নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
স্কুল সার্ভিস কমিশনের অধীনে ২৫,৭৫৩টি চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। এর পরে সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে রাজ্য সরকার। এখনও পর্যন্ত সে নির্দেশে স্থগিতাদেশ পায়নি রাজ্য। লোকসভা ভোটের আবহে আদালতের এই নির্দেশে তৃণমূল ‘চাপে’ রয়েছে। এ বার সেই ‘চাপ’ আরও বাড়িয়ে দিতে চাইলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জানিয়ে দিলেন, তিনি রাজ্য বিজেপিকে ইতিমধ্যেই এমন নির্দেশ দিয়েছেন যে, চাকরি হারানো যোগ্যদের আইনি ও সামাজিক লড়াইয়ে পাশে থাকতে হবে দলকে। তিনি এর জন্য একটি আইনি পরামর্শদাতা দল এবং সমাজমাধ্যম দল গঠনের নির্দেশও দিয়েছেন রাজ্য নেতৃত্বকে। সে কাজ হওয়ার গ্যারান্টিও দিয়েছেন মোদী।
শুক্রবার দিনভর মোদীর কর্মসূচি রাজ্যে। প্রথম সভাটি ছিল বর্ধমানে। প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সমর্থনে ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। মোদী প্রচার করেন বর্ধমান পূর্ব আসনের প্রার্থী অসীম সরকারের জন্যও। ওই সভায় মোদী প্রথম দিকে তাঁর সরকারের কৃতিত্বের কথা বলার পাশাপাশি জাতীয় স্তরে বিরোধী জোট তথা কংগ্রেসকে আক্রমণ করেন। আর পরের অংশে আক্রমণ শানান তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সেই প্রসঙ্গেই এসএসসি রায়ের কথা আসে। আর তার প্রেক্ষিতেই মোদী বলেন, ‘‘যতই নির্বাচনের ব্যস্ততা থাকুক, রাজ্য নেতারা এই কাজ করবেন। যাঁর পাপ করেছেন তাঁদের সাজা হোক। কিন্তু অনেক সৎ রয়েছেন। যাঁদের কাছে সব ডিগ্রি ঠিকঠাক রয়েছে, তাঁদের জন্য পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি যে কাজ করবে, সেটা মোদীর গ্যারান্টি।’’
শুক্রবার মোদী তাঁর বক্তৃতা শেষ করেন এসএসসি দুর্নীতি নিয়েই। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া প্রায় ৫০ কোটি নগদ টাকা উদ্ধারের প্রসঙ্গও টানেন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলের তোলাবাজেরা শিক্ষকের চাকরিতে লাখ লাখ যুবদের ঠকিয়েছে। কতটা দুর্নীতি হয়েছে তা আপনারা জানেন। টাকা গুনতে গুনতে মেশিন হাঁপিয়ে গিয়েছিল। কত কত টাকা চুরি করেছে!’’ একই সঙ্গে বর্ধমানে মোদী বলেন, ‘‘এই ভ্রষ্ট নেতাদের মানুষ চেনে এবং সব জেনে গেছে। কিন্তু আমি মনে করি চাকরি- দুর্নীতিতে যাঁরা ভুগেছেন, তাঁদের জীবন খুবই কঠিন হয়ে গিয়েছে।’’
এর পরেই চাকরিহারাদের প্রসঙ্গে ঢোকেন মোদী। মঞ্চে বসা সুকান্তকে দেখিয়ে বলেন, ‘‘এখান রাজ্য সভাপতি বসে রয়েছেন। তাঁকে আমি একটি পরামর্শ দিচ্ছি যে, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে অনেক নির্দোষও অসুবিধায় পড়েছেন। অনেকে সত্যি করেই শিক্ষকের চাকরি পাওয়ার যোগ্য। বাকিদের পাপের কারণে এই নির্দোষরা সমস্যায় পড়েছেন। যাঁদের চাকরি গিয়েছে তাঁদের মধ্যে সৎ এবং যোগ্যদের যাতে আমরা সাহায্য করতে পারি, তা দেখতে রাজ্য নেতৃত্বকে বলেছি।’’ কী ভাবে সেই কাজ করতে হবে, তা-ও বলে দেন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘আমি বাংলার বিজেপি নেতৃত্বকে বলেছি, রাজ্য স্তরে একটি আইনি সেল এবং একটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম বানাতে হবে। এর মাধ্যমে তাঁদের সুবিধা হবে যাঁরা সব কিছু ঠিকঠাক থাকা সত্ত্বেও দুর্নীতির কারণে চাকরি হারিয়েছেন। আমাদের দল তাঁদের আইনি সাহায্য করবে এবং ন্যায় দেওয়ার জন্য সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে কাজ করবে। আমরা সৎ মানুষদের পাশে থাকব।’’