আরজি কর-কাণ্ডে ধৃতের মানসিক বিশ্লেষণ করিয়েছে সিবিআই। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আরজি করে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার বিশদ বর্ণনা সিবিআইকে দিয়েছেন অভিযুক্ত। সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে এমনটাই জানিয়েছেন এক সিবিআই কর্তা। বৃহস্পতিবার তিনি জানিয়েছেন, অভিযুক্তের কোনও অনুতাপ নেই। ‘অবলীলায়’ ঘটনার প্রতি মুহূর্তের বর্ণনা দিয়েছেন তিনি। কোথাও দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েননি।
অভিযুক্তের মোবাইল ফোন থেকে পর্নোগ্রাফির বহু ভিডিয়ো পাওয়া গিয়েছিল। সিবিআইয়ের দাবি, তিনি শুধু পর্নোগ্রাফি নয়, ‘বিকৃত’ পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত। তাঁর মানসিক বিকৃতিও রয়েছে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। তিনি যে সমস্ত ভিডিয়ো দেখতেন, তাতে নারী-পুরুষের স্বাভাবিক মিলনের চেয়ে বিকৃতি প্রাধান্য পেত। ওই ধরনের ভিডিয়ো দেখতেই তিনি অভ্যস্ত ছিলেন। কলকাতায় অভিযুক্তের বাড়িতেও গিয়েছিল সিবিআইয়ের একটি দল। তাঁর পরিবারের সদস্য এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে এসেছেন গোয়েন্দারা। অভিযুক্তের পলিগ্রাফি পরীক্ষা করতে চায় সিবিআই। ইতিমধ্যে শিয়ালদহ আদালতে সেই আবেদন জানানো হয়েছে। শুক্রবার সে বিষয়ে বিবেচনা করতে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
সিবিআই কর্তা পিটিআইকে জানিয়েছেন, অভিযুক্তের মানসিক বিশ্লেষণ সংক্রান্ত পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য সেন্ট্রাল ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের রিপোর্ট অনুযায়ী, অভিযুক্তের মানসিক বিকৃতি রয়েছে, ‘পশুর মতো প্রবৃত্তি’ রয়েছে এবং তিনি গভীর ভাবে পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত। সিবিআই কর্তার কথায়, ‘‘লোকটির কোনও অনুতাপ নেই। গোটা ঘটনার কথা প্রতি মুহূর্তের বর্ণনা-সহ তিনি আমাদের জানিয়েছেন। কোথাও হোঁচট খাননি। ওঁর কোনও অনুতাপ রয়েছে বলে মনে হয় না।’’
সিবিআই কর্তা আরও জানিয়েছেন, ঘটনার সময়ে ঘটনাস্থলে যে অভিযুক্ত উপস্থিত ছিলেন, তার একাধিক প্রমাণ মিলেছে। তবে তাঁর সঙ্গে আরও কেউ সেখানে ছিলেন কি না, সে বিষয়ে খোলসা করেননি ওই কর্তা। গণধর্ষণ হয়েছিল কি না, তা নিয়েও প্রশ্নের উত্তর দেননি। অভিযুক্তের ডিএনএ নমুনার পরীক্ষা করা হয়েছে। তার রিপোর্ট প্রসঙ্গেও উত্তর মেলেনি।
গত ৯ অগস্ট আরজি করের জরুরি বিভাগের চারতলার সেমিনার হল থেকে মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার করা হয়। তাঁকে ধর্ষণ এবং খুন করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। এর পরের দিনই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তিনি কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার হিসাবে কর্মরত ছিলেন। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্তকে সে দিন রাতে ১১টা নাগাদ হাসপাতালে ঢুকতে দেখা গিয়েছিল। ঘটনাস্থলের কাছে সিসিটিভি ফুটেজে তাঁকে দেখা যায় ভোর ৪টে নাগাদ। হেডফোনের সূত্র ধরে এবং সিসিটিভি ফুটেজের ভিত্তিতে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে আগেই জানা গিয়েছিল, ধৃত সে রাতে যৌনপল্লিতে গিয়েছিলেন। মদও খেয়েছিলেন। তাঁর মোবাইল ভর্তি ছিল পর্নোগ্রাফির ভিডিয়ো। পুলিশের কাছেও অপরাধের কথা ‘অবলীলায়’ তিনি স্বীকার করেছিলেন। এ বার সিবিআই কর্তাও একই কথা জানালেন। ধৃতের পলিগ্রাফ পরীক্ষা করে আরও কিছু বিষয়ে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হতে চাইছেন।