Asansol Stampede

‘চুলোয় যাক কম্বল, প্রাণ বেঁচেছে সেটাই বড়’! এক বস্ত্রে বাড়ি ফেরা মেয়েকে নিয়ে বলছেন মা

শুভেন্দু টুইট করে দাবি করেন, কর্মসূচির কথা চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছিল পুলিশকে। কিন্তু চিঠিতে ছিল না কত ভিড় হতে পারে তার কোনও ইঙ্গিত। অনুষ্ঠানের অনুমতিই ছিল না বলে দাবি পুলিশের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২২ ১২:২০
Share:

পদপিষ্ট হওয়ার পর দিন সকালে এমনই দৃশ্য আসানসোলের কম্বল বিতরণের মাঠে। — নিজস্ব ছবি।

মাকে নিয়ে আসানসোলের রামকৃষ্ণ ডাঙার মাঠে কম্বল নিতে এসেছিলেন মেয়ে। কম্বল তো দূর অস্ত, নিজের পরনের শাড়িটুকুও খুলে গিয়েছে। পদপিষ্ট হওয়া থেকে বেঁচে গিয়ে এক বস্ত্রে বাড়িতে ফিরেছেন। পর দিন সকালে মেয়ের বস্ত্রের খোঁজে সেই মাঠেই ফিরে এসেছেন মা লক্ষ্মী বাদ্যকর। জোড় হাত তোলা আকাশের দিকে, প্রৌঢ়া বলছেন, ‘‘কম্বলের দরকার নেই। প্রাণে বেঁচেছে মেয়ে, সেটাই বড়।’’

Advertisement

বুধবার সন্ধ্যায় এই মাঠেই ঘটে গিয়েছে পদপিষ্ট হয়ে এক শিশু-সহ তিন জনের মৃত্যুর ঘটনা। তার পর পাল্লা দিয়ে চলছে রাজনৈতিক চাপান-উতোর। কিন্তু তাতে মন নেই সন্ধ্যায় কী ভাবে যেন প্রাণ ফিরে পাওয়া লক্ষ্মীদের। তিনি বলছেন, ‘‘পুলিশ ছিল। কিন্তু নেতারা চলে যাওয়ার পরই তাঁরাও চলে যান। তার পরই হুড়োহুড়ি বাড়তে থাকে। সবাই কম্বল দেওয়ার জায়গায় পৌঁছতে চাইছিলেন। বাঁশের ব্যারিকেড ভেঙে পড়ে। তার পর কী হল জানি না।’’

সঙ্গে ছিল মেয়ে, জামাই। তাঁদের সম্পর্কে লক্ষ্মী বলেন, ‘‘মেয়ের পরনের শাড়িটি খুলে গিয়েছিল। আর পাওয়া গেল না। ওই অবস্থায় এক বস্ত্রে মেয়ে বাড়ি ফিরেছে।’’ তার পরেই আকাশের দিকে হাতজোড় করে প্রৌঢা় বলেন, ‘‘আর আমাদের কম্বলের দরকার নেই। প্রাণে বেঁচে গিয়েছে মেয়ে, সেটাই বড়।’’

Advertisement

ছেলের বৌ ও মেয়েদের নিয়ে কম্বল নিতে এসেছিলেন আরও এক লক্ষ্মী। তাঁরও একই অভিজ্ঞতা। প্রাণ যে কী করে বাঁচল, সকালেও ভেবে পাচ্ছেন না তিনি। বলছেন, ‘‘এ ভাবে কম্বল দেয়! মানুষের প্রাণ চলে গেল। আমিও ভেবেছিলাম মরে যাব। কিন্তু বৌ পাশের পর্দা ছিঁড়ে আমাকে টেনে বার করে দেয়। তাতেই বেঁচে যাই। কিন্তু বৌ অজ্ঞান হয়ে যায়। ওঁকে নিয়ে এক বস্ত্রে, খালি পায়ে কী ভাবে যে বাড়ি ফিরেছি!’’ কর্মসূচি উপলক্ষে ব্যাপক ভিড় হয়েছিল, তা বলছেন সেখানে হাজির লোকজনই। লক্ষ্মীর কথায়, ‘‘এত ভিড় হয়েছিল কী বলব! ভিড়ের জন্যই কত লোকের প্রাণ গেল।’’

শিব চর্চা ও কম্বল বিতরণের কর্মসূচির আয়োজন করেছিলেন আসানসোল পুরনিগমের বিরোধী নেত্রী চৈতালি তিওয়ারি। অনুষ্ঠান যে করছেন তা জানিয়ে পুলিশকেও চিঠি দেওয়া হয়েছিল। বুধবার সন্ধ্যায় সেই কর্মসূচিতেই হাজির হয়েছিলেন শুভেন্দু। তিনি মাঠ ছেড়ে চলে যাওয়ার পরই হুড়োহুড়িতে পদপিষ্ট হয়ে এক শিশু-সহ তিন জনের মৃত্যু হয়। ঘটনার খবর পাওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই টুইটারে নিজের বক্তব্য লেখেন শুভেন্দু। সঙ্গে দেন পুলিশকে জানানোর একটি চিঠি। যদিও আসানসোল কমিশনারেটের কমিশনার সুধীর কুমারের দাবি, কর্মসূচির জন্য পুলিশি অনুমতিই ছিল না আয়োজকদের কাছে। স্বভাবতই দাবি, পাল্টা দাবি ঘিরে ক্রমশ আরও উত্তাপ বাড়ছে শিল্প শহরের।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, শিব চর্চা এবং কম্বল বিতরণের অনুষ্ঠানে ব্যাপক ভিড় হয়েছিল। কিন্তু তা সামলানোর মতো স্বেচ্ছাসেবক ছিল না আয়োজকদের তরফে। কিছু ক্ষণ ভিড় সামলানোর পর, শুভেন্দু মঞ্চ ছাড়তেই বেশির ভাগ পুলিশও মাঠ ছেড়ে চলে যায়। তার পরেই হুড়োহুড়ির ঘটনাটি ঘটে। পুলিশের প্রশ্ন, কর্মসূচিতে কত ভিড় হবে, পুলিশের কাছে অনুমতি চাওয়ার ক্ষেত্রে তা সবচাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু চৈতালির চিঠিতে তেমন কোনও বিষয় নেই। পাশাপাশি স্থানীয় থানায় চিঠিটি পৌঁছলেও, তার পর সেই অনুষ্ঠানের অনুমতি পুলিশ দিয়েছিল কি? তা-ও জানাননি শুভেন্দু। ফলে যথাযথ ভাবে পুলিশের গোচরে কর্মসূচির কথা আনা হয়েছিল কি না তা নিয়ে ধন্দ দেখা দিয়েছে।

তা হলে কি বিজেপি নেত্রী চৈতালি ও পুলিশ প্রশাসনের সমন্বয়ের অভাবের কারণেই ঘটে গেল এই দুর্ঘটনা? পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত সম্পূর্ণ হওয়ার পরই এ বিষয়ে মামলা দায়েরের পথে এগোবে তারা। দলীয় নেত্রীর আয়োজনে শিব চর্চা এবং কম্বল বিতরণের অনুষ্ঠানে ঘটে যাওয়া এমন ঘটনায় স্বভাবতই অস্বস্তিতে পড়েছে বিজেপি। তা বুঝতে পেরেই আক্রমণের ঝাঁঝ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement