Mamata Banerjee

সভাপতির অধীনেই কাজ করতে নির্দেশ

পুরভোটের মুখে তাঁর এই বার্তা তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:৪৮
Share:

বার্তা: বাঁকুড়ার সতীঘাটের সভার মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

নিচুতলার তৃণমূল কর্মীরা চেয়েছিলেন, জেলা সংগঠনের রশি কষে ধরুন দলনেত্রী। মঙ্গলবার বাঁকুড়ায় এসে কার্যত কড়া বার্তাই দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানালেন, জেলা সভাপতিকেই মানতে হবে সবাইকে। পুরভোটের মুখে তাঁর এই বার্তা তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।

Advertisement

এ দিন বাঁকুড়ার সতীঘাটের সভায় তিনি বলেন, ‘‘শুভাশিস বটব্যালকে আমি সারা জেলার দায়িত্ব দিয়েছি। তার অধীনেই সবাইকে কাজ করতে হবে। যদি কেউ মনে করে ‘আমি করব না, মানব না’, তার দল করার প্রয়োজন নেই। আমি ‘এ’ কিংবা আমি ‘জ়েড’— দেখবার দরকার নেই। কেউ ছোট, কেউ বড় নয়। এক জনের অধীনে কাজ করতে হবে। বাড়িতে যেমন মা গার্জেন, স্কুলে যেমন হেড মাস্টার বা হেড মিস্ট্রেস গার্জেন, কারখানায় যেমন যে চিফ থাকে সে গার্জেন, কাগজে যেমন এডিটর গার্জেন, তেমনই পার্টিতে মনে রাখবেন দল যাকে দায়িত্ব দেবে, সেই দলের গার্জেন। তাকে ভাল করে কাজ করতে হবে।’’

লোকসভা ভোটে জেলার দু’টি কেন্দ্রই হাতছাড়া হয় তৃণমূলের। তারপরেই দলনেত্রী জেলা সংগঠনের ফাঁকফোকর মেরামত করতে রাজ্যের মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে বাঁকুড়ায় দলের পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেন। জেলাকে সাংগঠনিক ভাবে দু’ভাগ করে শুভাশিসবাবু ও জেলার মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরাকে সভাপতি করা হয়। সম্প্রতি সমগ্র জেলার সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় শুভাশিসবাবুকে। শ্যামলবাবু কার্যকরী সভাপতি হন।

Advertisement

দলের অন্দরের খবর, শুভাশিসবাবুর এই উত্থান জেলা নেতাদের কেউ কেউ সহজ ভাবে নিতে পারছেন না। আড়ালে অনেকে এ নিয়ে কথাও বলছেন। তার উপরে আগে থেকেই শুভাশিসবাবুর সঙ্গে নেতাদের একাংশের মনোমালিন্যও ছিল বলে শোনা যায়। লোকসভা ভোটে ধাক্কার পরে জেলা তৃণমূলে একটা ঐক্যবদ্ধ চিত্র প্রকাশ্যে এলেও ভিতরে ভিতরে উল্টো স্রোত ক্ষীণ হলেও বইছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, তা রুখতেই এ দিন কড়া বার্তা দেন নেত্রী।

শুভাশিসবাবু বলেন, ‘‘তৃণমূলস্তর পর্যন্ত দলের ঐক্যবদ্ধ থাকাটা খুবই জরুরি। এ ছাড়া সাফল্য মিলতেই পারে না। দলনেত্রী নতুন করে সেই নির্দেশ মনে করিয়ে দিয়েছেন।’’

এই জেলায় ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোট থেকে গত বছরের লোকসভা ভোটে তৃণমূলের ফলাফল ক্রমশ খারাপ হয়েছে। সে জন্য দলীয় অন্তর্তদন্তে বার বার গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা সামনে এসেছে। কর্মীদের আক্ষেপ, বার বার রাজ্য নেতৃত্বের কাছে এ নিয়ে কড়া পদক্ষেপের কথা বলা হলেও শুধু আলোচনাই চলেছে। দ্বন্দ্ব থামেনি। সেই সুযোগেই সংগঠন গুছিয়েছে বিজেপি।

নেত্রী এ দিন বুথস্তরের কর্মীদের গুরুত্ব বোঝাতে তাঁদের দলের সম্পদ বলে উল্লেখ করেছেন। সেই সঙ্গে নেতা-কর্মীদের মনে করিয়ে দিয়েছেন, লোকজন ফোন করলে যেন তাঁরা তা ধরেন। মমতার কথায়, ‘‘অনেক সময়ে মানুষ বিপদে পড়ে। অনেক সময়ে আমরা ফোন ধরি না। কিন্তু মানুষ বিপদে পড়লে যেন আপনাকে পায়, এটা নজরে রাখতে হবে।’’

রাজ্যপাট সামলানোর মধ্যেও তিনি যে রাতবিরেতে ফোন ধরেন, তা জানিয়ে বলেন, ‘‘রাত একটা, তিনটেও ফোন দেখি। আমি যদি এত করেও এই কাজটা করতে পারি, প্রতিদিন গাদাগাদা উত্তর দিতে পারি, তা হলে আপনারা কেন পারবেন না? নিশ্চই পারবেন।’’

সম্প্রতি কিছু ঘটনায় কোতুলপুরের ব্লক তৃণমূল সভাপতি প্রবীর গড়াই ও কোতুলপুর কেন্দ্রের বিধায়ক শ্যামল সাঁতরার মনোমালিন্যের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। মমতার এ দিনের বার্তার পরে প্রবীরবাবুর দাবি, ‘‘নেত্রী যা নির্দেশ দিয়েছেন, আমি তা অবশ্যই মেনে চলব। তবে অন্যেরাও যাতে তা মানেন, সেটাও দেখা দরকার।’’ আর শ্যামলবাবু বলছেন, ‘‘নেত্রীর নির্দেশের পরে আর অন্য কোনও কথা হতেই পারে না। বরাবর তাঁর নির্দেশ মেনে এসেছি। আগামী দিনে আরও ভাল ভাবে মানব। জনসংযোগ চালিয়ে যাব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement