(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অধীর চৌধুরী (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
শুক্রবার ২১ জুলাইয়ের সমাবেশে কংগ্রেসকে কোনও আক্রমণ করেননি তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই সে দিন পর্যন্তও বাম-কংগ্রেস-বিজেপিকে এক বন্ধনীতে ফেলে যে যে বিশেষণ ব্যবহার করতেন, বেঙ্গালুরুর বৈঠকের পরে তা করেননি মমতা। অর্থাৎ, তিনি কংগ্রেসকে আক্রমণ না-করে বার্তা দিয়েছেন যে, তাঁর অগ্রাধিকার এখন ‘ইন্ডিয়া’। পশ্চিমবঙ্গের স্থানীয় রাজনীতি নয়।
তৃণমূল নেত্রীর এই ‘কৌশলে’ কি ‘চাপ’ বাড়ল প্রদেশ কংগ্রেসের উপর? অনেকেই কৌতূহলী, মমতা যদি এ রাজ্যে কংগ্রেসকে আক্রমণই না করেন, তা হলে অধীর চৌধুরীরা কী করে তাঁকে পাল্টা রাজনৈতিক আক্রমণ করবেন! মমতা শুক্রবারের বক্তৃতায় যেমন কংগ্রেসকে আক্রমণ করেননি, তেমনই সিপিএম সম্পর্কেও ‘নরম’ থেকেছেন। মমতার বক্তৃতা থেকে স্পষ্ট যে, তিনি বিজেপির বিরোধী জোট নিয়ে ‘ইতিবাচক’ ভূমিকাই নিতে চাইছেন। সে কারণেই কংগ্রেসকে আক্রমণ করেননি। সিপিএমকে করলেও তাতে সেই ‘ঝাঁজ’ রাখেননি।
প্রকাশ্যে কিছু না বললেও ঘরোয়া আলোচনায় রাজ্য কংগ্রেসের অনেক নেতাই স্বীকার করে নিচ্ছেন, তৃণমূলের এই ‘কৌশল’ তাঁদের জন্য কিছুটা ‘অস্বস্তি’র। তৃণমূল রাজনৈতিক ভাবে আক্রমণ না করলে কংগ্রেস কী করে তাদের বা মমতাকে পাল্টা আক্রমণ করবে? আগ বাড়িয়ে তা করতে গেলে বিজেপি-বিরোধী পরিসরেও মানুষের কাছে ‘সঠিক বার্তা’ যাবে না। যদিও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি এই বিষয়টিকে ‘চাপ’ হিসাবে মানতে চাননি। বহরমপুরের সাংসদ তথা লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা বলেন, ‘‘আমরা তো রোজ তৃণমূলের কাছে শারীরিক ভাবে আক্রান্ত হচ্ছি। উনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) মৌখিক আক্রমণ করলেন কি করলেন না, তাতে কী এসে গেল!’’ বরং অধীরের ব্যাখ্যা, ‘‘কংগ্রেসের নামে কিছু বললে লোকে ছ্যা-ছ্যা করবে! সেটা বুঝতে পেরেই ওই পথে হাঁটেননি তৃণমূল নেত্রী।’’ মুর্শিদাবাদের ‘অধীর-ঘনিষ্ঠ’ কংগ্রেস নেতা মনোজ চক্রবর্তীও কটাক্ষে ‘ঝাঁজ’ দেখিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘মমতা এক সময়ে কংগ্রেসকে পচা ডোবা বলেছিলেন। এখন সেই ডোবাতেই তাঁকে নামতে হয়েছে!’’
বেঙ্গালুরুর বৈঠকের পর দেখা গিয়েছিল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে বয়াম থেকে বাদাম ঢেলে দিচ্ছেন কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী। বৈঠক শেষের সাংবাদিক সম্মেলনে রাহুলকে ‘আওয়ার ফেভারিট’ (আমাদের প্রিয়) বলে সম্বোধন করেছিলেন মমতা। যা দু’জনের মধ্যে দীর্ঘ দূরত্ব ঘুচে যাওয়ার লক্ষণ হিসাবেই দেখা হচ্ছিল। কারণ, এর আগে নাম না করে রাহুলকে ‘বসন্তের কোকিল’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন মমতা। গত পাঁচ-সাত বছরের ২১ জুলাইয়ের সভায় তৃণমূল নেত্রী নিয়ম করে বিজেপি-সিপিএম-কংগ্রেসকে আক্রমণ করেছেন। সম্প্রতিও তিনটি দলকে ‘জগাই, মাধাই, গদাই। দুই দিকে দুই কলাগাছ মধ্যিখানে মহারাজ’ বলেও আক্রমণ করেছেন। কিন্তু শুক্রবার সে সব পথে হাঁটেননি মমতা। কংগ্রেস নিয়ে কিছু বলেননি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এখন দেখার, মমতা ‘সাদা পতাকা’ তোলার পরেও কংগ্রেস তাঁকে আক্রমণ করে কি না। করলে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড বিষয়টি সম্পর্কে কী পদক্ষেপ করে।