ফাইল ছবি
‘‘নদী চুরি হয়ে গিয়েছে!’’—পশ্চিম বর্ধমানের গাড়ুই নদী দেখতে গিয়ে সম্প্রতি এমনই অভিব্যক্তি প্রকাশ্যে করেছিলেন আসানসোল পুরসভার মেয়র তৃণমূলের বিধান উপাধ্যায়। সে জেলায় গিয়ে সরকারি জমির ‘অবৈধ’ কারবার বন্ধে ফের কড়া বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার আসানসোলে দলীয় কর্মী সম্মেলনে যোগ দিয়ে তিনি বলেন, “শুনছি, বহু সরকারি জমি একে-তাকে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সরকারি জমি যদি কেউ কাউকে দিয়ে থাকে, তা হলে সরকার আইন অনুযায়ী, পদক্ষেপ করবে।”
ঘটনাচক্রে, সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কাজকর্ম নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানিয়েছিলেন। বিষয়টি এমনই গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছয় যে, হস্তক্ষেপ করতে হয় রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকেও। ব্লক থেকে জেলা স্তর পর্যন্ত ভূমি দফতরের কার্যালয়গুলিতে পরিষেবা নিশ্চিত করতে নজরদার কমিটি গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। মমতার এ দিনের মন্তব্য সে ঘটনাক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
পশ্চিম বর্ধমানেও সাম্প্রতিক সময়ে একের পরে এক সরকারি জমি জবরদখলের অভিযোগ রয়েছে। কুলটি জলপ্রকল্প, বারাবনিতে সরকারি জমি দখলের অভিযোগ উঠেছিল। সেগুলি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। তার পরেও সরকারি জমি দখল করে আসানসোলের গাড়ুই গ্রামে লাগোয়া এলাকায় রাস্তা তৈরি, ডিসেরগড় রোড এলাকায় ইটভাটা তৈরি, সেন-র্যা লে রোডের পাশে নির্মাণকাজ চালানোর মতো অভিযোগ রয়েছে। গাড়ুই নদীর গতিপথে বেআইনি নির্মাণের অভিযোগও আছে।
কিন্তু কাদের প্রশ্রয়ে এই জমি-দখল চলে, তা নিয়ে বেধেছে রাজনৈতিক তরজা। বিজেপির আসানসোল সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি সুব্রত মিশ্র, সিপিএম নেতা পার্থ মুখোপাধ্যায়দের অভিযোগ, “সবাই জানেন, জমির অবৈধ কারবারের নেপথ্যে হাত রয়েছে তৃণমূলেরই লোকজনের। মুখ্যমন্ত্রী যা-ই বলুন , বাস্তবে কাজের কাজ কতটা হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।” আসানসোলের মেয়রের পাল্টা দাবি, “ভিত্তিহীন অভিযোগ। আমাদের রাজ্যে জমি দখলের সংস্কৃতি যে কড়া হাতে দমন করা হয়, সেটাই মনে করিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।”
অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) সন্দীপ টুডুর প্রতিক্রিয়া, “আমরা অভিযোগ পেলেই তদন্ত করে ব্যবস্থা নিই। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো, আরও কড়া পদক্ষেপ করা হবে।”