সৌম্যদীপ্ত বসু। নিজস্ব চিত্র।
গ্রামের ছেলে সৌম্যদীপ্ত বসু। গ্রামেই তাঁর বড় হয়ে ওঠা। সেই বড় হয়ে ওঠার মধ্যেই তিনি দেখেছেন গ্রামের নানা সমস্যা, নিজের মতো করে যার সমাধান করতে চান সৌম্যদীপ্ত। তাই আপাতত তিনি ব্যস্ত গোটা একটি গ্রামকে গ্রন্থাগারে পরিণত করার কাজে।
সৌম্যদীপ্তের বাড়ি ডায়মন্ড হারবার থেকে আরও প্রায় ১০-১২ কিলোমিটার দূরে, দেরিয়া গ্রামে। স্কুলের পড়াশোনা ডায়মন্ড হারবারের ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের প্রণব বিদ্যাপীঠে। এর পরে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে সোশ্যাল ওয়ার্ক নিয়ে পড়াশোনা। বর্তমানে বিশ্বভারতীর সোশ্যাল ওয়ার্ক বিভাগে স্নাতকোত্তর স্তরে প্রথম বর্ষের ছাত্র তিনি। করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। বাড়িতে বসে অনলাইনে চলছে পড়াশোনা। সেই সঙ্গে সমাজসেবা।
সৌম্যদীপ্ত হাত দিয়েছেন আস্ত একটি গ্রামকে গ্রন্থাগারে পরিণত করার কাজে। তাঁর গ্রাম থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরের বড়বেড়িয়া গ্রামকেই গ্রন্থাগার হিসেবে গড়ে তুলতে চান তিনি। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে সৌম্যদীপ্ত বললেন, ‘‘নির্দিষ্ট একটি বাড়িতে এই গ্রন্থাগার হবে না।
গ্রামের এক-একটি পাড়ায় তৈরি হবে এক-একটি ছোট ছোট গ্রন্থাগার। প্রতিটি পাড়ার নির্দিষ্ট একটি বাড়িতে একটি র্যাকে কম করে ৫০টি বই রাখা হবে। আগ্রহী পাঠক যাঁর যে পাড়ায় গিয়ে বই নেওয়ার সুবিধা, সেখান থেকে বই নেবেন। পড়বেন।’’ সৌম্যদীপ্ত জানালেন, এর জন্য চাই প্রচুর বই। আর তার সঙ্গে বেশ কয়েকটি র্যাক।
বইয়ের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় আবেদন জানিয়েছিলেন তিনি। প্রচুর সাড়াও পেয়েছেন। যে সমস্ত বাড়িতে বই রাখা হবে, সেই বাড়ির মালিকেরাই পড়ুয়াদের বই দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন।
প্রশ্ন ছিল, যাঁদের বাড়িতে বই রাখা হবে, তাঁরা কি বই রাখতে এবং বই লেনদেনের এই কাজটি করতে আগ্রহী? সৌম্যদীপ্ত
জানালেন, সকলের সঙ্গে কথা বলার পরে যাঁরা আগ্রহী বলে জানিয়েছেন, তাঁদের বাড়িতেই বই রাখা হচ্ছে। আপাতত তাঁর ইচ্ছে পয়লা
বৈশাখের দিন প্রথম গ্রন্থাগারটি উদ্বোধন করার।
সৌম্যদীপ্ত জানালেন, তাঁর এই কাজে প্রধান উৎসাহদাতা হলেন তাঁর বাবা শুভেন্দু বসু, মা দ্রৌপদী বসু এবং কাকা লাল্টু মিদ্যা। করোনাকালীন সময়ের ধাক্কা পেরিয়ে শুভেন্দুবাবু আপাতত কর্মহীন। তবে ছেলের উদ্যোগের সঙ্গে তিনি সব সময়ে রয়েছেন। সৌম্যদীপ্ত লেখাপড়া চালান তাঁর পাওয়া দু’টি মেধাবৃত্তির টাকায়।
এর আগে সৌম্যদীপ্ত গ্রামে তৈরি করেছেন কমিউনিটি বুক ব্যাঙ্ক। যেখান থেকে পাঠ্যপুস্তকের অভাবে পড়াশোনা প্রায় বন্ধ হতে বসা ছাত্রছাত্রীরা পাঠ্যপুস্তক পায়। নিজেদের পঠনপাঠনের শেষে সেই বই ফেরত দিয়ে যেতে হয় বুক ব্যাঙ্কে। যাতে পরবর্তী বছরের পড়ুয়ারা সেই বই পড়তে পারে। শুধু নিজের গ্রামেই নয়, শান্তিনিকেতনেও সহপাঠীদের সঙ্গে নিয়ে এমন আরও একটি কমিউনিটি বুক ব্যাঙ্ক গড়ে তুলেছেন তিনি। ওই যুবক জানালেন, করোনার সময়ে রক্তের খুব অভাব দেখা দিয়েছিল। রক্তদাতা পাওয়া যাচ্ছিল না। সেই সময়ে রক্তদানের বিভিন্ন কর্মসূচিও তাঁরা গ্রামে নিয়েছিলেন। তারই মধ্যে গত মে মাসে আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় আমপান। প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল তাঁদের গ্রাম ও আশপাশের গ্রামের। সেই সময়ে ত্রাণকাজে বাবা-ছেলে নেমে পড়েছিলেন। এখন অবশ্য লক্ষ্য, সফল ভাবে একটি গ্রামকে গ্রন্থাগারে পরিণত করা।