ঘোড়ার প্রসঙ্গ টেনে মমতা যে রাজ্যপালকেই আক্রমণ করেছেন, তা স্পষ্ট।
নাম না করে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালকে ‘ঘোড়ার পাল’ বলে কটাক্ষ করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যা নবান্ন-রাজভবন সাম্প্রতিক সঙ্ঘাতে নতুন মাত্রা যোগ করল।
জগদীপ ধনখড় বাংলার রাজ্যপাল হয়ে আসার পর থেকেই রাজ্য সরকারের সঙ্গে তাঁর সঙ্ঘাত নিয়মিত হয়ে উঠেছে। তা চরমে পৌঁছয় দু’দিন আগে, যখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা তাঁর টুইটারে রাজ্যপালকে ‘ব্লক’ করে দেন। প্রকাশ্যে ওই কাজের জন্য ‘ক্ষমা’ চেয়ে নিয়েও মমতা জানান, রোজ সকাল থেকে রাজ্যপাল বিভিন্ন বিষয়ে তাঁকে ‘ট্যাগ’ করে বক্রোক্তি করছিলেন। কৈফিয়ত চাইছিলেন। বাধ্য হয়েই তিনি রাজ্যপালকে ‘ব্লক’ করেছেন।
তার আগে এবং পরে দলগত ভাবে তৃণমূলের তরফে রাজ্যপাল ধনখড়কে সরানোর দাবি তোলা হচ্ছিল জাতীয় স্তরে। দলের দুই সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সৌগত রায় পর্যায়ক্রমে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে ওই দাবি তুলেছেন।
বুধবার তৃণমূলের সাংগঠনিক নির্বাচনের মঞ্চ থেকে রাজ্যপালের নাম না করে মমতা বলেন, ‘‘দিল্লি থেকে একট ঘোড়ার পাল পাঠিয়েছে রাজ্য শাসন করতে। সে সকাল নেই, সন্ধ্যা নেই, আমায় গালাগালি দিয়ে যাচ্ছে। আবার আমাকে টুইটও করছে। তাই ব্লক করে দিয়েছি।’’
গত ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসে রেড রোডের প্যারেডে মঞ্চে উপস্থিত রাজ্যপালের সামনে মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছিল কলকাতা মাউন্টেড পুলিশের একটি ঘোড়া। তাই ঘোড়ার প্রসঙ্গ টেনে মমতা যে রাজ্যপালকেই আক্রমণ করেছেন, তা স্পষ্ট। মমতা অবশ্য কোনও সন্দেহের অবকাশ না রেখে বলেই দিয়েছেন, ‘‘২৬ জানুয়ারির প্যারেডে একটা ঘোড়ার পাল দেখেছিলাম। আমাদের মাউন্টেড পুলিশ আছে। তারাও জানতে পেরেছে, এখানে ঘোড়ার পাল আছে। তাই ওরা রেগে গিয়েছে।’’
দু’দিন আগেই লোকসভায় তৃণমূলের নেতা সুদীপ রাষ্ট্রপতির কাছে বাংলার রাজ্যপালকে সরানোর আর্জি জানিয়েছিলেন। রাজ্যপালের অপসারণ চেয়ে এর আগে একাধিক বার কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছেন মমতা। সম্প্রতি ‘মা’ ক্যান্টিনের খরচ নিয়ে রাজ্যপালের কটাক্ষ প্রসঙ্গেও দু’তরফে বাক্যবিনিময় হয়েছে। মমতা যা নিয়ে বলেছেন, ‘‘খালি কৈফিয়ৎ চাই ওঁর। গরিব মানুষ দু’বেলা পাঁচটাকার বিনিময়ে খেতে পাচ্ছেন। তাতেও ওঁর আপত্তি। সকালে মন্ত্রীকে ডাকছেন, দুপুর বিধায়ককে ডাকছেন। কখনও সমালোচনা করছেন। কখনও সিবিআই-ইডি পাঠাচ্ছেন। ঘরে বসে দূরবিন দিয়ে শুধু বাংলার হিংসাই দেখতে পান উনি! ওঁকে কেন কৈফিয়ৎ দেব আমি? দশবার দলবদল করেছেন। একবার তো কাউন্সিলরও হতে পারেননি। কেন শুনব ওঁর কথা?’’
মমতা রাজ্যপালকে টুইটারে ‘ব্লক’ করার পর রাজ্যপাল পিছু হটে টুইট করে জানিয়েছিলেন, মমতার প্রতি তিনি ব্যক্তিগত স্তরে ‘শ্রদ্ধাশীল’। মমতা তার পরেও তাঁ সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন। এখন দেখার, বুধবারের ‘ঘোড়ার পাল’ কটাক্ষের পর রাজ্যপাল আবার কিছু বলেন কি না।