নিহত যুবক ভিকি যাদব। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের পর থেকে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে ঠিক কতগুলি খুনের ঘটনা ঘটেছে? উত্তর দিতে গেলে হয়তো পুলিশ কমিশনারেটের অনেক বড় কর্তাকেও লম্বা তালিকা নিয়ে বসতে হবে। সেই মহল্লাতেই মঙ্গলবার আরও একটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। ন’টি গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে মৃত্যু হয়েছে ভিকি যাদব নামের ৩৫ বছর বয়সি যুবকের। যিনি এলাকায় ‘তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ’ হিসেবেই পরিচিত। তৃণমূল ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ভিকির বাবাও খুন হয়েছিলেন কয়েক বছর আগে। কাকার মৃত্যু হয়েছিল ‘পুলিশি এনকাউন্টারে’।
ভিকির বাবা ছিলেন এক পুলিশকর্মী খুনের মামলার অন্যতম আসামী। পরে তিনিও খুন হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর কাকার বিরুদ্ধেও অনেক মামলা ছিল। তাঁর মৃত্যু হয়েছিল এনকাউন্টারে। শাসকদলের নেতারা প্রকাশ্যে এ নিয়ে কিছু না বললেও, ঘরোয়া আলোচনায় স্পষ্টই বলছেন, দলের কর্মী হলেও, ভিকি আসলে সমাজবিরোধী বৃত্তেই বড় হয়েছেন। সেই অংশের সঙ্গে তাঁর মেলামেশাও ছিল নিবিড়। ২০২১ সালের ২ মে ছিল বিধানসভা ভোটের ফলপ্রকাশ। ওই দিন আকাশ যাদব নামের এক যুবক খুন হয়েছিলেন জগদ্দলে। জানা গিয়েছে, সেই মামলায় নাম ছিল মঙ্গলবার খুন হওয়া ভিকির।
বিজেপির টিকিটে জেতার পর তৃণমূলে যোগ দেওয়া ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংহ অবশ্য এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘দলের কর্মী ছিলেন ভিকি। কী কারণে খুন, তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।’’ এই খুন কি রাজনৈতিক? শিল্পাঞ্চলে শাসকদলের নেতাদের অনেকেই ঘনিষ্ঠ আলোচনায় বলছেন, রাজনৈতিক কারণের থেকে ব্যক্তিগত আক্রোশকেই বড় কারণ বলে মনে করছেন তাঁরা। এক নেতা ঘনিষ্ঠ বৃত্তের আলোচনায় বলেন, ‘‘কতখানি রাগ থাকলে ১১ রাউন্ড গুলি চালাতে পারে ভাবুন তো!’’
মঙ্গলবার বাড়ির উঠোনে গরুকে বিচালি খাওয়াচ্ছিলেন ভিকি। সেই সময় একটি বাইকে করে তাঁর বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায় তিন জন। জিজ্ঞাসা করা হয়, ভিকি কার নাম? ভিকি নিজের পরিচয় বলার সঙ্গে সঙ্গেই এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে তারা। বাড়ির দরজার সামনে রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়েন ওই যুবক। পরিবারের দাবি, ভিকির সারা শরীরে মোট ন’টি গুলি লেগেছে। সব মিলিয়ে মোট ১১ রাউন্ড গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। রক্তাক্ত অবস্থায় প্রথমে ভাটপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল ভিকিকে। কিন্তু শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁকে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। রাস্তাতেই মৃত্যু হয় তাঁর।