মদের বন্ধ দোকান খুলতে টালবাহানা

গ্রামে গ্রামে বিক্ষোভ শুরু হওয়ায় ভোটের আগে মদের সব নতুন দোকান রাতারাতি বন্ধ করে দিয়েছিল আবগারি দফতর।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৯ ০৪:৩৩
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

অনলাইনে জামাকাপড় কেনার মতো লোকসভা নির্বাচনের আগে ৭২ ঘণ্টায় মদের দোকানের লাইসেন্স পেয়ে গিয়েছিলেন অনেকেই। রাজ্য সরকার দু’মাসে প্রায় ৭৫০ বিলিতি মদের দোকান বিলিয়েছিল। এখনও অপেক্ষায় রয়েছেন অন্তত ৫০০ আবেদনকারী। কিন্তু গ্রামে গ্রামে বিক্ষোভ শুরু হওয়ায় ভোটের আগে মদের সব নতুন দোকান রাতারাতি বন্ধ করে দিয়েছিল আবগারি দফতর। ভোট মিটে গিয়েছে, কিন্তু দোকান খোলেনি। অনলাইনে লাইসেন্স দেওয়া স‌েই সব মদের দোকান এখন নবান্নের শাঁখের করাত হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Advertisement

কেন? কারণ, লাইসেন্স পাওয়া আবেদনকারীদের একাংশ দোকান খোলার অনুমতি চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন। এই ধরনের সাত-আটটি রিট পিটিশনের শুনানি শেষে বিচারপতি দেবাংশু বসাক গত ৩ জুলাই আবগারি কমিশনারকে নির্দেশ দেন, ‘ভোটের জন্য দোকানগুলি বন্ধ করা হয়েছিল। এখন ভোট শেষ হয়ে গিয়েছে। আবগারি কমিশনার দোকানগুলি খোলার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করুন। ১৫ দিনের মধ্যে সেই সিদ্ধান্ত জানান।’ আদালতের নির্দেশ আসার পরে ১৫ দিন পার হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আবগারি দফতর কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।

কেন এই পরিস্থিতি?

Advertisement

নবান্নের এক কর্তা জানাচ্ছেন, সরকারের সর্বোচ্চ স্তরে সিদ্ধান্ত নিয়েই মদের নতুন দোকানের লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সরকারের লক্ষ্য ছিল ২০০০ নতুন মদের দোকান খোলা। সেই অনুসারে অনলাইন আবেদন গ্রহণ করে দু’মাসের মধ্যে ৭৫০ দোকান চালু করা হয়। ৫০০ আবেদনকারী লাইসেন্স পেলেও দোকান চালু করতে পারেননি। আবেদন জমে রয়েছে আরও কয়েকশো। লোকসভা ভোটের আগে মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়েরা মদের দোকান নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কথা জানান। সর্বত্র মানুষ এই নিয়ে অসন্তুষ্ট বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তার পরেই সব নতুন দোকান বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

ভোটের কারণ দেখিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় ৭৫০ দোকান। লাইসেন্স প্রাপকদের একাংশ বলছেন, ‘‘আমরা সরকারি নিয়ম মেনে লাইসেন্স পেয়েছি। প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা লগ্নি করে দোকান খুলেছি। সরকার হঠাৎ দোকান বন্ধ করতে পারে না। সেই জন্যই আদালতে যেতে হয়েছে।’’

এমন শাঁখের করাতের নীচে পড়ে আবগারি কর্তারা দিশাহারা। বক্তব্য জানতে যোগাযোগের চেষ্টা হলে আবগারি কমিশনার রণধীর কুমার ফোন ধরেননি, মেসেজেরও জবাব দেননি। তবে আবগারি দফতরের এক কর্তার বক্তব্য, জিএসটি চালু হওয়ার পরে সরকারের নিজস্ব আয় বাড়ানোর দু’টি রাস্তা খোলা রয়েছে— মদ আর লটারি। প্রায় পাঁচ হাজার দোকান থেকে এখন সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা আদায় হয়। আরও দু’হাজার দোকান খোলা গেলে আয় পৌঁছবে ১৫ হাজার কোটিতে।’’ তা হলে কি সরকার বন্ধ নতুন দোকানগুলো আর খুলতে দেবে না? ‘‘নবান্ন যা বলবে, তা-ই হবে। তবে আদালত দোকান খোলার অনুমতি দিলে সরকার কত দিন আটকে রাখবে,’’ প্রশ্নচ্ছলে জবাব দিলেন ওই আবগারি-কর্তা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement