অধীর চৌধুরী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মহম্মদ সেলিম। ফাইল ছবি
‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন করল বাম ও কংগ্রেস। শনিবার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে নেতাজি জয়ন্তী পালনের অনুষ্ঠানে মমতাকে ‘অসম্মান’ করা হয়েছে বলে একযোগে সরব হলেন বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব।
নেতাজির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে একই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন মমতা। মমতা বক্তৃতা দিতে উঠলে দর্শকদের একাংশ থেকে ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান ওঠে। এই ঘটনার নিন্দা করে মমতার পাশে দাঁড়িয়েছেন বাম ও কংগ্রেস নেতারা। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘মমতার সঙ্গে আমাদের মতান্তর থাকতেই পারে। কিন্তু তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি যখন সরকারি মঞ্চে বক্তৃতা দিতে উঠলেন তখন দৃষ্টিকটু ভাবে স্লোগান দেওয়া হল। সরকারি মঞ্চকে দলীয় কর্মসূচিতে রূপান্তরের ঘটনা নিন্দনীয়।’’
ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে কংগ্রেসও। পরিকল্পিত ভাবে মমতাকে অপমান করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। শনিবার বহরমপুরে কংগ্রেস কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠকে অধীর বলেন, ‘‘মমতাকে শুধু ডেকে অপমান নয়, পরিকল্পিত ভাবে অপমানিত করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের অনুষ্ঠানের মধ্যে জয় শ্রী রাম ধ্বনি তোলা ঠিক নয়।’’ তবে বিজেপি-র এই উত্থানের পিছনে যে মমতাই দায়ী সে কথাও উল্লেখ করেন অধীর। তিনি বলেন, ‘‘মমতার সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধ আছে ও থাকবে। কিন্তু এই মমতার জন্যই বিজেপি দলের আজকে এত রমরমা। কিন্তু অপমান করার অধিকার বিজেপি-র আছে বলে মনে করি না। এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা করছি।’’
দর্শকদের মধ্যে বেশির ভাগই বিজেপি ও আরএসসের কর্মী, এমন দাবি করেন সেলিম। তাঁর কথায়, ‘‘সরকারি খরচায় বিজেপি, আরএসএসের লোকেদের জমায়েত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুপ্রেরণাতেই তাঁরা নেতাজি স্মরণ অনুষ্ঠানে জয় শ্রী রাম স্লোগান দিয়েছে।’’ বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুও বিবৃতি দিয়ে এই ঘটনার নিন্দা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘শনিবার কলকাতায় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মবার্ষিকী পালনের সরকারী অনুষ্ঠানে যে স্লোগান তোলা হয়েছে তা অনুচিত। মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ দেওয়ার সময় এই অন্যায় কাজ করা হয়েছে। রাজ্যের পক্ষে মর্যাদাহানিকর কাজ হয়েছে। এই ঘটনা নিন্দনীয়। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকেও মনে রাখতে হবে সরকারী অনুষ্ঠানকে রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে পরিণত করা ঠিক নয়।’’ একইসুরে ওই ঘটনার প্রতিবাদ জানান বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘সরকারি অনুষ্ঠানকে দলীয় অনুষ্ঠানে পরিণত করা বিজেপির এই অসভ্যতার তীব্র নিন্দা করছি। এটা অসম্মানজনক, গনতান্ত্রিক শিষ্ঠাচার বিরোধী। এটা মেনে নেওয়া যায় না। প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে কার্যত রাজ্যবাসীকেই অসম্মানিত করা হয়েছে।’’ নেতাজি জয়ন্তী অনুষ্ঠানের নামে এটা কার্যত নেতাজির ভাবধারাকে কলুষিত করা হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।