ফাইল চিত্র
বকেয়া পুরভোট কি শীঘ্রই? এক দিনে রাজ্যের প্রায় ১০০ পুরসভা ও পুর-নিগমের পরিচালকমণ্ডলীতে রদবদলের সরকারি সিদ্ধান্তের জেরে সেই সম্ভাবনা নিয়েই জল্পনা শুরু হল। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, এই রদবদলের মধ্যে দিয়েই নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করে দিল শাসক শিবির।
তৃণমূল কংগ্রেসের ‘এক ব্যক্তি এক পদ’ নীতির কারণে বড় সংখ্যায় পরিবর্তন হয়েছে বিভিন্ন পুরসভায়। রাজ্যে যাঁরা মন্ত্রী রয়েছেন, তাঁদের সরানো হয়েছে পুর-প্রশাসন থেকে। যদিও কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন ফিরহাদ হাকিম। তিনি একাধারে রাজ্যের মন্ত্রী হলেও এখনও পর্যন্ত কলকাতার ব্যাপারে অন্য কিছু শোনা যায়নি। তবে দক্ষিণ দমদম পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলী থেকে বাদ পড়েছেন দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু। রদবদলে বাদ পড়েছেন নিজে হাতে করোনার টিকা দিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়া আসানসোল পুরসভার পরিচালকমণ্ডলীর চেয়ারপার্সন তবস্সুম আরা।
এই রদবদলে অবশ্য দল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া দুই কাউন্সিলর নতুন করে জায়গা পাওয়ায় শোরগোল পড়েছে তৃণমূলের অন্দরে। পানিহাটিতে প্রশাসকমণ্ডলীর উপপ্রধান হিসেবে যে কৌশিক চট্টোপাধ্যায়কে মনোনীত করা হয়েছে, বিধানসভা ভোটের আগে তিনি বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। জলপাইগুড়ি পুরসভায় সমস্যা তৈরি হয়েছে ১২ জনের তালিকায় থাকা শুভজিৎ করের নাম নিয়ে। শুভজিৎ ফেব্রুয়ারিতে বিজেপিতে যোগ দেন।
কলকাতায় বদল না হলেও পাশের হাওড়া পুরসভায় প্রশাসকমণ্ডলীর প্রধান পদে নতুন মুখ আনা হয়েছে। মন্ত্রী অরূপ রায়ের বদলে এই পদে এসেছেন সুজয় চক্রবর্তী। বিধাননগর পুরসভার পরিচালকমণ্ডলী থেকে সরানো হয়েছে বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায়কে। দক্ষিণ দমদমের উপ-পুরপ্রধান ছিলেন মন্ত্রী সুজিত। তাঁকেও পরিচালকমণ্ডলী থেকে সরানো হয়েছে।
বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর প্রধান পদ থেকে দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বড়জোড়া পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ অর্চিতা বিদকে। দলের অন্দরে প্রশ্নও উঠেছে তা নিয়ে। রাজনৈতিক ভাবে শাসক শিবিরের কাছে গুরুত্বপূর্ণ কাঁথি পুরসভার পরিচালকমণ্ডলীর প্রধান পদেও বদল করা হয়েছে। শুভেন্দু অধিকারীকে ঘিরে টানাপড়েনে তাঁর ভাই সৌমেন্দুকে সরিয়ে দেওয়া হয় পুর-প্রশাসন থেকে। এক মাস আগে দায়িত্ব নেওয়া সিদ্ধার্থ মাইতিকে সরিয়ে সেই পদে এ বার আনা হয়েছে হরিসাধন অধিকারীকে।
এই সব রদবদলের ক্ষেত্রে পুরনো মুখ সরিয়ে নতুনের উত্থান প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে কি না, এই জল্পনাও জোরদার। দলীয় সূত্রে বিষয়টির মধ্যে নীতিগত ভাবে এক ব্যক্তি এক পদ, কাজের দক্ষতা ইত্যাদি বিচারকে সামনে আনা হয়েছে। পুর-প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনায়। গাইঘাটা, হাবরা, অশোকনগরে প্রশাসকমণ্ডলীর প্রধান ও উপপ্রধান পদে নতুন মুখ আনা হয়েছে। জেলার পুর-প্রশাসনেও সদ্যপ্রাক্তন জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ‘ঘনিষ্ঠেরাই’ বাদ পড়েছেন। জেলার গারুলিয়া পুরসভায় প্রশাসকমণ্ডলীর প্রধান পদ থেকে প্রাক্তন বিধায়ক সুনীল সিংহের ভাই সঞ্জয় সিংহকে সরানোয় পুরসভার সামনে তাঁর অনুগামীরা বিক্ষোভ দেখান। সুনীল তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছিলেন। সঞ্জয়ের জায়গায় আনা হয়েছে রমেন দাসকে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার রাজপুর-সোনারপুরের প্রশাসকমণ্ডলী থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে নজরুল আলি মণ্ডলকে। জেলায় দলের চর্চায় উঠে এসেছে বজবজ প্রশাসকমণ্ডলীর প্রধান গৌতম দাশগুপ্তের অপসারণও।