(বাঁ দিকে) অধীর চৌধুরী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।
অধীর চৌধুরীকে নিয়ে বেশি ভাবতে হবে না। লোকসভা ভোটের আগে মুর্শিদাবাদের তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে শুক্রবার এই বার্তাই দিয়ে রাখলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, নিজের কালীঘাটের বাড়িতে ডাকা বৈঠকে মমতা বলেছেন, সবাই মিলে লড়াই করলে অধীর কোনও ফ্যাক্টরই নন। জেলা পার্টিকে দিদির পরামর্শ, অধীরকে উপেক্ষা করতে হবে। ওঁর কথা মাথা থেকে সরাতে হবে।
তবে কি একলা লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছেন তৃণমূল নেত্রী? স্পষ্ট না করে তিনি বরং দায় ঠেলে রাখলেন কংগ্রেসের দিকেই। তিনি বলেন, ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম বড় শরিক তৃণমূল। তাদের বাদ দিয়ে এ রাজ্যে অন্য কাউকে কংগ্রেস বেশি প্রাধান্য দিলে, তৃণমূল নিজের মতোই ভাববে। সে ক্ষেত্রে রাজ্যে এ বারও ৪২ আসনেই লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী।
কংগ্রেস-তৃণমূলের আসন সমঝোতার ক্ষেত্রে মুর্শিদাবাদ অন্যতম আলোচিত জেলা। ২০১৯ সালে প্রথমবার এই জেলায় লোকসভা আসন জিতেছিল তৃণমূল। একসঙ্গে দু’টি। গত লোকসভা ভোটের সময়ে তৃণমূলের তরফে মুর্শিদাবাদের দায়িত্বে ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। জঙ্গিপুর ও মুর্শিদাবাদ জিতলেও গত বার অধীরকে হারাতে পারেনি তৃণমূল। তবে কংগ্রেস সাংসদের ভোটে জেতার ব্যবধান অনেকটা কমে গিয়েছিল। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে বাংলায় কংগ্রেস এবং তৃণমূলের সমীকরণ কী হবে তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে। কিন্তু এ সবের মধ্যেও অধীর তাঁর তৃণমূল বিরোধিতা জারি রেখেছেন। সম্প্রতি অধীর সরাসরি মমতাকেও চ্যালেঞ্জ করে বলেছিলেন, ‘‘ক্ষমতা থাকলে বহরমপুরে এসে দাঁড়ান। হারিয়ে কলকাতা পাঠিয়ে দেব।’’ পাল্টা তৃণমূল বলেছিল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো দক্ষিণ কলকাতায় বছরের পর বছর জিতেছেন। তখন কি অধীর বহরমপুর ছেড়ে এসে কলকাতায় প্রার্থী হয়েছিলেন?
শুক্রবারের মুর্শিদাবাদ-বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সূত্রের খবর, উপনির্বাচনে কংগ্রেসের টিকিটে জিতে তৃণমূলে যোগ দেওয়া সাগরদিঘির বিধায়ক বাইরন বিশ্বাসের উদ্দেশে অভিষেক বলেন, কংগ্রেসে থাকাকালীন তাঁর বাড়িতে কেন্দ্রীয় এজেন্সি যায়নি। এখন যাচ্ছে। এর উদ্দেশ্য বুঝতে হবে। একই কথা বলা হয়েছে ডোমকলের তৃণমূল বিধায়ক জাফিকুল ইসলামের বাড়িতে কেন্দ্রীয় এজেন্সির অভিযান প্রসঙ্গে। প্রসঙ্গত, এই দু’জনের বাড়িতেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা হানা দিয়েছিল। জাফিকুলের বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ উদ্ধার হয়েছে বলেও দাবি করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
তৃণমূল সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীরকে সতর্ক করেছেন মমতা। কয়েক মাস আগে হুয়ায়ুনের ‘বিদ্রোহ’ শাসকদলের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তার পর তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছিল দল। জানা গিয়েছে, শুক্রবারের বৈঠকে হুয়ায়ুনকে সংবাদমাধ্যমের সামনে একটু কম কথা বলার নির্দেশ দেন মমতা। অতীতেও হুমায়ুনকে তাঁর আলটপকা কথাবার্তার জন্য নেত্রীর ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয়েছিল। শুক্রবারের বৈঠকে জঙ্গিপুর ও মুর্শিদাবাদের সাংসদ খলিলুর রহমান এবং আবু তাহের খানের কাজেরও প্রশংসা করেছেন মমতা।
সমাজমাধ্যমে জেলা বা ব্লক স্তরে তৃণমূল নেতাদের আকচাআকচি নতুন নয়। তা ছাড়া মুর্শিদাবাদের নেতা-নেত্রীদের মধ্যে ‘তুই বড় না মুই বড়’ লড়াই রয়েছেই। শুক্রবারের বৈঠকে সে ব্যাপারেও দলের নেতাদের কড়া বার্তা দিয়েছেন মমতা। সূত্রের খবর, তৃণমূলনেত্রী স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, সব খবর তাঁর কাছে রয়েছে। সব খবর আসে। তেমন হলে দল কড়া পদক্ষেপ করতে পিছপা হবে না।