Mamata Banerjee

Mamata Banerjee: ‘কেউ একজন’ তো গোয়া করছে, দলনেত্রী মমতা এড়িয়ে গেলেন অভিষেকের নাম

এই ‘কেউ একজন’ নিয়েই গোল বেধেছে তৃণমূলের অন্দরে। কারণ, দলের তরফে অভিষেকই গোয়ায় বিধানসভা নির্বাচনের বিষয়টি ‘দেখভাল’ করছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৯:০৪
Share:

—ফাইল চিত্র।

দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম এড়িয়ে গেলেন তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যা সাম্প্রতিক অতীতে হয়েছে বলে কেউ মনে করতে পারছেন না। বস্তুত, মমতা যে ভাবে অভিষেকের নাম এড়িয়ে গিয়েছেন, তাতে তৃণমূলের অন্দরে দু’পক্ষের দূরত্ববৃদ্ধির জল্পনাই আরও জলবাতাস পাচ্ছে বলে দলের একাংশের অনুমান।

Advertisement

তবে পাশাপাশিই ওই অংশের বক্তব্য, অভিষেক-মমতা সম্পর্ক নিয়ে কোনও জল্পনা বা সংশয়ের অবকাশ নেই। অভিষেক তাঁর বক্তব্য দলীয় মঞ্চে সবসময়েই বলেন। মমতার সঙ্গে তাঁর বিভিন্ন বিষয়ে মতান্তর হয় বলে অভিষেক নিজেও জানিয়েছেন। তবে দলের নেত্রী যে মমতাই এবং তাঁর নির্দেশেই যে দল চলবে, তা-ও অভিষেক মানেন। দলের প্রবীণ নেতাদের একাংশের বক্তব্য, অভিষেক কখনও কখনও তাঁর ‘আর্জি’ খানিক উচ্চকিত ভাবে জানান। কিন্তু তাতে দু’জনের মধ্যে সমীকরণ পাল্টে যাওয়ার প্রশ্ন ওঠে না।

সোমবার বিকেলে মমতা উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা ভোটে প্রচারের জন্য লখনউ গিয়েছেন। কলকাতা ছাড়ার সময় তাঁকে বিমানবন্দরে প্রশ্ন করা হয়, তিনি ভোট হচ্ছে পাঁচটি রাজ্যে। তিনি উত্তরপ্রদেশ যাচ্ছেন। পঞ্জাব যাওয়া নিয়েও উৎসাহ দেখিয়েছেন। যদিও দু’টি রাজ্যের বিধানসভা ভোটে লড়ছে না তৃণমূল। তবে লোকসভায় দু’টি রাজ্যেই তৃণমূল প্রার্থী দেবে বলে মমতা জানিয়েছেন। মমতার কথায়, ‘‘পঞ্জাবকে আমি খুবই পছন্দ করি। ওখানে আমি যাব। স্বর্ণমন্দিরেও যাব। যখন পঞ্জাব জ্বলছিল, তখন আমি পুরো পঞ্জাব ঘুরেছিলাম।’’

Advertisement

এর পরেই মমতা বলেন, ‘‘আর গোয়া নিয়ে প্রশ্ন করছিলেন তো? গোয়া সামবডি ইজ ডুয়িং! সো আই অ্যাম নট। আই অ্যাম গোয়িং টু আদার প্লেসেস। ফর গ্রেটার ইন্টারেস্ট।’’ অর্থাৎ, গোয়া ‘কেউ একজন’ করছে। তাই মমতা সেখানে যাচ্ছেন না। তিনি বৃহত্তর স্বার্থে অন্য রাজ্যে যাচ্ছেন।

এই ‘কেউ একজন’ নিয়েই গোল বেধেছে তৃণমূলের অন্দরে। কারণ, দলের তরফে অভিষেকই গোয়ায় বিধানসভা নির্বাচনের বিষয়টি ‘দেখভাল’ করছেন। মূলত তিনিই গোয়া সফরে যাচ্ছেন। তাঁর অনুমোদন সাপেক্ষেই গোয়ায় দলের প্রার্থিতালিকা প্রকাশিত হয়েছে। তবে ঘটনাচক্রে, রবিবার অভিষেকের গোয়া যাওয়ার কথা থাকলেও তিনি যাননি। যাননি সোমবারেও। মঙ্গলবার বিকেলে গোয়া যেতে পারেন অভিষেক, এমনটাই বক্তব্য তাঁর ঘনিষ্ঠমহলের। তবে তৃণমূলের অন্দরে অভিষেক এবং গোয়া যে সমার্থক, তা নিয়ে কোনও সংশয়ের অবকাশ নেই। ফলে মমতা গোয়ার প্রসঙ্গে অভিষেকের নাম না-করায় দলের নেতাদের একাংশ জল্পনা শুরু করেছে। প্রসঙ্গত, মমতা কিন্তু এর আগে গোয়ায় প্রচারে গিয়েছিলেন। কিন্তু এই দফায় তিনি অনেক বেশি মনোনিবেশ করেছেন উত্তরপ্রদেশ এবং পঞ্জাবে।

দলের অন্দরে অভিষেক যখন ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতি নিয়ে সক্রিয় হয়েছেন, তখন থেকেই তৃণমূলের অন্দরে চোরাস্রোত তৈরি হয়েছে। ওই নীতির পক্ষে-বিপক্ষে মতামত তৈরি হয়েছে। দলের প্রবীণ নেতাদের একাংশ খোলাখুলিই মতপ্রকাশ করতে শুরু করেছেন। খানিক বিড়ম্বনা তৈরি হয়েছে বিজেপি থেকে বিভিন্ন নেতাকে দলে ফেরানো নিয়েও।

অভিষেক যেমন স্পষ্টই বলেছেন, তিনি বিপদের সময় দল ছেড়ে বিজেপি’তে চলে-যাওয়া নেতাদের ফেরানোর বিপক্ষে। তাঁর কথায়, ‘‘যাঁরা চলে গিয়েছিলেন, তাঁদের দলে ফিরতে হলে প্রায়শ্চিত্ত করে ফিরতে হবে। অন্তত আমি যতদিন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের পদে আছি, ততদিন সাধারণ কর্মীদের উপর ওই নেতাদের ছড়ি ঘোরাতে দেব না। এই কথা আমি দলের ভিতরে বলেছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলেছি। পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত হক্সীদেরও বলেছি। আমি স্পষ্ট কথা বলি।’’

অভিষেকের ওই বক্তব্যে ব্যাপক সমর্থন জানিয়েছে দলের যুব এবং তরুণ অংশ। কিন্তু দলের অন্দরে জল্পনাও তৈরি হয়েছে। বস্তুত, অভিষেক যে ভাবে বলেছেন, রাজনীতিতে কাজের জন্য ৬০-৬৫ বছরের ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়া উচিত, তাতেও দলের প্রবীণ নেতারা অশনিসঙ্কেত দেখেছেন। তাঁদের বক্তব্য, এ বিষয়গুলি নিয়ে দলের ভিতরে আলাপ-আলোচনা শুরু হলে দলে নবীন-প্রবীণ আলোচনাও শুরু হবে। পাশাপাশিই, দলের বর্ষীয়ান এবং প্রবীণ নেতাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়েও খানিক সংশয় দেখা দিতে পারে। সেই কারণেই দলের দুই স্তম্ভের পারস্পরিক সমীকরণের দিকে তাকিয়ে আছে গোটা তৃণমূল। এই আবহে মমতা অভিষেকের নাম না-নেওয়ায় পুরো বিষয়টি আরও ‘তাৎপর্য’ পেয়ে গিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement