ফরওয়ার্ড ব্লকের মিছিল। শনিবার। নিজস্ব চিত্র।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আসন্ন কলকাতা সফরে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) প্রশ্নে বিক্ষোভ দেখানোর প্রস্তুতি শুরু হল বাম শিবিরে। সেই সঙ্গে সব বাম দল তৎপর হয়ে পথে নামল সাধারণ ধর্মঘটের সমর্থনে। নব কলেবরে সিপিএমের ওয়েবসাইট উদ্বোধনের অনুষ্ঠানের অবসরে দলের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম শনিবার পরিকল্পনার ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘‘কর্নাটক, তামিলনাড়ুতে প্রধানমন্ত্রী যখন গেছেন, তাঁকে গো ব্যাক শুনতে হয়েছে। সর্বত্রই দেশের মানুষ মোদী সরকারে নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। কলকাতাতেও অন্য কিছু হওয়ার কথা নয়।’’ একই দিনে সিপিআ (এম-এল) লিবারেশনের রাজ্য সম্পাদক পার্থ ঘোষও ইঙ্গিত দিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী দেড় দিন কলকাতায় থাকাকালীন সিএএ এবং এনআরসি বাতিলের দাবিতে এখানে বিক্ষোভ কর্মসূচি নেওয়া হতে পারে।
অর্থনীতিতে মন্দা, কর্মসংস্থানের বেহাল দশা, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বন্ধের প্রতিবাদে এবং সিএএ, এনআরসি ও জাতীয় জনসংখ্যাপঞ্জির (এনপিআর) বিরোধিতায় আগামী ৮ জানুয়ারি, বুধবার দেশ জুড়ে ২৪ ঘণ্টার সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলি। সিপিএম, কংগ্রেস-সহ ২০টি দল এ রাজ্যে ওই ধর্মঘটকে সমর্থন করছে। সিএএ এবং এনআরসি-র বিরোধিতায় এবং ধর্মঘটের সমর্থনে এ দিন চাঁদনি চক এলাকার যোগাযোগ ভবন থেকে মৌলালির রামলীলা ময়দান পর্যন্ত মিছিল করে ফরওয়ার্ড ব্লক। গত ২৩ ডিসেম্বর উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির দলীয় কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে শিলিগুড়িতে মিছিল করেছিল তারা। এ দিন তাদের মিছিলে ছিলেন দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির কর্মী-সমর্থকরা।
মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়-সহ দেশের বিজেপি বিরোধী মুখ্য়মন্ত্রীদের চিঠি দিয়ে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন সিএএ এবং এনআরসি-র বিরুদ্ধে রাজ্যের বিধানসভাগুলিতে প্রস্তাব নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। তা হলে কি সিপিএম এবং তৃণমূল নেতৃত্বকে সিএএ, এনআরসি বিরোধী আন্দোলনে এক মঞ্চে দেখা যাবে? সেলিমের জবাব, ‘‘ওই চিঠিতে শুধু সিএএ এবং এনআরসি চালু না করার সিদ্ধান্ত বিধানসভায় নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর সদিচ্ছা থাকলে তিনি এই মর্মে সিদ্ধান্ত নিন। তবে রাস্তায় মিছিল করলেও তাঁরা ওই বিষয়ে ধর্মঘটের বিরোধিতা করছেন। এতেই তাঁর অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন থাকছে।’’ লিবারেশনের পার্থবাবু এ দিন মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে ওই ধর্মঘটের বিরোধিতা না করার আর্জি জানিয়েছেন। সিএএ এবং এনআরসি-র মোকাবিলায় বিজেপি বিরোধী দলগুলিকে নিয়ে বৈঠক ডাকার জন্যও মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছে লিবারেশন।
তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম অবশ্য সাফ বলেছেন, ‘‘ওঁদের ওই সব কথা ভাবের ঘরে চুরি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী ভাবে সিএএ এবং এনআরসি-র বিরুদ্ধে সব দলকে একজোট করার জন্য প্রথমেই এগিয়ে এসেছেন, সবার আগে বিধানসভায় এনআরসি-র বিরুদ্ধে প্রস্তাব পাশ করেছেন, তা গোটা দেশ জানে। কিন্তু বন্ধের বন্ধ্যা সংস্কৃতি আমরা কখনওই মানব না।’’