ছবি: সংগৃহীত।
রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে সংঘাতে সুর চড়িয়ে তাঁর ‘সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতার’ কথা মনে করিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যপালের পাঠানো জোড়া চিঠির জবাবে শনিবার মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে জানিয়ে দিয়েছেন, নির্বাচিত সরকারের ক্ষমতা মেনে নিতে না পারলে তাঁকেও মনোনীত পদের বদলে নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে। রাজ্যপালের কাজকর্ম সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, স্বাধীন দেশের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক ইতিহাসে কোনও মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে রাজ্যপালের এই রকম মনোভাবের নজির নেই। মুখ্যমন্ত্রীর পাঠানো এই চিঠি প্রকাশ্যে আসার পরই অবশ্য ট্যুইট করে রাজ্যপালের মন্তব্য, ‘‘এই চিঠি সারবত্তাহীন।’’
করোনা মোকাবিলা নিয়ে রাজ্য সরকারের কাজকর্ম নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে প্রশ্ন তুলছেন রাজ্যপাল। বিভিন্ন অভিযোগের উল্লেখ করে গত ২৩ ও ২৪ এপ্রিল তারিখ মুখ্যমন্ত্রীকে দু’টি চিঠি লিখেছিলেন রাজ্যপাল। তার জবাবে এ দিন ১৩ পাতার দীর্ঘ চিঠি লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই তিনি রাজ্যপাল হিসেবে ধনখড়ের ভূমিকায় তীব্র অসন্তোষ স্পষ্ট করেছেন তিনি। জোড়া চিঠিতে করোনা পরিস্থিতিতে রাজ্য প্রশাসন ও মুখ্যমন্ত্রীর কাজ নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তুলেছিলেন রাজ্যপাল। তার জবাবেই মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘রাজ্যপাল পদে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই আমার ও আমার মন্ত্রিসভার সদস্য ও আধিকারিকদের সম্পর্কে আপনি অসংযত ও অপমানজনক মন্তব্য করছেন।’
রাজ্যপালের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘাতে বারবারই তাঁকে ‘মনোনীত’ হিসেবে উল্লেখ করেছে রাজ্য সরকার। রাজ্যপালের তরফেও বারবার শাসকের যুক্তি খণ্ডন করে সরকারের ‘ত্রুটি’ সামনে আনার সাংবিধানিক দায়িত্বের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ফের সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন তাঁর চিঠিতে লিখেছেন, ‘গণতন্ত্রে সব ক্ষমতার উৎস জনগন। সেক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী-সহ জনপ্রতিনিধিরাই দায়িত্বপ্রাপ্ত।’ এই প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের একাধিক রায়ের উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বুঝিয়েছেন, সেই কর্তব্য পালনে জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকার সঙ্গে রাজ্যপালের ভূমিকা মেলে না। সেই সূত্রেই মুখ্যমন্ত্রী মনে করিয়ে দিয়েছেন, রাজ্য সরকারের কোনও কাজে অসন্তুষ্ট হলে বা অভিযোগ থাকলে রাজ্যপাল নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন। রাজ্য সরকার যদি তার পরেও তাঁর তথাকথিত ‘পরামর্শ’ না শোনে, তা হলে রাজ্যপালের হাত-পা বাঁধা।
আরও পড়ুন: গত ৪৮ ঘণ্টায় রাজ্যে করোনায় মৃত ১৫ জন, সক্রিয় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৬২৪
রাজ্যপাল হিসেবে তাঁর ভূমিকায় ক্ষোভ জানিয়েও করোনা মোকাবিলায় ধনখড়ের সহযোগিতা চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর এই চিঠির উল্লেখ করে সন্ধ্যায় ট্যুইট করে রাজ্যপালও বলেছেন, ‘‘এই মুহূর্তে বিতর্ক সরিয়ে রেখে মানুষকে দুর্দশা থেকে মুক্ত করায় মন দিতে হবে।’’
আরও পড়ুন: ভিনদেশিদের সংস্পর্শ এড়াতে প্রচার, সীমান্তে কড়া নজরদারি
রাজ্য বিজেপির নেতা মুকুল রায়, জয়প্রকাশ মজুমদার ও সায়ন্তন বসু এ দিনই রেশনে অনিয়ম ও তাঁদের দলের নেতা-কর্মীদের ত্রাণের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ জানিয়েছেন রাজ্যপালের কাছে। আর বাইরের রাজ্যে আটকে থাকা মানুষকে ফেরাতে কেন্দ্র শুধু নির্দেশিকা দিয়ে দায় না সেরে যাতে সুষ্ঠু ব্যবস্থা করে, তার জন্য কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ জানিয়ে রাজ্যপালকে চিঠি দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান ও বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)