কুণাল ঘোষ এবং পার্থ চট্টোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র ।
বিরোধী দলগুলির থেকে তৃণমূলের বেশি ক্ষতি করছেন কুণাল ঘোষ। কুণালকে আগেই দল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া উচিত ছিল! মন্তব্য করলেন তৃণমূলেরই বহিষ্কৃত নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শুনানির জন্য শুক্রবার নগর দায়রা আদালতে হাজির করানো হয় পার্থকে। সেখানেই এই মন্তব্য করেন পার্থ। বুধবার বিকেলে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল একটি প্রেস বিবৃতি জারি করে দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে দেয় কুণালকে। এর পর বৃহস্পতিবার তৃণমূলের পঞ্চম দফার তারকা প্রচারকদের নামের তালিকা থেকে বাদ পড়েন কুণাল। দলীয় সূত্রের দাবি, কুণালকে দলীয় পদ থেকে এবং তারকা প্রচারকের তালিকা থেকে অপসারণে সায় ছিল শীর্ষনেতৃত্বের। এ বার সেই বিষয়েই মুখ খুলতে দেখা গেল কুণালের একদা সহকর্মী পার্থকে। কুণালকে দলীয় পদ থেকে সরানো নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে পার্থ বলেন, ‘‘কুণাল আগে চিটফান্ডের হিসাব দিক। ওকে অনেক আগেই তাড়িয়ে দেওয়া উচিত ছিল। আমি যখন বাইরে ছিলাম, তখন বলেছিলাম বিরোধী দলগুলোর চেয়ে কুণাল ঘোষ আমাদের দলে থেকে দলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে। জেলে এসে জানতে পারলাম কতটা ঘৃণ্য কাজ করেছে।’’ ঘনিষ্ঠ মহলে পার্থ আরও জানিয়েছেন, কুণালকে পদ থেকে বাদ দেওয়া নিয়ে যা চলছে তাতে ভোটের আগে দলের কোনও ক্ষতি হবে না, কোনও প্রভাবও পড়বে না। কুণালকে তৃণমূলে জায়গা দেওয়া ভুল হয়েছে বলেও না কি ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন পার্থ।
নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ২০২২ সালের ২৩ জুলাই পার্থকে গ্রেফতার করেছিল ইডি। এখন তিনি প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি। পার্থ গ্রেফতার হওয়ার পরেই তাঁর মন্ত্রিত্ব যায়। তাঁকে দলীয় সমস্ত পদ থেকে বহিষ্কার করে তৃণমূল নেতৃত্ব। সেই সময় পার্থকে একাধিক বার আক্রমণ করতে দেখা গিয়েছিল কুণালকে। তৃণমূলের অন্দরে পার্থ-কুণালের ‘সম্পর্কের’ কথা অজানা নয়। সারদা মামলায় জেলে ছিলেন কুণাল ঘোষ। সে সময় বার বার বলেছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র’ হয়েছে। সেই ‘ষড়যন্ত্র’-এর জন্য পার্থকেও দায়ী করেছিলেন কুণাল। পার্থ গ্রেফতার হওয়ার পর কুণালকে এক বার বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘আমি প্রথম দিন থেকে বলেছি ষড়যন্ত্র। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে পার্থও ছিলেন। আমার জেল জীবনে যা হয়েছিল, আমি যখন বলেছিলাম চক্রান্ত, তখন এই পার্থ এবং কেউ কেউ বলেছিলেন আমি নাকি পাগল। এই পার্থ আমায় দলবিরোধীও বলেছিলেন। অথচ এই পার্থই তখন থেকে অপা, অমুক-তমুক করে বেরিয়েছিলেন।’’
সম্প্রতি সংবাদমাধ্যম ‘এবিপি আনন্দ’-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কুণালকে এ-ও বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘পার্থ চট্টোপাধ্যায় বা তাঁর নাম করে কেউ কেউ টাকা তুলছেন এটা দলের কাছে অনেক আগে থেকেই খবর ছিল।’’ এমনকি ২০২১ সালের ভোটের আগে থেকেই দল বিষয়টি জানত বলে তিনি জানিয়েছিলেন। আর সেই কারণেই পরে পার্থকে শিক্ষা দফতরের মন্ত্রীর পদে বসানো হয়নি বলেও তিনি মন্তব্য করেন। এ বার কুণালকে দলীয় পদ থেকে সরানো নিয়ে পাল্টা আক্রমণ করতে দেখা গেল পার্থকে।
এসএসসি মামলায় ২৬ হাজার চাকরি বাতিল হওয়ার দায় কার? শুক্রবার এই প্রশ্নও করা হয় পার্থকে। যদিও তিনি কোনও উত্তর দেননি।