২৬শে নভেম্বরের ধর্মঘটের সমর্থনে ধর্মতলা থেকে হেদুয়া পর্যন্ত বাম-কংগ্রেসের মিছিল। সোমবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী
সর্বাত্মক ধর্মঘটের ডাক বিজেপি-পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে। তবে সাম্প্রতিক কালের নজির মাথায় রেখে রাজ্যের শাসক তৃণমূলের দিক থেকে ‘বাধা’ আসবে ধরে নিয়েই ধর্মঘটের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাম শিবির। ধর্মঘটের সমর্থনে কলকাতায় পথে নেমে সোমবার তেমন ইঙ্গিতই দিলেন বাম নেতৃত্ব। মিছিলে সঙ্গে ছিলেন কংগ্রেস নেতারাও। তৃণমূল অবশ্য ধর্মঘটের বিরোধিতার কথা বললেও কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ২৬ নভেম্বর আলাদা করে পথে নেমে প্রতিবাদ করবে বলে জানিয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের নানা ‘জন-বিরোধী নীতি’র প্রতিবাদে ও ৭ দফা দাবি নিয়ে আগামী ২৬ তারিখ, বৃহস্পতিবার দেশ জুড়ে সাধারণ ধর্মঘট ডেকেছে কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলি। বিভিন্ন কৃষক সংগঠন ধর্মঘটকে সমর্থন করছে, এ রাজ্যে তারা ওই দিন গ্রামীণ বন্ধেরও ডাক দিয়েছে। বাংলায় কংগ্রেস ও বাম দলগুলি সক্রিয় ভাবে ধর্মঘটে শামিল হওয়ার ঘোষণা হয়েছে।
এই প্রেক্ষিতেই তৃণমূল সাংসদ এবং আইএনটিটিইউসি-র সভানেত্রী দোলা সেনের বক্তব্য, ‘‘বাংলার শ্রমজীবী মানুষ কেন্দ্রীয় সরকারের দেশ বিক্রির নীতির বিরুদ্ধে। এই লড়াই আমরা লড়ছি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে। কিন্তু সব কিছু সচল রেখেই আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রমিক-বিরোধী, কৃষক-বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে ধারাবাহিক প্রতিবাদ চালিয়ে যাব।’’ বাংলায় সে দিন সব কিছু খোলা থাকবে এবং তার পাশাপাশি কেন্দ্র-বিরোধী প্রতিবাদও চলবে বলে তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য। শাসক দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও জানিয়েছেন, ২৬ তারিখ তৃণমূল কর্মীরা রাজ্য জুড়ে কেন্দ্রের নানা নীতির বিরুদ্ধে মিছিল করবেন।
আরও পড়ুন: রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য প্রথম দফায় ছ’লক্ষ টিকা দাবি
ধর্মঘটের সমর্থনে এ দিন সন্ধ্যায় ধর্মতলা থেকে হেদুয়া পর্যন্ত মিছিল ছিল শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকে। মিছিলে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। মিছিলের শেষের দিকে বাম নেতা বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র, মহম্মদ সেলিম, মনোজ ভট্টাচার্য প্রমুখের পাশাপাশিই ছিলেন কংগ্রেসের প্রদীপ ভট্টাচার্য, শুভঙ্কর সরকার, অমিতাভ চক্রবর্তীরা। প্রদেশ যুব কংগ্রেস সভাপতি শাদাব খান-সহ কংগ্রেসের কলকাতার একাধিক জেলা সভাপতি এবং কর্মী-সমর্থকেরা শামিল হয়েছিলেন মিছিলে। ধর্মতলা থেকে লেনিন সরণি, নির্মলচন্দ্র দে স্ট্রিট, কলেজ স্ট্রিট, বিধান সরণি ধরে মিছিলের জেরে মধ্য ও উত্তর কলকাতায় যান চলাচলে জট পাকিয়েছিল বেশ কিছু ক্ষণ।
ধর্মঘটের কারণ ব্যাখ্যা করে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমানবাবু বলেন, ‘‘ঐতিহাসিক সংগ্রাম করে ৮ ঘণ্টা কাজের যে অধিকার অর্জিত হয়েছিল, তাকেই অগ্রাহ্য করে কেন্দ্রীয় সরকার এখন শ্রমিকদের ১২ ঘণ্টা কাজ করিয়ে শ্রমদাসে পরিণত করতে চাইছে। অন্য দিকে, কৃষি ক্ষেত্রকে তুলে দিতে চাইছে কর্পোরেটের হাতে, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিক্রি করে দিচ্ছে। এ সবের প্রতিবাদেই ২৬ তারিখের ধর্মঘট।’’
আরও পড়ুন: গৌতমের গাড়ি বিক্রি করতে চেয়ে কোর্টে ইডি
অতীতে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ডাকা ধর্মঘট পালনে তৃণমূল বাধা দিয়েছে বলে জানিয়ে বিমানবাবুদের আহ্বান, তেমন বাধা এলে তা মোকাবিলা করেই ধর্মঘট হবে। মিছিল শেষে প্রধানমন্ত্রীর কুশপুতুল পুড়িয়ে কেন্দ্র ও বিজেপি-বিরোধী বক্তৃতা করেন শ্রমিক নেতা অনাদি সাহু, অশোক ঘোষেরা।