বুধবার তমলুকের প্রশাসনিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্বোধন করলেন দিঘার মেরিন ড্রাইভের। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
পুজোর আগে পর্যটকদের দিঘার মেরিন ড্রাইভ উপহার দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার পূর্ব মেদিনীপুরের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে ১৭৩ কোটি টাকার এই প্রকল্পের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘পুজোর আগে উদ্বোধন করে দিলাম। যাতে সবাই আসতে পারেন। দিঘা এখন আন্তর্জাতিক ট্যুরিস্ট স্পট।’’ সমুদ্রের ধার ঘেঁষে ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রাস্তা এক সুতোয় জুড়বে দিঘা, তাজপুর, মন্দারমণি এবং শঙ্করপুরকে।
মুম্বইয়ের মেরিন ড্রাইভের আদলে দিঘা থেকে কাঁথি পর্যন্ত এই রাস্তার পরিকল্পনা ২০১৫ সালে করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতাই। পরে অবশ্য তিনি ওই রাস্তার নাম বদলে দেন। সমুদ্রসৈকত লাগোয়া রাস্তার নাম মমতা দেন ‘দিঘা সৈকত সুন্দরী’। বুধবার তমলুকের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে সেই ‘সৈকত সুন্দরী’-র উদ্বোধনের পর মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘পুজোর ছুটিতে সবাই দেখতে পারবেন।’’
২৬ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভে থাকছে তিনটি সেতু। একটি ন্যায়কালীতে, অন্য দু’টি জলদা এবং সৌলায়। বস্তুত ১৭৩ কোটির বাজেটে ১৬৩ কোটি খরচ হয়েছে এই সেতু তিনটি তৈরি করতেই। বাকি ১০ কোটি খরচ হয়েছে রাস্তা নির্মাণে। সৈকতের সমান্তরাল ওই রাস্তা যেমন পর্যটকদের বিনোদন-ভ্রমণে আকৃষ্ট করবে, তেমনই দিঘা থেকে শঙ্করপুরের দূরত্বও কমাবে। প্রশাসনের আশা, নতুন আকর্ষণের টানে বাড়বে দিঘার পর্যটকের সংখ্যাও।
বুধবার অবশ্য শুধু মেরিন ড্রাইভ নয়, পূর্ব মেদিনীপুরের ৯৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। যার মোট অর্থমূল্য ৮৭৫ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। এ ছাড়া ৪৭টি প্রকল্পের শিলান্যাসও করেন, যার প্রস্তাবিত মূল্য ২৭৫ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা। প্রকল্পগুলির উদ্বোধন করে মমতা বলেন, ‘‘প্রায় ১০০০ কোটির প্রকল্প পেল পূর্ব মেদিনীপুর।’’ তবে একই সঙ্গে মমতা মনে করিয়ে দিয়েছেন নয়াচর ইকো হাব প্রকল্প এবং তাজপুর বন্দরের কথাও। পূর্ব মেদিনীপুরের নয়াচরে ইকো হাব এবং তাজপুর বন্দর জেলায় প্রচুর কর্মসংস্থান করবে বলে জানিয়ে মমতা বলেন, ‘‘তাজপুরে পোর্ট হবে। সেখানে অনেক কর্মসংস্থান হবে। নয়াচরে ইকো হাব হবে, সোলার পার্ক হবে। সেখানেও কাজ পাবেন অনেকে।’’ জেলাশাসককে মমতা বলেন, ‘‘তোমার এখানে অনেক কাজ হচ্ছে, ভাল ভাবে কাজ কর।’’
উল্লেখ্য, এই নয়াচরের কাজ গত ১০-১২ বছর ধরে পড়েছিল জমি নিয়ে সমস্যার কারণে। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক অবশ্য বুধবার মমতাকে জানিয়েছেন, জমি পাওয়ার কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। এমনকি কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে সেখানে। তিনি বলেন, ‘‘নয়াচরের ১০ হাজার ৬০০ একর জমিতে কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে ৭৩২৬টি পুকুর রয়েছে। সেখানে প্রায় ৮০০০ মৎস্যজীবীকে নিয়ে ৯০টি কো-অপরেটিভ কাজ শুরুও করে দিয়েছে।” শুনে মমতা বলেন, “নয়াচর আমি আগে এক বার দেখতে গিয়েছিলাম। আবার দেখা দরকার। তাজপুর প্রসঙ্গেও মমতা বলেন, তাজপুর পোর্ট বাংলার অর্থনীতির জন্য খুব ভাল হবে। ডায়মন্ড হারবার, কোলাঘাট, হলদিয়াকে কানেক্ট করবে।”