পার্থ চট্টোপাধ্যায়
আপাতত ইডি হেফাজতেই থাকবেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী (বর্তমান শিল্পমন্ত্রী) পার্থ চট্টোপাধ্যায়। রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগের মামলায় গ্রেফতার হওয়া পার্থকে সোমবার বিশেষ ইডি আদালতে ভার্চুয়ালি হাজির করানো হয়। বিচারক তাঁকে ১০ দিনের ইডি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য আদালতের নির্দেশে সোমবার সকালে পার্থকে ভুবনেশ্বর এমসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর হাসপাতালের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, পার্থের শরীরে পুরনো কিছু সমস্য রয়েছে বটে, তবে তা মারাত্মক কিছু নয়। ওই অসুস্থতার জন্য পার্থকে হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হবে না। সোমবার সন্ধ্যা নাগাদই যে মন্ত্রীকে ছেড়ে দেওয়া হবে, তা-ও জানিয়ে দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার কিছু পরেই কলকাতায় ইডির বিশেষ আদালতে মামলার শুনানি শুরু হয়। ওই শুনানিতে পার্থকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে কোর্টে হাজির করানোর ব্যবস্থা করে ইডি।
আদালতে ইডির আইনজীবী দাবি করেন, গত শুক্রবার রাতে যে মহিলার টালিগঞ্জের ফ্ল্যাট থেকে প্রায় ২২ কোটি টাকা নগদ, বিদেশি মুদ্রা ও সোনা উদ্ধার হয়েছে, সেই অর্পিতা মুখোপাধ্যায় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ। মন্ত্রীর বাড়ি থেকেও অর্পিতার নামে বিভিন্ন সংস্থার নথি ও সম্পত্তির দলিল উদ্ধার হয়েছে বলে তদন্ত রিপোর্টে জানিয়েছে ইডি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আরও দাবি, বেআইনি নিয়োগের এই দুর্নীতি-চক্রে বহু প্রভাবশালীই জড়িত। বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের শিকড়ে পৌঁছনোর জন্য পার্থকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। এর পরেই পার্থকে ১৪ দিন নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানায় ইডি।
ইডির আবেদনের বিরোধিতা করে পার্থের আইনজীবী দেবাশিস রায় আদালতে বলেন, ‘‘২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে পার্থের বাড়িতে ছিল ইডি। তার পর তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ইডির হেফাজত থেকে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। হিসাব করলে দেখা যাবে, ইতিমধ্যেই তিন দিন ইডির হেফাজতে রয়েছেন পার্থ।’’
ইডির হয়ে সওয়াল করা কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এম রাজু বলেন, ‘‘হাসপাতালে ভর্তি থাকলে তাকে পুলিশি বা বিচারবিভাগীয় হেফাজত বলা চলে না। আমরা ইতিমধ্যে দু’দিন হারিয়েছি। তাই পার্থকে আরও ১৪ দিনের হেফাজতে চাইছি আমরা।’’ পার্থের কারণেই এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স করে যাতায়াত করে বিপুল খরচ হয়েছে বলে আদালতে দাবি করে ইডি।
যদিও পার্থের আইনজীবী এই অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘‘ইডির অতিরিক্ত তাড়া ছিল। তাই খরচ হয়েছে। এটা পার্থের দোষ নয়। এসএসকেএমের একটি রিপোর্টও শুনানিতে পেশ করা উচিত। সোমবারই পার্থের শারীরিক পরীক্ষার রিপোর্ট জমা করার কথা ছিল এসএসকেএম কর্তৃপক্ষের। তারাও হয়তো একই রিপোর্ট দিত। কিন্তু তার আগেই তড়িঘড়ি পার্থকে ভুবনেশ্বর এমসে নিয়ে যাওয়া হয়।’’
এই সওয়াল-জবাবের পরেই বিচারক পার্থকে ১০ দিনের ইডি হেফাজতের নির্দেশ দেয়।