মৃত লালন শেখের স্ত্রী রেশমা বিবি। ছবি: পিটিআই
তাঁর উপস্থিতিতেই লেখা হয়েছে এফআইআর। বৃহস্পতিবার এমনটাই দাবি করলেন, সিবিআই হেফাজতে মৃত বগটুইকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত লালন শেখের স্ত্রী রেশমা। বুধবার আদালতে সিবিআই অভিযোগ করেছে, লালনের মৃত্যুতে ৭ আধিকারিকের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের ঘটনায় ‘রাজ্যের মদত’ রয়েছে। ঘটনাচক্রে এর পরেই বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন রেশমা। পাশাপাশি, তিনি এ-ও জানিয়ে দিয়েছেন, স্বামীর দেহ কবর থেকে তুলে দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্তের জন্য অনুমতি দিতে চান না। বুধবার প্রাথমিক ভাবে দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্তের নির্দেশ দিলেও পরে তা স্থগিত করে দেয় হাই কোর্ট।
লালনের মৃত্যুর তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি। পাশাপাশি, সিবিআইয়ের ৭ আধিকারিকের বিরুদ্ধে খুন, তোলাবাজি-সহ নানা অভিযোগে অভিযোগ দায়ের করেছেন লালনের স্ত্রী রেশমা। তাঁর দায়ের করা এফআইআরে নাম রয়েছে সিবিআইয়ের ডিআইজি এবং এএসপি-সহ মোট ৭ জনের। সেই তালিকায় উল্লেখযোগ্য নাম সুশান্ত ভট্টাচার্য। ওই সিবিআই আধিকারিক গরু পাচার মামলার তদন্তকারী আধিকারিক। গরু পাচারকাণ্ডে বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে তিনি গ্রেফতার করেছিলেন। সুশান্ত ছাড়াও রয়েছে স্বরূপ দে-র নাম। তিনিও গরু পাচার মামলার তদন্তকারী অফিসার। বিষয়টি নিয়ে হাই কোর্টে গিয়েছে সিবিআই। বুধবার কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের এজলাসে সিবিআই দাবি করে, তাদের ৭ আধিকারিকের বিরুদ্ধে এফআইআরের ঘটনায় ‘রাজ্যের মদত’ রয়েছে। সিবিআইয়ের দাবি, রাজ্য চাইছে না যে তারা এখানকার বিভিন্ন মামলার তদন্ত করুক। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার লালনের স্ত্রী রেশমা বলেন, ‘‘আমি অসুস্থ ছিলাম। তাই আমি উপস্থিত থেকে এফআইআর লিখিয়েছি। সেখানে আমি বসেছিলাম। আমার স্বামীকে হুমকি দিয়েছিল যে, ওকে মেরে বড় মাথার নাম বার করবে। বড় মাথা হিসাবে কার নাম বলাতে চাইত সেটা একটা রহস্য। আমার স্বামীকে অত্যাচার করা হয়েছিল। এ কথা স্বামী আমাকে আদালতের লক আপে বলেছিল কাঁদতে কাঁদতে। তখন সে সুশান্ত ভট্টাচার্যের নামও বলেছিল। আমার স্বামীকে নির্মম ভাবে মারা হয়েছে। আমি আদালতের কাছে বিচার চাইছি।’’
বুধবার লালনের দেহ দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্ত করানোর কথা প্রাথমিক ভাবে বলেছিল আদালত। যদিও পরে দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্তের নির্দেশ স্থগিত করে দেওয়া হয়। এ নিয়ে রেশমা জানিয়েছেন, ‘‘আমি দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্তের জন্য অনুমতি দেব না। আমি সিআইডি তদন্ত চাই। আসল রহস্য বেরোক। তার পর আমি সিদ্ধান্ত নেব। আমি দেহ তুলতে দেব না।’’
অবশ্য আদালত যদি লালনের দেহ কবর থেকে তুলে দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্ত করার নির্দেশ দেয়, সে ক্ষেত্রে রেশমার আপত্তি গ্রাহ্য হবে কি না তা বিচার্য বিষয়। সাম্প্রতিক অতীতে এমনই জটিলতা তৈরি হয়েছিল হাওড়ার আনিস খানের মৃতদেহের দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্তের নির্দেশ ঘিরেও। প্রাথমিক ভাবে আনিসের দেহের দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্ত নিয়ে আপত্তি তুলেছিল তার পরিবার। দীর্ঘ টালবাহানার পর অবশেষে জেলা বিচারকের উপস্থিতিতে কবর থেকে তোলা হয় আনিসের দেহ।