মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।
বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চ থেকে কেন্দ্রীয় এজেন্সির ভূমিকা নিয়ে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেশের প্রথম সারির শিল্পপতি ও বিদেশি অতিথিদের সামনে মমতা সরাসরি বলেন, ‘‘আমাদের শিল্প দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে কেন? কেন এজেন্সি দিয়ে শিল্পতিদের গলা টিপে ধরা হচ্ছে? কেন তাঁদের সারা ক্ষণ ভয়ের মধ্যে থাকতে হচ্ছে?’’
কর ব্যবস্থা নিয়েও কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সরব হন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘সরকার তো কর নেবেই। এতে তো কোনও বাধা নেই। কিন্তু অতিরিক্ত কর বাড়তি চাপ তৈরি করছে।’’ নরেন্দ্র মোদী সরকারে আসার পরেই পণ্য করে সংস্কার করেছিলেন। ‘এক দেশ, এক পণ্য কর’ নীতিতে জিএসটি (গুডস অ্যান্ড সার্ভিস ট্যাক্স) বলবৎ হয়েছে। যদিও সেই কর কাঠামো অনুযায়ী রাজ্যের যে অংশ পাওনা থাকে তা সব রাজ্য সমান ভাবে পাচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। বিশেষত, অবিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী বলে দাবি বিভিন্ন রাজ্য সরকারের। তাতে বাংলাও রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মঙ্গলবারে বাণিজ্য সম্মেলনের সূচনা অনুষ্ঠানের ভাষণেও কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। বুধবার তিনি সরাসরি অভিযোগ করলেন, শিল্পপতিরা দেশ ছেড়ে বিদেশে গিয়ে বিনিয়োগ করছেন তার অন্যতম কারণ, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ভূমিকা।
প্রসঙ্গত, ইডি, সিবিআই তো বটেই, আয়কর হানাও গত কয়েক বছরে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। মঙ্গলবার যখন বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের সূচনা হচ্ছে নিউটাউনের বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারে তখন হুগলির পোলবায় একটি মদের কারখানায় হানা দিয়েছিল আয়কর কর্তাদের একটি দল। দিনভর সেখানে তল্লাশি চলে। অনেকের মতে, মুখ্যমন্ত্রী বোঝাতে চেয়েছেন, ছোট, মাঝারি শিল্পপতিদের মধ্যে ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। যে কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে এজেন্সিগুলিকে।
মমতা বুধবার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেছেন তাঁর বক্তৃতায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘গণতন্ত্রে কেন্দ্রে একটা দল সরকার চালাবে, রাজ্যে অন্য দল চালাবে। কিন্তু তারা উভয়েই কাজ করবে মানুষের জন্য।’’ সরাসরি না বললেও মমতা বুঝিয়ে দেন, গণতন্ত্রের সেই ধ্রুপদী ধারণাই আসলে ধাক্কা খাচ্ছে।
মঙ্গলবারও কেন্দ্রের ‘বঞ্চনা’ নিয়ে সমালোচনায় মুখর হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেছিলেন, ‘‘রাজ্য কর নিতে পারে না। কেন্দ্র আদায় করে বাংলাকে দেয়। আমাকে দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, আমরা নিজেদের অংশ পাচ্ছি না। ১০০ দিনের কাজের টাকাও পাচ্ছি না। শ্রমিকেরা বেতন পাচ্ছেন না।’’ এই রাজ্যে শিল্পের পরিবেশ নিয়ে বলার শুরুতে একই ভাবে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি-সহ অন্যান্য বিরোধী দলকে নিশানা করেন মমতা। তবে এ ক্ষেত্রে তিনি কোনও দলের নাম নেননি। বক্তৃতার শুরুতেই মমতা বলেন, ‘‘কিছু রাজনৈতিক দল রাজ্যের বদনাম করার জন্য শুধু এটাই বলতে থাকে যে, বাংলায় শুধু রাজনৈতিক সন্ত্রাস হয়। কিন্তু সেটা সত্যি নয়।’’ বুধবার বাংলার ভৌগলিক অবস্থান, উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির সঙ্গে যোগাযোগ, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটানের সীমান্ত প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শিল্পপতিদের উদ্দেশে বিনিয়োগের আবেদন জানিয়েছেন।