লক্ষ্মীর ভান্ডার যাঁরা চাইছেন না, তাঁদের থেকে ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা চান কুণাল ঘোষ। —ফাইল চিত্র।
‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ এবং রাজ্য সরকারের অন্যান্য প্রকল্পে যাঁরা থাকতে চাইছেন না, তাঁদের জন্য ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করুক সরকার। এমনটাই দাবি করলেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। আরজি করে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় রাজ্যের শাসকদল প্রথম থেকেই কোণঠাসা। অভিযোগ, গোটা ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। আরজি করের অধ্যক্ষ পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরে সন্দীপ ঘোষকে অন্য হাসপাতালে নিয়োগের যে সিদ্ধান্ত রাজ্য নিয়েছিল, তা-ও বিস্তর সমালোচিত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পাল্টা আক্রমণের পথে হাঁটতে চাইছে তৃণমূল। কুণালের মন্তব্যেও সেই ইঙ্গিত রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।
শুক্রবার সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করেছেন কুণাল। তাতে লিখেছেন, ‘‘যাঁরা লক্ষ্মীর ভান্ডার এবং রাজ্য সরকারের অন্যান্য প্রকল্পে থাকতে চান না, তাঁদের জন্য ফেরত দেওয়ার একটি ফর্ম দিক রাজ্য সরকার। দুয়ারে সরকার শিবিরে ফেরত কাউন্টার থাকুক।’’ সমাজমাধ্যমে আরজি করের ঘটনা নিয়ে রাজ্য সরকারের সমালোচনা যাঁরা করছেন, তাঁদের কটাক্ষ করে কুণাল আরও লিখেছেন, ‘‘ফেসবুকে বিকৃত বিপ্লবী না সেজে ফেরত ফর্ম ফিল-আপ করুন।’’
তৃণমূল যে আরজি করের ঘটনার বিচার চায় এবং দোষীদের শাস্তি চায়, পোস্টে আরও এক বার তা মনে করিয়ে দিয়েছেন কুণাল। লিখেছেন, ‘‘আমরাও আরজি করে দোষী বা দোষীদের ফাঁসি চাই। কুরাজনীতি নয়।’’
আরজি করের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর রাজ্যে মেয়েদের সুরক্ষার বিষয়টি প্রশ্নের মুখে। ১৩ দিন ধরে সরকারি হাসপাতালে নিরাপত্তা এবং সুবিচারের দাবিতে চিকিৎসকদের আন্দোলন চলছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প এবং অনুদান ফিরিয়ে দেওয়ার কথা উঠেছে নানা মাধ্যমে। পুজো উপলক্ষে সরকার ক্লাবগুলিকে যে অনুদান প্রতি বছর দেয়, ইতিমধ্যে তা গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে কয়েকটি ক্লাব। সমাজমাধ্যমে সরকারের সমালোচনা করে অনেকে এ-ও বলেছিলেন, যে রাজ্যের সরকার নারীসুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে না, সেই রাজ্যে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’, ‘কন্যাশ্রী’-র মতো নারীকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলির কী অর্থ? এ প্রসঙ্গে প্রথম বলেছিলেন নির্যাতিতা চিকিৎসকের মা। একটি সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেছিলেন, ‘‘যাঁরা কন্যাশ্রী বা লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের সুবিধা নেন, তাঁরা তা নেওয়ার আগে তাঁদের ঘরের লক্ষ্মী সুরক্ষিত কি না, এক বার ভাববেন। রাজ্য এবং দেশবাসীর কাছে এই অনুরোধ রইল।’’
এর পরেই রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের বিরুদ্ধে প্রচারে নামে বিরোধীরা। একে ‘কুরাজনীতি’ বলে উল্লেখ করেছেন কুণাল। তাঁর মতে, যাঁরা সরকারি প্রকল্পের সুবিধা নিতে চাইছেন না, তাঁরা যাতে তা ফেরত দিতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করা দরকার।
তৃণমূলের এই অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছে বিজেপি। রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘যত দূর জানি উনি তো সরকারের কেউ নন। তবে কথাটা ঠিকই বলেছেন। কারণ, তৃণমূলের রাজনীতি মানুষকে পণ্য বানানোর রাজনীতি। ওঁর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ যে তিনি একটা সত্যি কথা সামনে এনে দিয়েছেন। সেটা হল, মহিলাদের ভোট আর আবেগ কিনতেই এই প্রকল্প সরকার চালু করেছিল। এখন স্বতঃস্ফূর্ত মতামতকে তারা অল্প দামে কিনে নিতে চায়।’’
উল্লেখ্য, আরজি করের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকে রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদ আন্দোলন শুরু হয়েছে। ঘটনার বিচার এবং দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। অভিযোগ, হাসপাতালে নিরাপত্তা দিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। উপরন্তু, এই ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। হাসপাতাল থেকেই কেউ নির্যাতিতার বাড়িতে ফোন করে প্রথমে আত্মহত্যার কথা জানিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন নির্যাতিতার বাবা-মা। বিরোধীদের অভিযোগ, সরকার কাউকে আড়াল করার চেষ্টা করছে। হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপের ইস্তফার পর পুনর্নিয়োগের সিদ্ধান্তে সেই তত্ত্ব আরও জোরালো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুরুতেই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে দোষীদের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন। ধর্ষণের মতো অপরাধ দমনের জন্য কঠোর আইন আনতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠিও লিখেছেন তিনি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, আরজি কর নিয়ে শুরুতে রক্ষণাত্মক ছিল তৃণমূল। তবে এ বার পাল্টা আক্রমণের পথে হাঁটছে তারা।