—প্রতীকী ছবি।
হাওড়ার বেলগাছিয়ায় আবর্জনার স্তূপে বিস্ফোরণের ঘটনা নতুন করে কলকাতা পুরসভার দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে। কলকাতা পুরসভাও একই ধরনের বিপদের আশঙ্কা উড়িয়ে দিতে পারছে না। কারণ, কলকাতার ডাম্পিং গ্রাউন্ডেও বিপুল পরিমাণে আবর্জনা জমে রয়েছে, যার নীচে ভূগর্ভে বিপজ্জনক মাত্রায় মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হচ্ছে। সম্প্রতি, পুরসভার কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের তরফে বিভাগীয় মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদার এবং পুরসভার কমিশনারকে এ বিষয়ে বিশদ রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, গরমের সময় আবর্জনার পাহাড় থেকে ধোঁয়া বেরোনো, আগুন ধরে যাওয়া এবং ধস নামার ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস লাগোয়া ধাপায় ধস কিংবা অগ্নিকাণ্ডের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে জনজীবন। এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না বিশেষজ্ঞেরা। কলকাতা শহর তো বটেই, এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে আবর্জনার স্তূপের পিছনের দিকে থাকা দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা।
কলকাতা পুরসভার মোট ৬০ একর জমিতে আবর্জনা ফেলা হয়, যার মধ্যে ৪০ একর জমিতে বর্তমানে দৈনিক প্রায় ৪ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য ফেলা হয়। এর পাশাপাশি বিধাননগর, নবদিগন্ত-কলকাতা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকা এবং পানিহাটি পুরসভার আবর্জনাও কলকাতার ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ফেলা হচ্ছে। যার দৈনিক পরিমাণ প্রায় ১ হাজার মেট্রিক টন। ফলে কলকাতার উপর বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। পুরসভার কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য পৃথকীকরণ ব্যবস্থা এবং কম্প্যাক্টর প্রযুক্তি ব্যবহার করা হলেও জঞ্জালের পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আবর্জনার স্তূপ জমতে জমতে ভূগর্ভে বিপুল পরিমাণে মিথেন গ্যাস তৈরি করছে, যা অত্যন্ত দাহ্য। যখন এই গ্যাসের পরিমাণ অতিরিক্ত হয়ে যায়, তখন তা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বিস্ফোরণের কারণ হতে পারে। গত কয়েক মাস ধরে কলকাতার ডাম্পিং গ্রাউন্ডের বিভিন্ন অংশ থেকে ধোঁয়া বেরোনোর ঘটনা ঘটছে, যা প্রমাণ করে যে মিথেন গ্যাসের ঘনত্ব বাড়ছে।
এ ছাড়া, পুরনো আবর্জনার স্তূপ পরিষ্কার না করে তার উপরে নতুন বর্জ্য ফেলার ফলে ভূগর্ভের চাপও ক্রমশ বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি একটি গুরুতর সমস্যা এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে বড়সড় বিপর্যয় ঘটতে পারে। পুরসভার আধিকারিকদের মতে, এই সমস্যা সমাধানের জন্য জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে:
১। জঞ্জালের পরিমাণ কমানো: অন্যান্য পুরসভার সঙ্গে আলোচনা করে তাদের নিজস্ব আবর্জনা ব্যবস্থাপনার প্রক্রিয়া গড়ে তুলতে হবে, যাতে কলকাতার উপর চাপ কমে।
২। বর্জ্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য করা: বর্তমানে ২০ একর জমি আবর্জনা মুক্ত করা হয়েছে। আরও জমি পুনর্ব্যবহারযোগ্য করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ করতে হবে।
৩। মিথেন গ্যাসের নিষ্কাশন: ভূগর্ভে মিথেন গ্যাসের সঞ্চয় কমানোর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে বিস্ফোরণের আশঙ্কা কমে।
৪। জলীয় স্প্রে ও পর্যবেক্ষণ: গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডাম্পিং গ্রাউন্ডে নিয়মিত জলীয় স্প্রে করা ও পর্যবেক্ষণ চালানো দরকার, যাতে আগুন লাগার আশঙ্কা কমানো যায়।
হাওড়ার বেলগাছিয়ার বিস্ফোরণ কলকাতা পুরসভার জন্যও সতর্কবার্তা। কলকাতার ডাম্পিং গ্রাউন্ডে যদি সময়মতো ব্যবস্থা না করা যায়, তা হলে আগামী দিনে বড়সড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকছে। পরিবেশবিদদের মতে, এখনই কঠোর পদক্ষেপ না করলে শুধু বিস্ফোরণ নয়, কলকাতার বেশ কিছু অংশে ভূমিধসের মতো বিপর্যয়ও ঘটতে পারে। এ জন্য প্রশাসনকে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।