(বাঁ দিকে) মহম্মদ সেলিম। অধীর রঞ্জন চৌধুরী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
ভোট ঘোষণা হওয়ার পরে নয়। রাজ্য সিপিএমের একটি বড় অংশ চাইছে, লোকসভা ভোটের কয়েক মাস আগেই কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করে ফেলতে। চলতি সপ্তাহের শেষ বা আগামী সপ্তাহের গোড়া থেকে প্রথমে বামফ্রন্ট শরিকদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে দেবে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। নভেম্বরের মধ্যে ফ্রন্টের মধ্যেকার প্রাথমিক বোঝাপড়া সেরে নিয়েই কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে দিতে চাইছে সিপিএম রাজ্য নেতৃত্ব।
রাজ্য সিপিএমের একটি বড় অংশ চাইছে, কংগ্রেসের সঙ্গে যেন অহেতুক জেদাজেদিতে দল না-যায়। ২০১৯-এর মতো পরিস্থিতি যাতে না-হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে চাইছেন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বড় অংশই। কী ভাবে ভাবছেন তাঁরা? প্রশ্ন শুনে সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রবীন দেব আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, ‘‘তৃণমূল এবং বিজেপি বিরোধী ভোটকে একত্রিত করতে আমরা আন্তরিক ভাবে চেষ্টা করব। এটা একটা দলের বিষয় নয়। আলোচনার ভিত্তিতেই সবটা যথাযথ ভাবে হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’’
শুধু নির্বাচনী সমঝোতা বা জোট গঠনই নয়, নির্বাচনী ঐক্যকে এ বার রাস্তার আন্দোলনের ঐক্যের উপরে দাঁড় করানোর পক্ষপাতী সিপিএমের অনেকেই। আগের ভোটগুলির অভিজ্ঞতা থেকে রাজ্য সিপিএম চাইছে, ভোটে যাওয়ার আগে কয়েক মাস যাতে যৌথ আন্দোলনেও নামা যায়।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে সিপিএম ও কংগ্রেসের মধ্যে জোট হব হব করেও হয়নি। শেষে তিক্ততার জায়গায় পৌঁছেছিল। তৎকালীন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি (বর্তমানে প্রয়াত) সোমেন মিত্রের সঙ্গে প্রকাশ্য বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। সিপিএম এ বার আর তার পুনরাবৃত্তি চাইছে না।
আরও একটি কারণে আগেভাগে কংগ্রেসের সঙ্গে রাস্তার আন্দোলনে নামতে চাইছেন সিপিএম নেতাদের একাংশ। তাঁদের ব্যাখ্যা, সর্বভারতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ গঠিত হয়েছে। সেখানে তৃণমূলও রয়েছে। কংগ্রেস হাইকমান্ডের সঙ্গে কালীঘাটের সখ্য অজানা নয়। ১০ জনপথ যাতে কোনও ভাবে প্রদেশ কংগ্রেসকে তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতায় হাঁটতে ‘বাধ্য’ করতে না-পারে তা রাস্তার আন্দোলন দিয়েই সুনিশ্চিত করতে চাইছে সিপিএম। যে আন্দোলনের অন্যতম ইস্যু হবে রাজ্যের বিবিধ ক্ষেত্রের দুর্নীতি। প্রদেশ কংগ্রেসের অন্যতম মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায় বলেন, ‘‘সিপিএম একটি স্বতন্ত্র দল। তারা কী করবে তাদের ব্যাপার। তবে ২০১৬ থেকে আমরা কখনও জোট ভাঙিনি। গত পঞ্চায়েত ভোটেও অনেক জায়গায় নিচুতলায় সমঝোতা করে লড়াই হয়েছে। আমরা চাই রাজ্যে বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোট যাতে বিভাজিত না হয়।’’
কংগ্রেস এবং বামফ্রন্টের শরিক দলগুলির পাশাপাশি ফ্রন্টের বাইরে থাকা বাম দলগুলিকে নিয়েও নির্বাচনী আলোচনা চাইছে রাজ্য সিপিএম। যদিও সেই আলোচনায় সিপিআইএমএল (লিবারেশন), এসইউসির মতো ‘তৃণমূলের প্রতি নরম’ দল কতটা শামিল হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে সিপিএম নেতাদের।
সিপিএম একটি বিষয় আগেই ঠিক করেছে। তা হল, কিছু আসনকে ‘ফোকাস’ করে তারা লড়তে চায়। আসন ধরে কংগ্রেসের ভোট শতাংশ যোগ করে সেই হিসাব করছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। সেই অনুযায়ীই আলোচনা এগোতে চাইছে তারা। যদিও তৃণমূল এ সবে আমল দিচ্ছে না। শাসকদলের অন্যতম মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘শূন্যের সঙ্গে শূন্য যোগ করলে শূন্যই হয়। এই রাজ্যে বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএম সমার্থক।’’