বীরবাহা সরেন
আদিবাসী ভোটব্যাঙ্কে প্রভাব পড়ছে। ইঙ্গিত দিয়েছিল পঞ্চায়েত ভোট। লোকসভা নির্বাচনে আদিবাসী অধ্যুষিত ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রে প্রার্থী বদলে দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
উমা সরেনের বদলে ঝাড়গ্রামে প্রার্থী করা হয়েছে বীরবাহা সরেনকে। সাংসদ তহবিলের টাকা খরচ করতে না পারা, সাংসদ এলাকায় নিয়মিত মানুষের অভাব অভিযোগ না শোনা— গত পাঁচ বছরে উমার বিরুদ্ধে এমনই নানা অভিযোগ উঠেছে। মমতা উমাকে সতর্ক করেছেন। একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে উমার জনজাতি সম্পর্কিত মন্তব্য ঘিরে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় পথে নেমেছিল আদিবাসীদের সংগঠন। মঙ্গলবার কালীঘাটে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করতে গিয়ে পাশে বসা উমা সরেনকে দেখিয়ে মমতা অবশ্য বলেছেন, ‘‘ওঁকে (উমা) টিকিট দেওয়া হচ্ছে না। উমা বাচ্চা মেয়ে। দলের হয়ে কাজ করতে চাইছে।’’
কিন্তু কোন অঙ্কে বাছা হল বীরবাহাকে?
আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
তৃণমূল সূত্রের খবর, এমন এক জনের খোঁজ চলছিল যাতে সব দিক বজায় থাকে, আবার ভোটের লড়াইয়েও এগিয়ে থাকা যায়। সে দিক থেকে বিচার করলে বীরবাহাই ‘যোগ্যতম’। সাঁওতালদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে লাগাতার আন্দোলন করছিল ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল। আন্দোলনে সামনের সারিতে ছিলেন রবিন টুডু। ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রে তৃণমূলের নয়া প্রার্থী এই রবিনেরই স্ত্রী। পঞ্চায়েত ভোটের সময় আন্দোলনের ঝাঁঝ বাড়াচ্ছিল ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে গিয়েছিলেন পারগানা মহলের নেতারা। ওই দলেও ছিলেন সাঁকরাইল ব্লকের রোহিণীর একটি বালিকা বিদ্যালয়ের টিচার-ইনচার্জ বীরবাহাও।
আরও পড়ুন: মহিলা প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ালেন মমতা, তালিকায় রয়েছে চার নতুন মুখ
এক দিকে জঙ্গলমহলে মাথা তুলছে আদিবাসী সমন্বয় মঞ্চ, অন্য দিকে আদিবাসী এলাকাকে সংবিধানের পঞ্চম তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে বিভিন্ন আদিবাসী সংগঠন যখন আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন বীরবাহাকে বেছে নেওয়াকে ইঙ্গিতপূর্ণ বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ। তাঁদের মতে, এতে আদিবাসী মহিলা প্রার্থী হিসেবে নয়া মুখ সামনে আনা হল, আবার ভোট বিভাজনের কৌশল কাজে লাগানোর সুযোগ তৈরি হল।
এ দিন মমতা যখন কলকাতায় প্রার্থী ঘোষণা করছিলেন। তখন বীরবাহা ঝাড়গ্রামে এসেছিলেন স্বামী রবিনকে চিকিৎসক দেখাতে। দুর্ঘটনায় রবিনের বাঁ হাত জখম হয়েছে। বীরবাহা বলেন, ‘‘আমি মানুষের সাংসদ হতে ভোটে লড়ছি। জিতলে মানুষ সব সময় আমাকে পাশে পাবেন।’’ আর রবিন বলছেন, ‘‘বীরবাহার প্রার্থী হওয়ার পিছনে আমার কোনও ভূমিকা নেই। স্ত্রী সাংসদ হলে আদিবাসীদের দাবি পূরণে স্ত্রীর বিরুদ্ধেও আন্দোলন করতে পিছপা হব না।’’