Madhyamik Exam 2020

প্রশ্ন বেরোনোর গুজব-নাট্যে রোজই বিভ্রান্তি

পরীক্ষার হলে মোবাইলের উপরে নিষেধাজ্ঞা, বিশেষ কিছু অঞ্চলে ইন্টারনেট বন্ধ রাখার ব্যবস্থা করেও রোজ রোজ এই নাটকে জেরবার মধ্যশিক্ষা পর্ষদ কর্তৃপক্ষও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:৪৩
Share:

পরীক্ষার এক ঘণ্টার কিছু পরে বেরিয়ে যাওয়া বাংলার প্রশ্নপত্র।

শুরুর দিনে বাংলার প্রশ্ন বেরিয়ে গিয়েছিল পরীক্ষার এক ঘণ্টার কিছু পরে। ইংরেজি পরীক্ষা শুরুর কিছু ক্ষণের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশ্ন ছড়িয়ে পড়েছিল বুধবার। বৃহস্পতিবার ভূগোল পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগেই ইন্টারনেটের দাক্ষিণ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ল প্রশ্নপত্র। পরীক্ষার পরে অবশ্য মূল প্রশ্নের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা গেল, সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া প্রশ্নের সঙ্গে মিল নেই।

Advertisement

মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম তিনটি পরীক্ষার মধ্যে দু’টি পরীক্ষার ক্ষেত্রেই দেখা গেল এই চিত্র। এই ধরনের ভুয়ো খবর তথ্য ছড়ানোয় রীতিমতো বিভ্রান্ত পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা। পরীক্ষার হলে মোবাইলের উপরে নিষেধাজ্ঞা, বিশেষ কিছু অঞ্চলে ইন্টারনেট বন্ধ রাখার ব্যবস্থা করেও রোজ রোজ এই নাটকে জেরবার মধ্যশিক্ষা পর্ষদ কর্তৃপক্ষও।

বৃহস্পতিবার বেথুন কলেজিয়েট স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন দুই অভিভাবক আশিস সেন ও গৌতম রায়। তাঁদের মেয়েদের আসন পড়েছে বেথুন কলেজিয়েট স্কুলে। ওই অভিভাবকেরা জানান, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশ্ন ছড়িয়ে পড়েছে শুনে রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে পড়েন তাঁরা। তাঁদের মনে প্রশ্ন ওঠে, তা হলে কি ফের পরীক্ষা দিতে হবে মেয়েদের? ভূগোল পরীক্ষার শেষে মেয়েরা বাইরে বেরোনোর পরে তাদের সঙ্গে থাকা প্রশ্নপত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত প্রশ্নের সঙ্গে মেলানোর পরে যখন দেখা গেল কোনও কোনও মিল নেই, স্বস্তি পেলেন তাঁরা। গৌতমবাবু বলেন, ‘‘বার বার এ-রকম ভুয়ো খবর ছড়িয়ে যারা অভিভাবকদের বিভ্রান্ত করছে, আতঙ্কিত করছে, বার বার এমন বিভ্রান্তিমূলক তথ্য যারা ছড়াচ্ছে, তাদের কড়া শাস্তি হওয়া দরকার।’’

Advertisement

প্রশ্নপত্র হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে বাইরে ছড়াতে গিয়ে বা ভুয়ো খবর ছড়াতে গিয়ে দোষীরা ধরা পড়লে তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘ইংরেজি পরীক্ষার সময় মোবাইলে ফোন-সহ ধরা পড়ে এক পরীক্ষার্থী তথ্যপ্রযুক্তি আইনে গ্রেফতার হয়েছে। পর্ষদ আরও কড়া নজরদারি চালাবে। পুলিশকে জানানো হয়েছে, দোষীদের বিরুদ্ধে যেন তথ্যপ্রযুক্তি আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’’ যারা মোবাইল-সহ ধরা পড়ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা যে শুধু এ বছরের জন্যই নয়, সেটাও পরিষ্কার করে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। রাতে তিনি বলেন, ‘‘যারা মোবাইল-সহ ধরা পড়েছে, তাদের কঠোরতম শাস্তির কথা ভাবা হচ্ছে। পাঁচ জনের নাম পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর যারা ধরা পড়েছে, সকলেই ‘এক্সটার্নাল ক্যান্ডিডেট’ (বহিরাগত পরীক্ষার্থী)।’’ শিক্ষামন্ত্রী জানিয়ে দেন, যারা ছাত্রছাত্রীদের জীবনের সঙ্গে ছেলেখেলা করছে, তাদের কাউকেই ছাড়া হবে না।

মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যারা প্রশ্ন বেরিয়ে গিয়েছে বলে ভ্রান্ত খবর ছড়াচ্ছে, তারা খুবই অন্যায় করছে।’’

এ দিনও মোবাইল নিয়ে পরীক্ষার হলে ঢোকার পরে ধরা পড়ে কয়েক জন পরীক্ষার্থী। হাওড়ার নাতিবপুর হাইস্কুলের এক ছাত্র মোবাইল নিয়ে ধরা পড়ার পরে তার পরীক্ষা বাতিল করা হয়। কলকাতার রামকৃষ্ণ সারদা মিশন সিস্টার নিবেদিতা গার্লস স্কুলে এক ছাত্রী মোবাইল নিয়ে ধরা পড়ে, পরীক্ষা বাতিল হয় তারও। পশ্চিম মেদিনীপুরের খাজরা সতীশচন্দ্র মেমোরিয়াল হাইস্কুলের এক পরীক্ষার্থী মোবাইল নিয়ে ধরা পড়ার পরে একই ব্যবস্থা করা হয়। কোচবিহারের পুণ্ডিবাড়ি রামগোপাল লাখোটিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে মোবাইল নিয়ে এক পরীক্ষার্থী ধরা পড়েছে বলে পর্ষদ সূত্রের খবর। পর্ষদ জানিয়েছে, এই ক’টি ঘটনা ছাড়া সারা রাজ্যে এ দিনের পরীক্ষা নির্বিঘ্নে হয়েছে। পরীক্ষা চলাকালীন কোনও জায়গা থেকে হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্ন বেরোয়নি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement