Domkal

লকডাউনে ভাঙা সাইকেলে বালিয়া থেকে ডোমকল এলেন আস্তাব

আস্তাব আলি শেখ লকডাউনে আটকে পড়েন উত্তরপ্রদেশের প্রান্তিক এক শহরে।

Advertisement

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস

ডোমকল শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২০ ০৫:৫০
Share:

আস্তাব আলি শেখ। নিজস্ব চিত্র

টোল খাওয়া প্যাডেল, দু-চাকা মিলিয়ে উধাও খান পাঁচেক স্পোক, রং চটে গিয়েছে। সাতশো কিলোমিটার রাস্তা ভেঙে সেই লজঝড়ে সাইকেলই তাঁকে পাঁচ দিনে পৌঁছে দিল ঘরে। মেয়ের কান্না আর খিদের জ্বালায় শেষ পর্যন্ত নদী-নালা-পাকা সড়ক ঠেঙিয়ে তাঁকে টেনে এনেছে ডোমকলের মানিকনগর গ্রামে। আস্তাব আলি বলছেন, ‘‘এতটা পথ, কেমন ঘোরে ছিলাম। এই কয়েকটা দিন অনেক কিছু শিখিয়ে দিল।’’

Advertisement

আস্তাব আলি শেখ লকডাউনে আটকে পড়েন উত্তরপ্রদেশের প্রান্তিক এক শহরে। সম্বল বলতে আধ-ভাঙা মোবাইল, ১২০০ টাকা আর জোগাড় করা ওই লজঝড়ে সাইকেল। মেয়ের কান্না সহ্য করতে না পেরে শেষমেশ তাই বৃহস্পতিবার বিকেলে বুক ঠুকে উত্তরপ্রদেশের বালিয়া থেকে পাড়ি দেন গ্রামের দিকে। পাঁচ দিন প্যাডেল করে গ্রামে পৌঁছে আস্তাব বলছেন, ‘‘ঘরে ফেরা যে কী শান্তির!’’ ডাক্তার তাঁকে ১৪ দিন নিভৃতবাসে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।

ডোমকলের বাজিতপুর গ্রামের শাঁখার খ্যাতি দেশজোড়া। গত দশ বছর সেই শাঁখা নিয়েই দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বিক্রি করেন আস্তাব। বলছেন, ‘‘কী করব, লেখাপড়া বেশি দূর করিনি। স্ত্রী, তিন মেয়ে— পাঁচ জনের পেট চালাতে এই রুজি।’’ মাস দুয়েক আগে শাঁখা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন বিহার-উত্তরপ্রদেশে। ২১ মার্চ দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণার সময়ে তিনি ছিলেন উত্তরপ্রদেশের এক গ্রামে।

Advertisement

আস্তাব বলেন, ‘‘লকডাউন শুরু হওয়ার পরে ভেবেছিলাম, হয়তো কয়েক দিন পর উঠে যাবে। কিন্তু সময়সীমা ক্রমেই বাড়তে থাকে। দেখলাম, গ্রামে পৌঁছতে না পারলে না খেয়েই মরতে হবে ভিন্রাজ্যে। তাই আর দেরি করিনি।’’ বালিয়াতেই দেখা হয় বেলডাঙার কয়েক জন যুবকের সঙ্গে। তাঁদেরই একজনের ধার দেওয়া ভাঙা সাইকেল আর বারোশো টাকা নিয়ে ভেসে পড়েছিলেন আস্তাব।

বিহারের রাস্তায় দেহ রাখে সেই নড়বড়ে সাইকেল। ভেঙে পড়েননি। আশপাশের লোকজনের কাছে হাতজোড় করে মিনতি করেছিলেন একটা সাইকেল জোগাড় করে দেওয়ার জন্য। শেষতক, সঞ্চয়ের ওই বারোশো টাকা দিয়েই একটি সাইকেল কিনে শুরু হয় তাঁর দ্বিতীয় পর্বের যাত্রা।

তবে টুকরো টকরো আদর যত্নের কথাও মনে পড়ছে তাঁর—‘‘আমার দুরবস্থার কথা শুনে সেখানকার একটি স্কুলে রাত কাটানোর ব্যবস্থা করে দেন এক প্রৌঢ়। রাতে নিজের বাড়ি থেকে রান্না করা খাবারও এনে দেন। রাস্তায় আরও কয়েক জনের সঙ্গে দেখা হয়েছে, তাঁরা কেউ আমায় চা-জলের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, কেউ নিজের বাড়ির বারান্দায় রাতে থাকার জায়গা দিয়েছেন।’’ পাঁচ দিন পরে সেই সব স্মৃতিই এখন বেঁধে রয়েছে তাঁকে।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement