প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (বাঁ দিকে)। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বিঁধেছিলেন। বিধানসভায় মণিপুর নিয়ে নিন্দাপ্রস্তাব আনার কথা আগেই জানিয়েছিল তাঁর সরকার। বৃহস্পতিবার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে আবারও মণিপুর নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্র কটাক্ষ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নাম না-করে তিনি বললেন, ঘুরে বেড়াচ্ছেন আর মণিপুর জ্বলছে, মিজোরাম জ্বলছে। প্রধানমন্ত্রী মণিপুর নিয়ে ভয় পেয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন মমতা। পুলওয়ামা নিয়ে জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন রাজ্যপালের মন্তব্য টেনেও কটাক্ষ করেছেন তিনি।
পঞ্চায়েত ভোটে ‘হিংসা’ নিয়ে বিধানসভায় আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিল বিরোধী বিজেপি। সেই প্রস্তাব গৃহীত হয়। বৃহস্পতিবার বিধানসভার বাদল অধিবেশনে ‘হিংসা’ নিয়ে রাজ্য সরকারের দিকে আঙুল তোলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তখনই সেই অভিযোগের জবাব দিয়ে নিজের ভাষণে মণিপুরের প্রসঙ্গ তোলেন মুখ্যমন্ত্রী, যেখানে মে মাস থেকে দুই জনগোষ্ঠীর সংঘর্ষের জেরে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫০ জনের বেশি মানুষ। এই নিয়ে নাম না করেই প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করেন। তিনি বলেন, ‘‘মণিপুর নিয়ে অত ভয় কিসের? আপনি এ দিকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। টাকা দিয়ে উপহার দিচ্ছেন। আর মণিপুর জ্বলছে। মিজোরাম জ্বলছে।’’
গত ১৩ জুলাই দু’দিনের সরকারি সফরে ফ্রান্সে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ফেরার পথে আবু ধাবিতেও গিয়েছিলেন। সেই রাষ্ট্রের প্রধানদের জন্য উপহার নিয়ে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। নেটমাধ্যমে সেই উপহারের বিষয় প্রকাশিত হয়। তার আগে জুন মাসে আমেরিকায় সরকারি সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেনের জন্য প্রধানমন্ত্রী কী উপহার নিয়ে গিয়েছিলেন, সে কথাও টুইট করে জানিয়েছিল বিদেশ মন্ত্রক। সেই উপহারের প্রসঙ্গ তুলে এনেই প্রধানমন্ত্রীকে নাম না করে বিধানসভায় কটাক্ষ করেছেন মমতা। জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফরে গিয়ে উপহার দিচ্ছেন। অথচ মণিপুর জ্বলছে। মিজোরাম জ্বলছে।
একুশে জুলাইয়ের মঞ্চেও এ ভাবেই বিদেশ সফরের প্রসঙ্গ এনে মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে খোঁচা দিয়েছিলেন মমতা। মণিপুর নিয়ে নিশানা করে তিনি বলেন, ‘‘বিদেশে গিয়ে দেশের জন্য কাঁদেন, আর যাঁরা দেশে থেকে আপনার জন্য কাঁদছেন, তাদের জন্য আপনার মন কাঁদে না কেন।’’ এর পরেই প্রধানমন্ত্রীকে বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘মণিপুরের জন্য আপনার হৃদয় কাঁদে না? দেশের মা, বোনেদের প্রতি কি আপনার কোনও মায়া দয়া নেই? আমরা মণিপুরের সঙ্গে থাকব, ছাড়ব না। প্রধানমন্ত্রী, আপনি হৃদয় বড় করুন।’’
একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে মমতা এ-ও জানান, যে ২৬টি দল নিয়ে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ তৈরি হয়েছে, তার মুখ্যমন্ত্রীদের প্রতিনিধিরাও যাবেন মণিপুরে। তার আগে, গত ১৯ জুলাই মমতার নির্দেশে তৃণমূলের পাঁচ সদস্যের একটি দল গিয়েছিল মণিপুরে। সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনের নেতৃত্বাধীন ওই দলে ছিলেন সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, দোলা সেন, কাকলি ঘোষদস্তিদার এবং সুস্মিতা দেব। মণিপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে তার রিপোর্ট তাঁরা তুলে দিয়েছিলেন দলনেত্রীর হাতে। সোমবার রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় জানান, বিধানসভার বাদল অধিবেশনে মণিপুর নিয়ে নিন্দাপ্রস্তাব আনছে তৃণমূল। এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার বিধানসভা অধিবেশনে ফের মণিপুর নিয়ে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী।
পঞ্চায়েত ভোটে ‘হিংসা’-র অভিযোগের জবাব দিতে পুলওয়ামার প্রসঙ্গও তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, কী ভাবে মারা গেলেন জওয়ানরা। জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন রাজ্যপালের মন্তব্যও তুলে ধরেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘পুলওয়ামা কাণ্ডে রাজ্যপালের মন্তব্য নিয়ে যদি নিরপেক্ষ তদন্ত হয়, কী ভাবে মারা গেল জওয়ানরা?’’ বিজেপি নেতা তথা জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে অভিযোগ তুলেছিলেন, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে পুলওয়ামায় সিআরপির কনভয়ে জঙ্গি হানায় ৪০ জন জওয়ানের মৃত্যুর পরে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁকে মুখ বন্ধ রাখতে বলেছিলেন। কারণ তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের গাফিলতি, নিরাপত্তায় ফাঁক থাকার ফলেই কনভয়ে হামলা হয়েছে। সত্যপালের দাবি, প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বলেছিলেন, এটা অন্য বিষয়। সত্যপাল যেন মুখ বন্ধ রাখেন। ওই সাক্ষাৎকারেই সত্যপাল আভাস দিয়েছিলেন, পুলওয়ামায় জওয়ানদের মৃত্যুকে রাজনৈতিক ভাবে কাজে লাগানো হয়ে থাকতে পারে। এ বার সে প্রসঙ্গ তুলে এনে প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করলেন মমতা।