’ রয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী। পুজোর আবহেও তিনি ছিলেন প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের ২,৫০০ আবাসিকের একজন হয়েই।

দুর্গাপুজোর সঙ্গে পার্থের সম্পর্ক অনেক কালের। অনেক গভীরের। কিন্তু সে সব এখন অতীত। তাঁর বারোয়ারি হিসাবে খ্যাত নাকতলাও পার্থ-হীন হয়ে জৌলুস হারিয়েছে। কোনও পুরস্কারের ধারেকাছে আসতে পারেনি। ফি বছরের ‘বিশ্ববাংলা’ পুরস্কার থেকেও তারা বঞ্চিত হয়েছে।

পার্থ নিজেও পুজোয় অংশ নিতে পারেননি। ষষ্ঠীতে সংশোধনাগারে দুর্গাপুজোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু জেল কর্তৃপক্ষ নাকি তাঁর সেই আবেদন খারিজ করে দেন। জেল সূত্রে জানা গিয়েছিল, পুজোর দিনগুলো সেলের ভিতরে লোহার খাটের উপরেই কাটিয়েছেন পার্থ। প্রায় সময়েই তাঁকে বিমর্ষ মুখে মাথা নিচু করে বসে থাকতে দেখা গিয়েছে। সেখানে বসে জানতে পারেন, অর্পিতা পুজো থেকে ‘বঞ্চিত’ নন। নতুন শাড়ি পরে পুজোর আয়োজনে ছিলেন অর্পিতা। জনশ্রুতি বলে, পুজোই নাকি মিলিয়েছিল পার্থ-অর্পিতাকে। এ বছর ‘নাকতলার কর্তা’ আর ‘পুজোর মুখ’ দু’জনের শারদীয়া কেটেছে দুই ঠিকানায়, দু’ভাবে। বার বার জামিন না চাওয়া অর্পিতা ‘অন্য রকম’ পুজো উপভোগ করতে পারলেও মুক্তি চাওয়া পার্থের পুজো কেটেছে অন্ধকারেই।

সেই হতাশা কি বৃহস্পতিবার আরও বাড়ল? গ্রেফতার হওয়ার সময় ‘পরমাত্মীয়’ বলে যাঁর নাম জানিয়েছিলেন ইডিকে, সেই দলনেত্রী কত কাছে! কিন্তু যাওয়ার উপায় নেই! সেলের চার দেওয়ালের মধ্যে বিজয়া সম্মিলনীর আলো-আনন্দ পৌঁছয় না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement