প্রতীকী ছবি।
দেশজোড়া সাধারণ ধর্মঘটের দিনই আসন্ন পুর নির্বাচনে বাম-কংগ্রেসের জোট বাঁধার সম্ভাবনার পথ তৈরি হয়ে গিয়েছিল। এবার সেই পথ পাকা করে জোটকে চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেল আলিপুরদুয়ারে।
জেলার বাম নেতাদের বক্তব্য, দিন কয়েকের মধ্যেই ফ্রন্টের বিভিন্ন শরিক দলের জেলা নেতারা নিজেদের মধ্যে বৈঠকে বসতে চলেছেন। সেখানেই আসন্ন আলিপুরদুয়ার পুর নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে লড়াই নামার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলার সম্ভাবনা প্রবল।
শেষবার আলিপুরদুয়ার পুরসভায় নির্বাচন হয়েছে ২০১৩ সালে। যে নির্বাচনে লড়াই ছিল মূলত ত্রিমুখী। বাম, কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে। নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর দেখা যায়, মোট ২০টি ওয়ার্ডের মধ্যে বামেরা আটটিতে এবং কংগ্রেস ও তৃণমূল ৬টি করে ওয়ার্ডে জয়লাভ করে। বোর্ড গঠনের দিন কংগ্রেস কাউন্সিলররা অনুপস্থিত ছিলেন। ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিচারে আলিপুরদুয়ারে পুরবোর্ড গঠন করে বামেরা। কিন্তু এক বছরের মধ্যেই কংগ্রেস কাউন্সিলররা দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। ফলে এই পুরসভা তৃণমূলের দখলে চলে যায়।
২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে আলিপুরদুয়ার পুরসভার নির্বাচিত বোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত নির্বাচন হয়নি। তবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ধারণা, আগামী তিন-চার মাসের মধ্যেই এই নির্বাচন হয়ে যাবে। তবে গত কয়েক বছরে জেলার অন্য জায়গার মতোই আলিপুরদুয়ার শহরেও রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে গিয়েছে। গত লোকসভা নির্বাচনে আলিপুরদুয়ার শহরেও সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে উঠে আসে বিজেপি। অন্যদিকে, ওই নির্বাচনে আলিপুরদুয়ারে ভরাডুবি হয় বাম ও কংগ্রেসের।
রাজনৈতিক সূত্রের খবর, এর পরই বাম ও কংগ্রেস— দুই শিবিরের নিচুতলা থেকে আসন্ন পুর নির্বাচনে আলিপুরদুয়ারে জোট গড়ে লড়াইয়ের দাবি তোলেন নেতা-কর্মীদের অনেকেই। গত ৮ জানুয়ারি দেশজোড়া সাধারণ ধর্মঘটের পর যে দাবি আরও জোরাল হয়। ওই ধর্মঘটে দুই শিবিরের নেতা-কর্মীদের দাঁতে দাঁত কামড়ে একসঙ্গে রাস্তায় নামতে দেখা যায়। আর এরপরই আসন্ন পুর নির্বাচনে একসঙ্গে লড়াই করার ব্যাপারে সিপিএম ও কংগ্রেস নেতাদের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনাও শুরু হয়।
বাম নেতারা জানিয়ছেন, ‘এজেন্ডা’ না থাকলেও ফ্রন্টের শেষ বৈঠকে বিষয়টি আলোচনায় উঠে এসেছিল। ওই বৈঠকে পুরসভায় কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করা নিয়ে অন্য শরিক দলের নেতাদের ভাবতে আর্জি জানান সিপিএম নেতারা। ফ্রন্ট সূত্রের খবর, শরিক দলের বেশিরভাগ নেতাও এই জোট চাইছেন। ফলে আলিপুরদুয়ারের পুর নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস জোট এখন কার্যত সময়ের অপেক্ষা।
জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক কৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘চলতি মাসেই জেলা বামফ্রন্টের বৈঠক বসবে। সেই বৈঠকেই পুর নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাঁধার বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’ আরএসপির জেলা সম্পাদক সুনীল বণিক বলেন, ‘‘শেষ তিনটি উপনির্বাচনে বাম-কংগ্রেস একসঙ্গেই লড়াই করেছে। সেটা মাথায় রেখেই আলিপুরদুয়ার পুর নির্বাচনেও একসঙ্গে লড়াই করার চেষ্টা করা হবে।’’
জেলা কংগ্রেস সভাপতি গজেন বর্মণ বলেন, ‘‘আসন্ন পুর নির্বাচনে বামেদের সঙ্গে জোট নিয়ে আমরা মানসিক ভাবে প্রস্তুত। এতে দুই পক্ষেরই ভাল হবে।’’