মমতা জানিয়ে দেন, তিনি যেহেতু সেই দলেরই নির্বাচনে জেতা সরকার, তাই তিনি ডাবল ডিউটি করছেন। ছবি: পিটিআই।
সরকারে তিনি ১২ বছর। আর দলের সঙ্গে তাঁর ২৫ বছরের সম্পর্ক। বুধবার যখন বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোন পরিচয়ে ধর্না মঞ্চে বসেছেন? তখন সেই পুরনো সম্পর্কেরই ইঙ্গিত টেনে জবাব দিলেন মমতা। তৃণমূল নেত্রী বললেন, ‘‘আমার দল ক্ষমতায় আছে। তার মানে মানুষের কাছে আমাদের দলের দায়বদ্ধতা আছে। সরকারের থেকেও আমার সৃষ্টি করা দল আমার কাছে অনেক বড়...।’’
কেন দল তাঁর কাছে বড় তার অবশ্য ব্যাখ্যাও দিয়েছেন মমতা। ধর্না মঞ্চে তিনি এ-ও বলেছেন যে, ‘‘... (দল) আমার গর্ব। এই মাটিতে এই দল তৈরি করেছেন আপনারা সরকার তৈরি করার জন্য।’’
সকালেও অবশ্য ওই একই প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলেন মমতা। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রেড রোডের ধর্নায় মুখ্যমন্ত্রী হিসাবেই উপস্থিত থাকার কথা এর আগে ঘোষণা করেছিলেন মমতা। কিন্তু বুধবার দেখা যায় মমতার ধর্না মঞ্চে রয়েছে তৃণমূলের প্রতীক। সঙ্গে সঙ্গে বিরোধীরা সরব হয়। প্রশ্ন ওঠে মমতা যখন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ধর্নায় বসছেন, তখন তাঁর মঞ্চে তৃণমূলের লোগো কেন? বরং বাংলার সরকারের বিশ্ব বাংলার প্রতীক থাকলে মানা যেত।
সকালে মঞ্চে প্রশ্নটি শুনে উত্তর দেন মমতা। বস্তুত, সেটাই ছিল ধর্না মঞ্চ থেকে জনতার উদ্দেশে বলা প্রথম কথা। মমতা বলেছিলেন, ‘‘আমি বিজেপির মতো সরকারি অর্থ অপচয় করা পছন্দ করি না। তাই এই অনুষ্ঠানটি দলেরই।’’ তবে একই সঙ্গে মমতা জানিয়ে দেন, তিনি যেহেতু সেই দলেরই নির্বাচনে জেতা সরকার, তাই তিনি ডাবল ডিউটি করছেন। অনুষ্ঠানের মঞ্চে তিনি যেমন দলের প্রতিভূ হিসাবে রয়েছেন, তেমনই সরকারের প্রতিনিধি হিসাবেও রয়েছেন। রাতেও মমতা সেই একই কথা আরও সবিস্তারে বললেন। তবে সেই সঙ্গে দলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথাও আরও জোর দিয়ে মেলে ধরলেন। বললেন, ‘‘তোমরা ডাবল ইঞ্জিন বল কথায় কথায়, আমার ডাবল পোর্টফোলিও আছে আমি কী করব। মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে এনেছে তাই আমি আমার রাজ্যের নেতৃত্ব দিচ্ছি।’’ একই সঙ্গে কেন্দ্রের আর্থিক বঞ্চনার প্রসঙ্গ টেনে মমতা বলেন, ‘‘যারা দিন আনে দিন খায় তাদের টাকা আটকে দেওয়া হয়েছে। তাদের হয়ে এক বার নয়, এক কোটি বার ধর্নায় বসব। আমার দল ক্ষমতায় আছে। তার মানে মানুষের কাছে আমাদের দায়বদ্ধতা আছে।’’
আসলে মমতা বলতে চেয়েছেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তিনি হয়েছেন দলের জন্যই। আর যেহেতু দলকে বেছে নিয়েছেন মানুষ তাই তিনি দলনেত্রী হিসাবেও ভোটদাতাদের কাছে দায়বদ্ধ। তাই পদ তাঁর দু’টি হলেও দায়বদ্ধতা কেউ কারও থেকে খাটো নয়।
এই প্রসঙ্গেই তাঁর ধর্নায় বসা নিয়ে প্রশ্ন তোলা বিরোধীদের পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে মমতা বলেছেন, ‘‘আমি নাকি ধর্নায় বসতে পারি না। আমাকে ওরা সংবিধান শেখাতে এসেছে! আমি তো আগেও বসেছি ধর্নায়। যখন রাজীব কুমারকে ওরা (সিবিআই) নিয়ে গেল। আবার জয়ললিতাও তো ধর্নায় বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন।’’ এর পরে অবশ্য প্রসঙ্গান্তরে চলে গিয়েছেন মমতা। কিন্তু সরাসরি না বলেও প্রশ্ন রেখে গিয়েছেন বিরোধীদের সামনে।