কলকাতা হাই কোর্ট (বাঁ দিকে), মুখ্যসচিব বিপি গোপালিক (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করার অনুমতি কে দেন, মুখ্যসচিব না রাজ্যপাল? শুনানিতে এই প্রশ্ন তুলে দিলেন নিয়োগ মামলায় ধৃত সূবীরেশ ভট্টাচার্যের আইনজীবী। কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি গৌরাঙ্গ কান্তের ডিভিশন বেঞ্চের কাছে সুবীরেশের আইনজীবীর সওয়াল, যে হেতু এই মামলার ধৃতদের মধ্যে অন্তত দু’জনের নিয়োগকর্তা রাজ্যপাল, তাই তাঁদের বিরুদ্ধে বিচার শুরুর অনুমোদন দেওয়া বা না দেওয়া রাজ্যপালের এক্তিয়ারে পড়ে, মুখ্যসচিবের নয়।
নিয়োগ মামলায় বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করতে রাজ্যের মুখ্যসচিবের প্রয়োজনীয় অনুমতি এখনও আসেনি। ফলে, শুরু করা যায়নি নিয়োগ মামলার তদন্তপ্রক্রিয়া। এত দিন আদালতে এ কথা জানিয়ে এসেছে সিবিআই। আদালত একাধিক বার মুখ্যসচিবকে অবস্থান জানানোর কথা বলেছে। গত মঙ্গলবার ডিভিশন বেঞ্চ মুখ্যসচিব বিপি গোপালিকের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করারও হুঁশিয়ারি শুনিয়েছিল। কিন্তু শুক্রবার এই মামলার শুনানিতে নিয়োগ মামলায় ধৃত সুবীরেশ ভট্টাচার্যের আইনজীবী সওয়াল করলেন, যে হেতু এই মামলায় ধৃত অন্তত দু’জনের নিয়োগকর্তা রাজ্যপাল, তাই এ ক্ষেত্রে বিচারপ্রক্রিয়া চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার অনুমতিও দেবেন রাজ্যপাল, মুখ্যসচিব নন। সুবীরেশের আইনজীবীর এই সওয়ালে নিয়োগ মামলায় তৈরি হল নতুন ধন্দ। আগামী মঙ্গলবার শুনানিতে হাজির হয়ে এ বিষয়ে নিয়ম কী রয়েছে তা আদালতকে জানাবেন অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল। সে দিন থাকতে হবে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলকেও।
সুবীরেশের আইনজীবীর দাবি, নিয়োগ মামলায় ধৃত এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়কে ওই পদে নিয়োগ করেছিলেন রাজ্যপাল। সে ক্ষেত্রে এই দু’জনের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করার জন্য যে প্রয়োজনীয় অনুমোদন তা মুখ্যসচিব নন, দেবেন রাজ্যপাল।
প্রসঙ্গত, সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর ক্ষেত্রে মুখ্যসচিবের অনুমোদন প্রয়োজন বলে শুরু থেকেই আদালতকে জানিয়ে এসেছে সিবিআই। সুবীরেশের আইনজীবীর সওয়ালে প্রশ্নের মুখে পড়ে গিয়েছে তাদের দাবিও। বিস্ময় প্রকাশ করেন বিচারপতিরাও। তাঁরাও সিবিআইয়ের আইনজীবীর কাছেই এ বিষয়টির ব্যাখ্যা জানতে চান। রাজ্যপাল না মুখ্যসচিব— বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর ক্ষেত্রে অনুমোদন দেওয়ার অধিকারী কে তা নিয়ে আদালতকে জানাতে আগামী মঙ্গলবার দিন নির্দিষ্ট করেছে হাই কোর্ট। সে দিন আদালতকে বিস্তারিত জানাতে হবে অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেলকে। মঙ্গলবার শুনানিতে হাজির থাকতে হবে রাজ্যের এজিকেও।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআইয়ের হাত থেকে জামিন চেয়ে হাই কোর্টে আবেদন করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়েরা। ওই জামিনের বিরোধিতা করে সিবিআই জানায়, রাজ্যের মুখ্যসচিব অনুমতি দেননি, তাই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা যায়নি। তারা বার বার রাজ্যের কাছে আবেদন করেছে। কিন্তু কোনও জবাব মেলেনি। ১০ মাস ধরে ওই আবেদন পড়ে রয়েছে। তার পরই বিষয়টি নিয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সিবিআই। সেই মামলাতেই নতুন করে ধন্দ তৈরি হল সুবীরেশের আইনজীবীর সওয়ালে।