ফাইল চিত্র।
খাতায়-কলমের তথ্য অনুযায়ী সুদীর্ঘ করোনাকালে রাজ্যে ক্লাস হয়েছে অনলাইনে। কিন্তু বাংলার বাস্তব জানে, প্রত্যন্ত গ্রামীণ অঞ্চলে মসৃণ ইন্টারনেট যোগের অভাবে এবং বহু ক্ষেত্রে অর্থাভাবে স্মার্টফোন না-থাকায় সাইবার-পাঠের আশীর্বাদ পায়নি অসংখ্য পড়ুয়া। এই অবস্থায় মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে সোমবার। অগণিত পড়ুয়া বলছে, আর একটু ক্লাস করার সুযোগ পেলে নিজের উপরে যথেষ্ট আস্থা নিয়ে পরীক্ষা দেওয়া যেত। কারও কারও দুর্ভাবনা, দীর্ঘ অনভ্যাসে লেখার গতি আগের মতো নেই। সব প্রশ্নের উত্তর কী ভাবে যে দেব! আগের বছরের প্রশ্ন সংশ্লিষ্ট অধ্যায় বাদ দিয়ে পাঠ্যাংশের বাকি অংশ পড়ে পরীক্ষা দেওয়া দীর্ঘ কালের রেওয়াজ। কিন্তু গত বছর পরীক্ষা না-হওয়ায় কী সাজেশন মেনে শেষ মুহূর্তের পাঠ নেবে, বুঝে উঠতে পারছে না অনেকে! সব মিলিয়ে পরীক্ষার্থীরা দিশাহারা।
করোনায় ২০২১-এর মাধ্যমিক বাতিল হওয়ার পরে এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসতে চলেছে ১১ লক্ষাধিক ছাত্রছাত্রী। জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা, সেই চাপ তো আছেই। সর্বোপরি অনেক পরীক্ষার্থী মনে করছে, এ বারের সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটা হল, অনলাইনে পড়ে অফলাইনে পরীক্ষা দিয়ে ভাল ফল করতে হবে।
কল্যাণীর বাসিন্দা অজয় বসু (ছদ্মনাম) জানান, তাঁর ছেলে অরূপ মধ্যমেধার ছাত্র। ওর মধ্যে কোথাও যেন একটা আত্মবিশ্বাসের অভাব রয়েছে। অরূপবাবু বলেন, “যে-সব বিষয় অনলাইনে পড়েছে, সেগুলি পরীক্ষায় এলে কতটা উত্তর লিখতে পারবে, তা নিয়ে চিন্তায় আছি। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চালাচ্ছে।”
কিছু পরীক্ষার্থী জানাচ্ছে, সাজেশন অনুযায়ী পড়া হয়নি। কারণ, পরীক্ষায় কী আসবে আর কোন কোন পাঠ্যাংশ বাদ দিলে ভার কমবে, সেটা তারা বুঝেই উঠতে পারছে না। বীরভূমের বোলপুরের ছাত্র প্রসেনজিৎ রায়ের কথায়, “সাধারণত আমরা পরীক্ষার প্রস্তুতি চালানোর সময় গত বছরের প্রশ্ন ভাল করে পড়ি না। কারণ, গত বারের প্রশ্ন আবার আসার সম্ভাবনা কম। কিন্তু এ বার সেই রেওয়াজ প্রযোজ্য হবে কি না, বুঝতে পারছি না। কারণ, গত বার তো মাধ্যমিক পরীক্ষাই হয়নি। কী বাদ দেব?”
এ বার সংক্ষিপ্ত পাঠ্যক্রমের উপরে পরীক্ষা দিচ্ছে মাধ্যমিক পরীক্ষা নেওয়া হলেও তাতে কতটা সুরাহা হবে, সন্দেহ আছে অনেক পড়ুয়ার। বর্ধমানের ছাত্রী পিয়ালী চৌধুরী বলছে, “সিলেবাস সংক্ষিপ্ত ঠিকই। কিন্তু সেটাই খুব খুঁটিয়ে পড়তে হয়েছে। স্কুল বন্ধ থাকায় অনলাইনে সব কিছু স্যরদের কাছ থেকে জেনে নেওয়া সম্ভব হয়নি।” হাওড়ার উলুবেড়িয়ার ছাত্র অনিমেষ পাত্র বলল, “স্কুল চালু থাকলে যেমন প্রাত্যহিক লেখার একটা অভ্যাস থাকে, বাড়িতে সেটা ছিল না। টেস্টে লিখতে হয়েছিল, কিন্তু তখনও অসুবিধা হয়েছিল খুব। লিখতে গিয়ে এখন বানান ভুল হচ্ছে বেশি।” কোনও কোনও পরীক্ষার্থীর মতে, টেস্ট পেপার একটু দেরিতে পাওয়ায় অনুশীলন ঠিকমতো হয়নি।
শিক্ষক শিবিরের একাংশও মনে করছে, এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের কিছু নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে, যা অন্যান্য বার হয়নি। তবে তাতে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই বলে আশ্বাস দিচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। শিয়ালদহ টাকি বয়েজের প্রধান শিক্ষিকা স্বাগতা বসাক পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, “এটা ঠিক, এ বার পরীক্ষার্থীরা সাজেশন ধরে পড়তে পারেনি। তাতে অবশ্য একটা সুবিধা হয়, সামগ্রিক বিষয়টা জানা যায়। যা-ই হোক, ভয় ঝেড়ে ফেলে পরীক্ষা দিতে হবে। যে-হেতু এ বার অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে পড়াশোনা করতে হয়েছে, তাই আশা করা যায়, প্রশ্ন করা হবে পরীক্ষার্থীদের কথা ভেবেই। হাতে যে-ক’দিন সময় আছে, টাইম ম্যানেজমেন্ট করে পড়তে হবে।”
সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গভর্নমেন্ট গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা পাপিয়া নাগ জানাচ্ছেন, প্রতিকূলতার কথা মাথায় রেখেই প্রশ্নপত্র তৈরি এবং মূল্যায়ন হবে। পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “যে যেটুকু পড়েছে, তার উপরে প্রশ্ন এলে সেটা যেন সুন্দর ভাবে খাতায় লিখে আসে। যে-ক’দিন সময় এখনও অবশিষ্ট আছে, সেই সময়টায় বেশি করে লেখা অনুশীলনও করতে হবে। মনে রাখতে হবে, এরা কোভিডের মতো সঙ্কটকাল যখন পেরিয়ে এসেছে, তখন পরীক্ষাটা কোনও সঙ্কটই নয়। এই আত্ববিশ্বাস থাকাটা জরুরি। উত্তরপত্র যাঁরা দেখবেন, আশা করি, তাঁরা এ বারের কোভিড পরিস্থিতির কথাও মাথায় রাখবেন।” পার্ক ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক সুপ্রিয় পাঁজা বলেন, “পরীক্ষার আগের দিন রাত জেগে পড়া উচিত নয়। শরীর সুস্থ রাখতে হবে। হাতে যে-ক’টা দিন আছে, পাঠ্যবই আরও ভাল করে পড়ুক। টেস্ট পেপারের প্রশ্ন ঘড়ি দেখে সমাধান করুক। তা হলে টানা লেখার অনুশীলন হয়ে যাবে।”