(বাঁ দিকে) নরেন্দ্র মোদী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
গত ২০১৬ সালে নোটবন্দির পর থেকেই কেন্দ্রীয় সরকার মুদ্রাহীন (ক্যাশলেস) অর্থনীতির উপরে জোর দিয়েছে। বুধবার, বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের (বিজিবিএস) সমাপ্তি অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে সরাসরি সেই অভিমুখকে নিশানা করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সপ্তম বাণিজ্য সম্মেলনের সমাপ্তি অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘মুদ্রাহীন অর্থনীতি (ক্যাশলেস ইকনমি) কখনও কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারে না। কত জন আর ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন? আমি তো করি না!’’ মমতার বক্তব্যে স্পষ্ট যে, তিনি সরাসরি মোদী সরকারের অর্থনৈতিক অভিমুখকে নিশানা করছেন।
মমতা স্পষ্টই বুঝিয়ে দেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে (এমএসএমই) যদি তরান্বিত করতে হয়, তার বিস্তার ঘটাতে হয়, তা হলে তা মুদ্রাহীন অর্থনীতি দিয়ে করা যাবে না। হলে তা ওই প্রয়াস ধাক্কা খাবে। স্বাভাবিক গতি হারাবে। সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী এ-ও বলেন, ‘‘আমরা ডিজিটাইজ়েনের বিরুদ্ধে নই। শিক্ষা, ইতিহাস, অন্যান্য বিষয় ডিজিটাইজ় হোক। কিন্তু অর্থনীতিকে মুদ্রাহীন করে দেওয়া ঠিক নয়।’’ প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় সরকার গত কয়েক বছর ধরেই ডিজিটাল অর্থনীতির উপরে জোর দিয়েছে। গুগল পে, ফোন পে, পেটিএম— টাকা লেনদেনের এই ধরনের ডিজিটাল মাধ্যমে ব্যবহারকারীও বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। শুধু তা-ই নয়, কেন্দ্রীয় সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝানোর জন্য এখন কেন্দ্রীয় বাজেটও হয়ে গিয়েছে ‘কাগজহীন’। গত কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন আর লাল শালুতে মোড়া ‘বহি-খাতা’ নিয়ে সংসদে ঢুকছেন না। বদলে তাঁর হাতে থাকছে ট্যাব। অর্থাৎ, আধুনিক পঠনপাঠনের যুগোপযোগী মাধ্যম।
এ বারের বাণিজ্য সম্মেলনে এমএসএমই-ই ছিল অন্যতম গুরুত্বের জায়গা। বাংলায় সেই ক্ষেত্রের অগ্রগতি নিয়ে শ্লাঘার সুর শোনা যায় মমতার গলায়। মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করেই বলেন, ‘‘স্মল মানে বিউটিফুল। নামে স্মল মানে তাঁদের স্মল ভাববেন না। গ্রামে গিয়ে দেখে আসুন, কত মহিলা এমএসএমই-তে কাজ করছেন। তাঁরা জোড়া দায়িত্ব পালন করছেন। এক দিকে সংসারের কাজ সামলাচ্ছেন। আবার নিজেরা উপার্জনের পাশাপাশি সাহায্যও করছেন।’’ মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, বাংলার গ্রামে-শহরে যে সৃজনশীলতা রয়েছে সেটাই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। এটাই আমাদের তৃতীয় চক্ষু। যদি মিশন থাকে, তা হলেই ভিশন থাকে।’’ শিল্পপতিদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান, ‘‘সবাইকে বলুন, বাংলায় চলুন! বাংলাই এখন বিনিয়োগের একমাত্র গন্তব্য।’’