শনিবার ধর্মতলায় অবস্থানমঞ্চে জুনিয়র ডাক্তারেরা। —নিজস্ব চিত্র।
শুক্রবার রাত সাড়ে ৮ টায় সংবাদিক বৈঠক করে জুনিয়র ডাক্তারেরা ঘোষণা করেছিলেন, কর্মবিরতি তুলে নিলেও যত দিন পর্যন্ত না তাঁদের দাবি পূরণ হচ্ছে, তত দিন অবস্থান চালিয়ে যাবেন। একই সঙ্গে এ-ও জানান, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরকারকে দাবি না মানলে তাঁরা আমরণ অনশন শুরু করবেন। সেই মতো শনিবার থেকেই ‘আমরণ’ অনশনে বসলেন ছয় জন জুনিয়র ডাক্তার। তাঁদের মধ্যে তিন জনই মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গে যুক্ত। বাকিদের মধ্যে কেউ এসএসকেএম, কেউ আবার কেপিসি, আবার কেউ নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক-পড়ুয়া।
প্রথম দফায় অনশনে বসলেন জুনিয়র ডাক্তারদের ছ’জন। তব সেই তালিকায় নেই আরজি করে কউ। জুনিয়র ডাক্তারেরা বলেন, ‘‘দাবি পূরণ না হলে বা মৃত্যু না হলে অনশন চলবে। যাঁরা অনশনে বসছেন, তাঁরা নিজেদের উপর আত্মবিশ্বাসী। তবে তাঁদের কিছু হলে দায় রাজ্য সরকারের। আপতত আজকে যাঁরা অনশনে বসলেন, তাঁদের মধ্যে আরজি করের কেউ নেই।’’
অনশনের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে বিশেষ পদক্ষেপ করছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁরা জানালেন, স্বচ্ছতা বজায় রাখতে সিসি ক্যামেরা বসানো হবে অনশন মঞ্চে। সেখানে কী হচ্ছে, তা সবাই দেখতে পাবেন বলে জানান আন্দোলনকারীরা।
জুনিয়র ডাক্তারেরা বলেন, ‘‘২৪ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা পর পেলাম শুধুই হুমকি। উৎসবে ফিরতে বলা হচ্ছে, তবে আমরা সেই মানসিকতায় নেই। আজ থেকেই আমরণ অনশনে বসছি আমরা। আমরা কাজে ফিরছি কিন্তু খাবার খাব না।’’
সিবিআইয়ের উপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখতে পারছেন না জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁদের কথায়, ‘‘সিবিআইয়ের তদন্তের উপর আমাদের আস্থা ছিল। কিন্তু এখন বলছি সম্পূর্ণ আস্থা নেই। আদালতে যে শুনানি হচ্ছে তাতে বোঝা যাচ্ছে না, তদন্ত ঠিক কোন পর্যায়ে রয়েছে।’’
জুনিয়র ডাক্তারেরা বলেন, ‘‘জয়নগরের ঘটনাই পরিষ্কার করে দিয়েছে কেউ কোথাও সুরক্ষিত নন। ডাক্তার, রোগীদের সুরক্ষার মতো দাবি নিয়ে আমরা এগিয়েছি। কিন্তু নিরাপত্তা এখনও অধরা।’’
সময়সীমা শেষ হতেই জুনিয়র ডাক্তারেরা সাংবাদিক বৈঠক শুরু করলেন। তাঁদের কথায়, ‘‘নির্যাতিতার ন্যায়বিচার এখনও অধরা।’’
আর মাত্র কয়েক মিনিট। তার পরই শেষ হবে সময়সীমা। তবে এখনও পর্যন্ত রাজ্য সরকারের তরফে কোনও সাড়া মেলেনি। কথা মতো অনশনে বসার প্রস্তুতি শুরু করলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। সূত্রের খবর, ধর্মতলায় সাংবাদিক বৈঠক করে পরের ধাপের আন্দোলন ঘোষণা করতে পারেন তাঁরা।
জুনিয়র ডাক্তারদের দেওয়া সময়সীমা শেষ হতে বাকি আর মাত্র আধ ঘণ্টা। তার পরই আন্দোলনকারী নিজেদের পরবর্তী পদক্ষেপ ঘোষণা করবেন।
ভিড় বাড়ছে অবস্থান মঞ্চের সামনে —নিজস্ব চিত্র।
জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্নামঞ্চে আসছে আরও তক্তা, ত্রিপল। সেই সঙ্গে অবস্থান মঞ্চ আরও বৃদ্ধি করতে বাঁশও আনা হচ্ছে। তবে বাঁশবোঝাই সেই গাড়ি আটকে দিয়েছে পুলিশ, অভিযোগ জুনিয়র ডাক্তারদের। তা নিয়েই দু’পক্ষের মধ্যে বচসা শুরু হয়। চলে তর্কাতর্কি। পুলিশের বক্তব্য, অবস্থানস্থলে যথেষ্ট বাঁশ পড়ে রয়েছে। তাই নতুন করে প্রয়োজন নেই। পুলিশি বাধা পেয়ে জুনিয়র ডাক্তারেরা নিজেরাই বাঁশ বয়ে মঞ্চের কাছে আনছেন।
জুনিয়র ডাক্তারেরা বাঁশ বয়ে আনছেন। —নিজস্ব চিত্র।
জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্নামঞ্চের আশপাশে ধর্মতলা চত্বরে নজরদারি বৃদ্ধি করছে পুলিশ-প্রশাসন। বসছে সিসি ক্যামেরা।
সিসিটিভি লাগানো হচ্ছে ধর্মতলা চত্বরে। —নিজস্ব চিত্র।
ধর্মতলায় জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থানের অনুমতি দেয়নি কলকাতা পুলিশ। শুক্রবার রাত থেকে মেট্রো চ্যানেলের সামনে ধর্নায় বসেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। সেই কর্মসূচির জন্য পুলিশের অনুমতি চেয়ে ইমেল করা হয়েছিল। শনিবার সকালে সেই ইমেলের জবাব দিয়েছে লালবাজার। স্পষ্ট জানানো হয়, পুজোর আগে এই সময়ে ধর্মতলা এলাকায় ভিড় বেশি থাকে। তাই সেখানে অবস্থান কর্মসূচি চললে সাধারণ মানুষের সমস্যা হবে। ধর্মতলায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণেও সমস্যা হতে পারে। সেই কারণেই ডাক্তারদের কর্মসূচিতে অনুমতি দেওয়া যাচ্ছে না।
শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ সাংবাদিক বৈঠক করে জুনিয়র ডাক্তারেরা ঘোষণা করেছিলেন, ‘‘আমরা এই ঘড়ি নিয়ে এসেছি। প্রতি মিনিট, ঘণ্টার হিসাব হবে। তাই এই ঘড়ি অবস্থান মঞ্চে থাকবে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় যদি সরকার আমাদের দাবি না মানে, তবে আমরা জীবন বাজি রেখে আমরণ অনশন শুরু করব।’’